শনিবার, জুলাই ১৭, ২০১০

বেশি খেলে বাড়ে মেদ

ছেলেটা একেবারে হাড়জিরজিরে। বয়স কত আর হবে পাঁচ থেকে ছয় এর মধ্যেই। গায়ে এতটুকু কাপড় নেই। পাঁজরের সবগুলো হাড় একে একে গোনে ফেলা যাবে। মাথা থেকে খাপরি আলাদা হয়ে আছে। গর্তে লুকানো চোখ দুটো যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে টর্চ লাইটের মতো। নি®প্রাণ কিন্তু খানিকটা ভয় মেশানো দৃষ্টি মন্তাজ উদ্দিনের দিকেই।
ভীষণ অবাক ছেলেটা, তাকে এভাবে ডাকছে কেনো মন্তাজ উদ্দিন! লোকটার সাথে কখনও কোন বেয়াদবি করেছে বলেতো মনে পরছেনা। পাটকাঠির মতো দেহ দোলাতে দোলাতে নি®প্রাণ এগিয়ে আসছে ছেলেটা। চেহারায় শঙ্কা। আর বিব্রততো বটেই। চড়া গলায কাছে ডেকে ছেলেটাকে ভয় পাইয়ে দেয়ায় বিব্রত মন্তাজউদ্দিনও। তাই হয়তো অভয় দেয়ার জন্য বেঞ্চি থেকে পা নামিয়ে কিছুটা নরম স্বরে বললো
- ডরের কিছু নাই। কাছে আয়
তারপর দুই কাপ চা আর একটি বিস্কিট দিতে বললো তোতা মিয়াকে। কিন্তু আশ্বস্ত হতে পারলনা আপদমস্তক উলঙ্গ ছেলেটা। কোন ধমক-টমক শুনবে এমন শঙ্কায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষন পরই ঘটলো অস্বাভাবিক ঘটনাটাা। তোতামিয়ার বানানো দুই কাপ চায়ের একটি তার দিকে আসতে দেখে ছিটকে পরলো খানিকটা দূরে। যেন শাস্তি দেয়ার জন্যই গরম পানির লিকার ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে তাকে।
- আরে বেক্কল, চা ধর। তর লাইগ্যাই বানাইছি। বলল তোতা মিয়া।
খানিকটা ইতস্তত করে দুই হাত সামনে বাড়িয়ে দিয়ে টেনে নিলো চা। দ্বিধাহীনভাবে বসে পরলো মাটিতে, ঠিক মন্তাজ উদ্দিনের পায়ের কাছে। তারপর ধুয়া উঠা চা ঠান্ডা করে খাওয়ার জন্য একের পর এক ফুঁ দিতে লাগলো কাপে।
- আহারে, না খাইতে না খাইতে পোলাডার কি অবস্থা! খুব কষ্ট লাগে মন্তাজ বাইছা (ভাই সাহেব)। সমবেদনা জানালো তোতা মিয়া।
- কষ্ট লাগলেই আর কি করতারবা তুমি, বড়জোর মাঝে মইদ্যে ডাইকা আইন্না দুইডা চা বিস্কুট খাওয়াইতে পারবা। এতে কি আর ুধার জ্বালা শেষ অইব?
- টেকা-পইসাওয়ালা মাইনষের পোলাপাইনগুলারে মা বাপে সারাদিন খাওয়ার উপরেই রাহে। খাইতে চায়না, এর পরেও মুহের মইদ্দে ঠেইল্যা দেয়।
- বালা কতা মনে করছ। সারা বিশ্বে অহন মানুষ গবেষণা করতাছে পোলাপাইনের মোডা (মোটা) অওয়ন কেমনে ফিরান যায়। কয়েকদিন আগে পত্রিকাত (পত্রিকায়) দেখলাম আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বউ (মিশেল ওবামা) পুলাপাইনের মোডা অওনের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করছে।
- এমুন বেইক্কইল্লামি (বোকামি) কতা ত-অ আর হুনছিনা। হেরা যেইডা বেশতি খায়, এইডা আমরার মতো গরীব দেশের পুলাপাইনরারে দিয়া দিলেই ত-অ সমস্যার সমাধান অইয়া যায়।
- যত সহজে চিন্তা করতাছ, বিষয়ডা তত সহজ না। বলতে বলতে অর্ধেক শেষ করা কাপটা এগিয়ে দিলো তোতা মিয়ার দিকে।
- আরেক চামুচ (চামিচ) চিনি দেও তোতা মিয়া। চায়ে চিনি কম দিয়া আমারে কতায় বুলাইয়া রাকতাছ। এত কিপ্টামি কর কেরে? তোমার ঝি ময়নাই বালা, চিনি কম দেয়না।
ময়নাকে আরেক চামচ চিনি দেয়ার আদেশ দিলো তোতা মিয়া। তারপর বলল
- কিপ্টামি কি আর সাধে করি বাইছা। চিনির দাম গেছে গা বাইরা। কিন্তু তোমরার কতা চিন্তা কইরা চায়ের দাম বাড়াইতে পারতাছিনা।
- না তোমারে দুষ দেইনা। দুষ আমরার কপালের। ভোট দিয়া নেতা বানাই, আর হেরা ক্ষমতায় গিয়া আমরার পেটের কতা বুইল্লা যায়। নাইলে (না হয়) আলু, পটল, চাউল, ডাউল, নুন, তেলের দাম বাড়ার পরেও ডাহায় (ঢাকায়) বইয়া মন্ত্রিরা এইসব লইয়া রস করত-অ পারে? এক মন্ত্রী আমরারে চিনি কম খাওনের উপদেশ দিছে। চিনি কম খাইলে নাকি শরীর বালা থাহে। বহুত আগে হীরক রাজার সভা কবির গলয় হুনছিলাম এমুন কতা।
আশ্চর্য হলো ময়না। হীরক রাজা আবার কে? তার দেশ-ইবা কোথায়! কৌতুহল দমন করতে না পেরে জিজ্ঞেস করল
- পুতু হীরক রাজা কেডা?
- সত্যজিৎ রায় নামের একজন পরিচালক ছিনেমা বানাইছিলো ‘হীরক রাজার দেশে’ নামে। এই ছিনেমার মইদ্যে হীরক রাজ্যের মানুষ না খাইয়া থাকতো। আর রাজা তার সভা কবিরে দিয়া না খাইয়া থাহুনের উপকারিতা বুঝাইতো ‘ অনাহারে নাই খেদ/বেশি খেলে বাড়ে মেদ’
১১ জুলাই ২০১০

কোন মন্তব্য নেই: