শনিবার, জুলাই ১৭, ২০১০

আজ মন্তাজউদ্দিন বড়ই উৎফুল্ল

আজ মন্তাজউদ্দিন বড়ই উৎফুল্ল। কিন্তু কী কারণে এ সম্পর্কে কোন ধারণা করতে পারছে না ময়না। গোঁফের আড়ালে মুচকি হাসি নিয়েই দোকানে প্রবেশ করল মন্তাজ পুতু (চাচা)। তারপর বেঞ্চিটায় বসে এক কাপ চা দিতে বললো ময়নাকে। একজন লোক আপন মনে হেসে যাচ্ছে- ব্যাপারটা কিছুটা ব্যাখাপ্পা মনে হল তার কাছে। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলো, থাকনা ঠোঁটে হাসি। তাতে তো ময়নার কোন সমস্যা হচ্ছে না। কাউকে হাসতে দেখলে ভালোই লাগে তার। মন্তাজ পুতুর উৎফুল্ল মনের হাসিটা মুচকি হলেও এতে কোনো কুটিলতা কিংবা কৌতুক নেই। এটা-সেটা নিয়ে কৌতুক করতে অভ্যস্ত এ লোকটার হাসির সাথে ময়নার পরিচয় নেই, এমনটি নয়। তবুও আজ বেশ অপরিচিতই মনে হচ্ছে তাকে। কারণ এমন নির্মল ও তৃপ্তির হাসি এর আগে কে-ও হাসতে পেরেছে বলে মনে হয়না। নি:শব্দ উৎফুল্লতার হিল্লোল স্পর্শ করল ময়নাকেও, নিজের অজান্তেই অ™ভ’ত এক ভালোলাগার ঢেউ ভাসিয়ে নিয়ে গেল তাকে। অর্থাৎ উৎফুল্ল হয়ে উঠল ময়নাও।
- একলা একলা পিটপিটায়া হাসতাছ কেরে পুতু?
- তুই হাসতাছস কেরে?
- তুমার হাসি দেইখ্যা।
- আমি হাসতাছি বাংলাদেশের মাইনষের তৃপ্তির হাসি দেইখ্যা।
কথাটা ঠিক বুঝতে পারলনা ময়না। বাংলাদেশের মানুষ আবার কখন হাসল! মন্তাজ পুতুই তো সেদিন বলেছিল এই দেশের মানুষকে ঘিরে রেখেছে কেবল সমস্যা আর সমস্যা। এত সমস্যার মাঝে থেকে কি কেউ হাসতে পারে! ব্যাপারটা জানার আগ্রহ হলো তার
- কী এমুন ঘটল চাচা?
- হুনছ নাই, আমরার দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজে দায়িত্ব নিয়া স্বজনহারা তিন কন্যার বিয়া দিয়া দিছে।
-না হুনার কী আছে? এইডাতো সবাই হুনছে।
- এই কারণে সবার ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি।
এমনভাবে তো ভেবে দেখেনি সে। সত্যিইতো কয়েকদিন যাবত দোকানে চা খেতে আসা লোকজনের মুখে মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রসঙ্গটি। আহা! বিয়ে বাড়িতে আগুন লেগে কত্ত মানুষই-না মারা গেল। প্রাণ হারালো পাত্রীদের বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনসহ আরও কত্ত লোক। খবরটি শুনে খুব মায়া হয়েছিলো ময়নার। ভেবেছিলো আপনজন হারানোর সাথে সাথে বুঝি ভবিষ্যতটাও হারালো ওরা। কিন্তু যখন শুনল স্বজনহারা এ মেয়েদের মায়ের ভ’মিকায় এসে দাঁড়িয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী, তখন অন্যদের মতো ভালো লাগার অনুভূতি হয়েছিলো তারও।
- বুঝলি মায়া (মা), প্রধানমন্ত্রী এই মহৎ কামডা কইরা একটা নজির দেহাইল। অহন তারে অনুসরণ কইরা আমরা যুদি একজনের দু:খরে দশজনের মইদ্যে ভাগ কইরা লই, তাইলে কি এই দেশের কোনো মানুষ নিজেরে অসহায় মনে করব?
বলতে বলতে তৃপ্তির হাসি নিয়েই চায়ে শেষ চুমুক বসাল মন্তাজ উদ্দিন। তারপর খালি কাপটি বেঞ্চিতে রেখে উঠে দাঁড়ালো এবং জবাবের অপেক্ষা না করেই হাটা ধরল বাড়ির পথে। তার গমনপথের দিকে তাকিয়ে রইলো ময়না। আর অপেক্ষায় রইলো অন্য আরো দিনের, যখন মন্তাজ পুতুর হাসিটা হবে ঠিক আজকের মতো নির্মল ও তৃপ্তির।

কোন মন্তব্য নেই: