বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ২০, ২০১১

সারা আঁখি পাতা


সেই মেয়েটি দস্যি মেয়ে
পাতায়, ফলে, ফুলে
দোদোল দোদোল দোলে

পাতাদ্বীপ ঝাড়ু দেয়
দীঘল দীঘল চুলে

সেই মেয়েটি গেছো মেয়ে
গাছে গাছে ঘোরে,
কিম্বা হাওয়ায় ওড়ে

সারা আঁখি পাতা
তার পাতাদ্বীপ জুড়ে

শুক্রবার, অক্টোবর ০৭, ২০১১

জন্ম ধোলাই


শোনা যাচ্ছে আগামী ৮ অক্টোবর ছড়াকার জগলুল হায়দারের জন্মদিন। ব্যাপারটার সত্যতা নিরূপন করার জন্য আরেক ছড়াকার শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ গিয়েছিলেন তার কাছে। ছড়ায় ছড়ায় তাদের কথোপকথন এখানে তুলে ধরা হলো-



প্রশ্ন-১
জগলুল হায়দার,
যুৎসই কায়দার
ছন্দ ও মাত্রা
মিল দিয়ে লিখে যান
ছড়া আর কবিতা।

আপনার ছন্দ
আর সব মন্দ
লেখনীর যাত্রা
কিভাবে শুরু হয়
বলে দিন সবি তা।

উত্তর :
থ্যাঙ্কস ভাই আপনাকে
লেগে গেছে তাপ নাকে
সাক্ষাতে আইসা;
ঠিক আছে এই আমি
সারা দিন নিশি-যামি
ছড়া লিখি ঠাইসা।

তবে লাগে ধন্দ
ছড়া লেখা মন্দ
এই কথা শুইনা
দেখান তো মন্দ কী
আঙ্গুলে গুইনা!

প্রশ্ন : ২
ছড়াকাররা মন্দ না তো
মন্দ বলি কাকে
খোঁচা মারে আলাভোলা
শান্ত মানুষটাকে।

ছড়া হলো শাণদার
ভীতিকর অস্ত্র
আলাভোলা বানদার
খুলে নেয় বস্ত্র।

ছড়াকারের ছড়ায় থাকে
নাশকতার বন্দনা
তবুও বলেন, আপনি মশাই
ছড়া লেখা মন্দ না?

উত্তর :
আলাভোলা পরান খোলা
মানুষগুলার দোষ নাই
ছড়াকারও কাড়েন না তো
তাদের মুখের রোশনাই।
কিন্তু যারা মুখোশ পরা
মুখে যাদের পলেস্তরা
তাদের কথা অন্য
ছড়াকারের অস্ত্র ঘোরে
কেবল তাদের জন্য।

বিপ্লব আর নাশকতার
মাঝেও ফারাক অল্প না
ছড়া নিয়ে তাই অহেতুক
আজগুবি এই গল্প না!

প্রশ্ন-৩
আপনি তো এক প্রকৌশলী
কুশল করেন পেশায়
তবুও দেখি সুযোগ হলেই
আড্ডাবাজির নেশায়;
বুঁদ হয়ে যান কিসের টানে
বলুন দেখি কানে কানে।

উত্তর :
পেশায় আমি যা-ই হই না
ছড়া আমার নেশায়
আমায় যেন সর্বদা কে
ছড়ার সাথে মেশায়!

মিশতে মিশতে মিশ্যা গেলাম
এখন জানে প্রাণে
বুঁদ হই তাই ছড়াতে ভাই
বলছি কানে কানে।

প্রশ্ন-৪
লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ
আপনি তো নন নারী
গোপন বলার সাহস আছে
উদোম করে হাঁড়ি?

সবার আগে বলুন দেখি
টান করে বুক-সিনা
অক্টোবরের আট তারিখে
জন্মেছিলেন কি না?

এখন বয়স কত চলে
বল্লে আরো ভালো
প্রমাণসহ বলতে হবে
জন্ম নেয়ার সালও।

উত্তর :
সাহস বেচা পুরুষ আমি
সাহস বেচেই খাই
আমার ছড়ায় মিনমিনে ভাব
তাই তো মোটেও নাই।
সাহস নিয়ে বলছি শুনুন
অক্টোবরের আটে
ওঁয়াও ওঁয়াও এসেছিলাম
এই পৃথিবীর হাটে।

আমগো দেশে বয়স মানে
এসএসসি যা বলে
সেই বয়সের মালাই নাকি
প্রায় সবারই গলে।

পয়ষট্টিতে জন্মে বয়স
দুই কুড়ি ছয় পূর্ণ
অনেক আগেই করেছি তাই
এই ট্র্যাডিশন চূর্ণ।
মারফতিতে আবার বলি
না যদি ভাই কমান;
বয়স আমার সত্যি তবে
এ সভ্যতার সমান!

প্রশ্ন -৫
সাহস আছে জানি সেটা
ছড়ার ভাষা পড়ে
জন্মেছিলেন বলুন দেখি
কোন সে আতুড় ঘরে?

উত্তর :
এই শহরের মালিবাগে
মায়ের পেটে এসে
পাক ভারতের যুদ্ধ দিনে
গিয়েছিলাম ফেঁসে।
মাকে বাবা পাঠিয়ে দিলে
জামালপুরের গাঁয়ে
দেশের বাড়ি জন্মেছিলাম
ফুল-প্রকৃতির ছায়ে।

প্রশ্ন ৬ :
আপনি নাকি ফান ম্যাগাজিন
একাই নিলেন দখল
দিলেন নাকি পাগল করে
যত্তো পাঠক সকল?

উত্তর :
একটা মোটে পাগলা গারদ
পাবনা যদি ভরে
এই সওয়ালের জবাব দিতে
তাই কাঁপি ভাই ডরে!
পাগল করার ইচ্ছে মোটে
নাইকো আমার ভায়া
ছড়া লিখে চাইছি সবার
আদর স্নেহ মায়া।

দখল টখল প্রসঙ্গ নয়
প্রসঙ্গটা এই;
চাইছি কেবল সব জাগাতে
ছড়াই ছড়াতেই।

প্রশ্ন-৭
ছড়া লিখেন ভালো কথা
আর কি করেন শুনি
কখনও কি ইচ্ছে করে
করতে খুনোখুনি!

উত্তর :
মশায় যখন ভন ভন ভন
হামলে পড়ে বাড়িতে
তখন কিন্তু চাপড় দিয়ে
চাই সে মশা মারিতে।

পিঁপড়া যদি কামড়ে ধরে
ইভেন ঋষি মুনি
তারাও তখন যায়না হয়ে
হঠাৎ করেই খুনি?

খুনের রেকর্ড খারাপ না খুব
মারছি মশা-মাছি
এই শহরে আমরা যে ভাই
এসব নিয়েই আছি।

প্রশ্ন-৮
কখনও কি হাসতে গিয়ে
কান্না করেছেন
আবার সোজা চলতে গিয়ে
উল্টে পড়েছেন?

উত্তর :
হাসতে গিয়ে হাসলে বেশি
আসতে পারে কান্না
এই কথা তো বলে গ্যাছেন
কবেই রাজেশ খান্না!
হাসি তবে হিসাব করে
হিসাব করেই কাঁদি
দুটোই কিন্তু এই জীবনে
স্বর্ণ এবং চাঁদি!

সোজার মধ্যে উল্টো হওয়া
এতো ইজি নয়তো
তাই জীবনে উল্টে যেতে
মানুষ বিজি নয়তো।
কিন্তু আয়না দেখলে পরে
বুঝতে পারি ভুলটা
সোজা থেকেও তখন কেমন
লাগতে থাকে উল্টা।
ডান হাতটা বাম হয়ে যায়
বাম হাতটা ডান
বদলে ফেলে নিজ পজিশন
তেমনি চোখ ও কান!

প্রশ্ন-৯
আচ্ছা বাবু এবার বলুন
ছড়া লেখার মন্ত্র কি
লিখতে হলে লাগবে কোনো
খটর-মটর যন্ত্র কি?

উত্তর :
ডাক নামটা বাবু আমার
সেটাও গেছেন জেনে
প্রশ্ন দিলেন অবশেষে
সেই নামটাও এনে!
জানেন যখন বলছি শুনুন
এসব কথা বাজে,
ছড়া লেখায় যন্ত্র-টন্ত্র
লাগবে না তো কাজে।

লাগবে প্রথম প্রতিভা আর
চেষ্টা তারই পরে
লিখবে তারাই বুকে ছড়ার
তেষ্টা যারই-ধরে।

৫ অক্টোবর’২০১১ নয়া দিগন্ত’র সাপ্তাহিক ফান ম্যাগাজিন থেরাপিতে প্রকাশিত

বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১১

নিচে জমিন

শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১১

সুখের বাসর



পাতাদের পাতারাণি শুকনো পাতায়
পাতাদ্বীপ পায়েলের ছন্দে মাতায়

রুনুঝুনু রুমুঝুম নাচন ওঠায়
গোটা দ্বীপ জুড়ে এক আসর জোটায়

এলোমেলো সুকোমল সবুজ আসর
আহা-হা পাতাদের সুখের বাসর

সুখগুলো জ্বলে ওঠে তারায় তারায়
উচাটন মন যেনো কোথায় হারায়


বুধবার, আগস্ট ২৪, ২০১১

মিথ্যা ধরার মেশিন


তোতামিয়াকে চমকে দিয়ে হঠাৎ উদয় হলো নিরুদ্দেশ মন্তাজউদ্দিন কোনদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই হেটে যাচ্ছিলো দোকানের সামনে দিয়ে প্রায় একবছর পর অ™ভ’ত এ লোকটার দেখা মিলল ডেকে দু’চার কথা জিজ্ঞেস না করলেই নয়-
-এতদিন আছিলা কই?
-আমার কি আর ঠিক-ঠিকানা আছে? ওপরে আসমান, নিচে জমিন, মাঝখানে আমি সেইখানেই থাকি, যেইখানে রাখেন অন্তর্যামী
- আ রে ধূর, মারফতি কথা বাদ দেও বও দেহি, দুই-চাইরডা আলাপ করি
অনিচ্ছা সত্বেও বেঞ্চের এক কোনায় বসলো মন্তাজ উদ্দিন বসতে বসতেই চোখ পড়লো উইল্লা চোরার দিকে, অপর কোনায় বসে আছে মাথায় টুপি, পরনে পাঞ্জাবি, শুকনো মুখ কিন্তু চেহারায় পবিত্রতার ছাপ বিমুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে তার দিকে নিজের চোখকে একদম বিশ্বাস করাতে পারছে না মন্তাজউদ্দিন
- কিমুন আছুইন বাইছা (ভাইসাহেব)?
- বালা তোমার এই পরিবর্তন কেমনে?
কপালের চোখ মাথায় তোলে জিজ্ঞেস করলো মন্তাজ উদ্দিন
উইল্লা চোরা জবাব দেয়ার আগেই কথা কেড়ে নিলো তোতা মিয়া
- উইল্লা চোরা তো চুরি-চামারি করে না একবছর ধরে গত বছর রমজান মাসে তওবা কাটছিল
লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিলো উইল্লা চোরা গোঁফের নিচে হাসি লুকিয়ে রাখলো তোতা মিয়া আর একটু নড়েচড়ে বসে লজ্জাবনত উইল্লা চোরার চোখে সরাসরি চোখ রাখলো মন্তাজ উদ্দিন-
- তুমি হাছা কইতাছ নাকি, চুরি-চামারি একেবারে ছাইরা দিছ?
- এইসব লইয়া কেউ মিছা কয় নাকি? বলেই দাঁত কেলিয়ে সরল হাসি দিলো সে তারপর অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল বাকি দুইজন তবে দু’জনের হাসির আওয়াজ প্রায় সমান হলেও অর্থ একেবারে ভিন্ন তোতা মিয়া হেসেছে উইল্লা চোরার দাঁত কেলানো হাসি দেখে আর মন্তাজ উদ্দিন হেসেছে যে কারণে তা তাৎক্ষনিকভাবে অন্যদের বোঝার কথা নয় দু’জনের হাসির মাঝে আরেকটি পার্থক্য হলো- দু’জন হাসি শুরু করেছে একই সাথে কিন্তু তোতা মিয়ার হাসির রেশ শেষ হয়েছে অনেকে আগেই আর মন্তাজ উদ্দিন এখনো হেসে চলেছে হেসে চলেছে হেসেই চলেছে হাসতে হাসতে উইল্লা চোরাকে জিজ্ঞেস করলো-
এইসব লইয়া কেউ মিছা কয় না, না? তারপর আবারো হাসতে লাগল
মন্তাজ উদ্দিনের হাসি দেখে রীতিমতো ঘাবড়ে গেলো অন্যরা হাসতে হাসতে একবার কুঁজো হয়ে যায়, আবার পেছনে কাত হয়ে উল্টে যায় তবুও হাসি বন্ধ হওয়ার নাম নেই
- রোজা রাইখা এতো হাসো কেমনে?
তোতা মিয়ার প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে দ্বিরুক্তি করল মন্তাজ উদ্দিন- এইসব লইয়া কেউ মিছা কয় না, না?
তারপর একমুহুর্ত থামল এবং বলল, চুরি-চামারি কইরা কিছু হর্তা-কর্তারা দেশের মাটিসুদ্ধ গায়েব করতাছে আর মুখে কইতাছে দেশ প্রেমের কথা গোরস্থান, মসজিদ, ইস্কুলের টাকা মাইরা প্রকাশ্যে মিছা কইতাছে
- আ রে হাসি থামাইয়া কথা কও মন্তাজউদ্দিনের বেগতিক অবস্থা দেখে অনুরোধ করলো সন্ত্রস্ত উইল্লা চোরা
- কেরে, হাসি থামাইয়া কথা কইতাম কেরে? পাল্টা প্রশ্ন করলো মন্তাজ উদ্দিন কিন্তু পরক্ষণেই একরকম বেখাপ্পাভাবে দীর্ঘক্ষন চলতে থাকা হাসিটা থামিয়ে দিলো সে তারপর বললো, আমিতো তোর হাসির কথা হুইন্না হাসতাছি কিন্তু কেউ কেউ যে মানুষের বিপদে হাসে, মানুষরে বিপদে ফালাইয়া হাসে?
- মানুষের বিপদে হাসে? এমন মানুষও আছে নাকি?
- আছে রে আছে কেউ কেউ আছে সুখে-দুখে হাসে কারণে-অকারণে হাসে পথে-ঘাটে হাসে সড়ক দূর্ঘটনায় মানুষ মারা যায়, খবর শুনে হাসে রাস্তা খাল হয়ে বাস বন্ধ হয়ে যায়, তখনও হাসে ঈদে ঘরমুখি মানুষের ভোগান্তি দেখে হাসে খালি হাসে আর হাসে হাসে আর মিছা কথা কয়
- এত হাসে!
-হ্যা এত হাসে হাসে আর আকাশ পথ-পাতাল পথের স্বপ্ন দেখায় আর মানুষ স্বপ্ন দেখতে দেখতে তিনঘন্টার পথ ছয় ঘন্টা লাগিয়ে বাড়ি ফেরে অথচ গত তিন বছরে সড়ক উন্নয়ন ও রক্ষনাবেক্ষনে কুড়ি হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হইছে
চমকে ওঠে তোতা মিয়া কিছু একটা বলতে যায় কিন্তু ইশারা দিয়ে থামিয়ে দেয় মন্তাজ উদ্দিন
-কিছুদিন আগে ভারতের এক টেলিভিশন চ্যানেলে আজব একখানা মেশিন দেখছিলাম মিথ্যা ধরার মেশিন’
- মিথ্যা ধরার মেশিন! এইটা আবার কী?
- আছে, মিথ্যা ধরার মেশিন আছে এইটার আসল নাম হইলো ‘পলিগ্রাফ মেশিন’ এইটা মানুষের বুকে লাগাইতে অয় তারপর হৃদয়ের ধুকপুকানি গুইনা মেশিনটা কইয়া দিতে পারে কার কথা হাছা, আর কার কথা মিছা কার হাসি কালা, আর কার হাসি বালা (ভালো)
ওমা, ওমা! এমন মেশিন আছে নাকি! একেবারে রে-রে করে দোকানের সামনে চলে এলো ময়না এতক্ষণ কোথায় ছিলো কে জানে? হয়তো আড়ালে থেকে কথা শুনেছে এমন মেশিন ুথাকলে তো এবারের ঈদে জামা কেনার পরিবর্তে ওর একটা মিথ্যা ধরার মেশিনই দরকার কারণ এ দেশের হর্তা-কর্তাদের হাসি সাদা না কালো তার একটা পরীক্ষাতো নিতেই হয় তবে মিধ্যা ধরার মেশিন যে একেবারে সত্যি সত্যিই আছে তা কোনভাবে বিশ্বাস করলো না ময়না মন্তাজ উদ্দিন বোঝানোর চেস্টা করলো, তারপরও না

সোমবার, আগস্ট ১৫, ২০১১

আম্রকাননে






বৃহস্পতিবার, জুন ৩০, ২০১১

রাজশাহী চিড়িয়াখানায়







ছবিগুলো রাজশাহী চিড়িয়াখানায় তোলা। বলে রাখা প্রয়োজন- আমরা (আমি, সোহেল অটল ও রাসেল) কিন্তু চিড়িয়া নই।

`নানা হে..'


শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ, রাজশাহী থেকে ফিরে
নাতি মঞ্চে গিয়ে কয়েকবার ‘নানা’ বলে হাঁক ছাড়ে। গায়ে গেঞ্জি, কোমরে গামছা।
নেপথ্য থেকে একজন চেঁচিয়ে ওঠে, তুই এখেনে চিল্লেচিল্লি করছিস কেনে?
নাতি- তোমরা হাঁর নানাকে কেহু দেখ্যাছো নি আমি সেই সক্কাল থেইকা বোইলে রাখলাম এখেনে এক অনুষ্ঠান হবে। কিন্তু হাঁর নানার কোন দেখা নাই।
হঠাত মঞ্চে উদয় হন নানা। তারপর আচমকা লাঠি মারেন নাতির পেছনে এবং বলেন, শালাকে দিব পাইনঠ্যার বাড়ি।
নানার মুখে পাকা দাঁড়ি, মাথায় মাথাল, পরনে লুঙ্গি, হাতে লাঠি। হাতের লাঠিটি ঘুরাতে ঘুরাতে নাতিকে শুধায়, আগে বোল কিসের অনুষ্ঠানের লেগি আমাকে বোলেছিস?
- আজকে এখেনে আম, সিল্ক প্রদর্শনী ও লোকউতসব চলছে যে।
এভাবে নানা-নাতির রসালো আলাপচারিতা চলতে থাকে কিছুন। এর পর গানের ধুয়া তোলে দু’জন-
‘হে নানা, শান্তির শহর এই রাজশাহী
তার গুণগান হামরা গাহি
এই রাজশাহীর নাই যে কোথাও তুলনা
হে নানা, শিার শহর এই রাজশাহী
মানুষ গরার কারখানা।’
ধুয়ার পর সংলাপ। সংলাপের পর ধুয়া। এভাবেই গীত হতে থাকে গম্ভীরা।
গম্ভীরা পরিবেশনের এ চিত্রটি আম, সিল্ক প্রদর্শনী ও লোক উৎসব মঞ্চের। রাজশাহী নগরভবন প্রাঙ্গনে তিন দিনব্যাপী এ উতসব শুরু হয় গত ২২ জুন এবং শেষ হয় ২৪ জুন।
বরেন্দ্রনগরী রাজশাহীর বিখ্যাত আম, সিল্ক এবং গম্ভীরাকে উপজীব্য করে ‘আমরা রাজশাহীবাসী’ নামে একটি আঞ্চলিক সংগঠন বাৎসরিকভাবে এর আয়োজন করে। বরাবরের মতো এবারের উৎসবেরও পৃষ্ঠপোষকতা করেছে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংক। এবার নিয়ে পরপর চারবার এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। গত বুধবার নগরভবন প্রাঙ্গনে তিনদিনব্যাপি অনুষ্ঠানটি শুরু হয় বিকেল পাঁচটায়। শেষ হয় রাত দশটায়। বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও ফিতা কাটার মধ্য দিয়ে এটি উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ সরিফুল ইসলাম বাবু। সভাপতিত্ব করেন আমরা রাজশাহীবাসীর সভাপতি মো. আবু বাক্কার আলী। উদ্বোধনের পর মেলামঞ্চে একে একে বক্তৃতা করেন রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের চেয়ারম্যান ড.আবুল আহসান চৌধুরী, বাংলাদেশ সিল্ক বোর্ড রাজশাহীর চেয়ারম্যান সুনীল চন্দ্র পাল এবং বাংলালিংকের সহকারি ম্যানেজার শিবলী সাদিকসহ আরো অনেকেই ।
নগরভবন আঙিনায় বসেছিল আম ও সিল্কের পসরা। উদ্বোধনের সময় দর্শনার্থীর সংখ্যা কম থাকলেও সন্ধ্যার পর সরগরম হয়ে উঠতে থাকে মেলাপ্রাঙ্গন।
রাজশাহীর কৃষকদের অনেকেই আমের ওপর নির্ভরশী। বাংলাদেশেতো নয়ই বরং পৃথিবীর কোথাও এমন সুস্বাদু ও সুগঠিত আম নেই। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় ও তৃতিয় দিনও সকাল ১০টা থেকে রাত দশটা পর্যন্তভিন্ন ভিন্ন জাতের রকমারি স্বাদের আম প্রদর্শিত হয়।
রাজশাহীকে বলা হয় রেশমনগরী। এখানকার সিল্কের গুটি থেকে তৈরি হয় অভিজাত ও মসৃন কাপড়। রাজশাহী সিল্কের শাড়ি ও অন্যান্য পণ্যের চাহিদা দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বাইরেও ছড়িয়ে পরেছে। মেলার স্টলগুলোতে সিল্কের তৈরি পোশাক প্রদর্শিত হয়েছে।
রাজশাহী অঞ্চলের আরেক ঐতিহ্য গম্ভীরা। পশ্চিমবঙ্গের মালদহ এলাকায় এ গানের সূচনা হয়। পরবর্তীতে তা রাজশাহী অঞ্চলের গান হয়ে ওঠে। এ ধারার গানে প্রধানত দু’টি কেন্দ্রীয় চরিত্র মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এদের একজন হচ্ছেন নানা, যিনি পেশায় কৃষক এবং অন্যজন নাতি, যে একজন রাখাল। গম্ভীরায় সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি উঠে আসলেও সময়ের সাথে সাথে এর স্বরুপ পাল্টাচ্ছে। এবারের উতসবে পরিবেশিত গম্ভীরার মূল বিষয়বস্তু ছিল রাজশাহীর শিা-সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরনে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। গম্ভীরায় নানার ভূমিকায় ছিলেন খুরশিদ আল মাহমুদ ও নাতির ভূমিকায় মো: মনি আক্তারুল ইসলাম সনি। দু’জনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন যায়গায় গম্ভীরা পরিবেশন করছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে রাজশাহী থিয়েটারের মাধ্যমে গম্ভীরার সাথে আস্টেপৃস্টে জড়িয়ে যান ‘ খুরশিদ।
মো: মনি আক্তারুল ইসলাম সনি নাতির ভূমিকায় মঞ্চে আছেন ছয় বছর হলো। নিজের মনের তাগিদেই আনন্দের সাথে কাজটি করে যাচ্ছেন তিনি ‘লোকজ সংস্কৃতিকে ধরে রাখার জন্য আমরা গম্ভীরা শুরু করি। আমাদের পরিবারের কেউ সংস্কৃতিক অঙ্গনের সাথে জড়িত না থাকলেও নিজের চেস্টায় আমি উঠে এসেছি।’ খুরশিদের মতো তিনিও রাজশাহী থিয়েটার থেকেই উঠে এসেছেন। তিনি মনে করেন ম্যাসেজ পৌঁছানোর একটি ভালো মাধ্যম হলো গম্ভীরা ‘ নানা নাতির হাস্যরসের মাধ্যমে সহযেই মানুষের কাছে মেসেজ পৌঁছে দিতে পারি আমরা। তাই গম্ভীরা সমাজসচেতনতা তৈরি করতে সহায়ক।’
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করার পর অন্য কোন পেশায় না গিয়ে গম্ভীরাকেই তারা পেশা হিসাবে নিয়েছেন। তবে তিনি বলেন ‘এখন পর্যন্ত গম্ভীরা তেমনভাবে পেশাদারিত্বের পর্যায়ে পৌঁছায়নি। কিন্তু এর প্রসার যেভাবে হচ্ছে, সেই ধারাবাহিকতা অব্যহত থাকলে গম্ভীরাকে পরিপূর্ণ পেশা হিসাবে গ্রহণ করার জন্য খুব বেশি দিন অপো করতে হবে না আমাদের।’

সোমবার, জুন ২৭, ২০১১

ছবিটা ডাইনোসর যুগের


ছবিটা ডাইনোসর যুগের। চলে এসেছে টাইম মেশিনে চড়ে। সেই যুগের কোন একদিনে (২৩ জুন) আমরা তিনজন ( বা থেকে আমি, বিশিস্ট আম্রখাদক সোহেল অটল ও জোবায়ের) গিয়েছিলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে।
সাথে অবশ্য আরো অনেকে ছিলেন কিন্তু টাইম মেশিনের চোখে তারা আপাতত ধরা পড়েননি।

শনিবার, মে ২৮, ২০১১

ইশকুল পালিয়ে


‘আজকালকার কিশোরদের ওপর পড়া লেখার যে চাপ, তা অনেকটা রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করার মতো’
ওমা, এমন কথা আবার কে বললো?
নিশ্চয়ই মহা ফাঁকিবাজ ধরনের কেউ হবে। পড়ালেখার চাপ আর রিমান্ড কি এক জিনিস হলো?
পড়ালেখাতো তুমিও করছো। তুমি কি রিমান্ডে আছো বলে মনে হয়?
কই নাতো দিব্যি স্বাধীন-ই আছো। সকালে আম্মুর ডাকে বিছানা ছেড়ে উঠছো। তারপর তড়িঘড়ি করে প্রাত কাজ সারছো, নাস্তা করছো এবং আম্মু কিংবা আব্বুর সাথে ইশকুলে যাচ্ছো। কাস শেষে আবার ঠিক ঠিকই বাসায় ফিরে আসছো। তারপর কয়েকজন টিচার আসছেন তোমাকে পড়াতে। ব্যস, এভাবেইতো দিন কেটে যাচ্ছে। একে কি রিমান্ড বলা যায়?
কে সেই বোকা লোকটা, যে কিনা এমন কথা বললো?
উহু, সেই লোকটা কিন্তু মোটেও বোকা নন। তাঁর নাম রকিব হাসান।
তিন গোয়েন্দা সিরিজের লেখক?
হ্যা, রকিব হাসান বলতে তো তাকেই বোঝায়।
এই সেরেছে রে। তাহলেতো বিশ্বাস না করে উপায় নেই। তিনিতো আর মিথ্যে বলার লোক নন। তাছাড়া কিশোর পাশা, মুসা আমান আর রবিন মিলফোর্ডের মতো বিচ্ছুরা যার কলমের ইশারায় উঠবস করে, তাকে আর যাই হোক বোকা বলা যাবে না।
রকিব হাসানের কাছে তোমাদের এই অতিপড়াপড়ির রুটিনটা রীতিমত রিমান্ডের মতোই মনে হয়। এই যে আম্মুর ডাকে ঘুম থেকে উঠছো, ইশকুলে যাচ্ছো, টিউটরের কাছে পড়ছো এসবকেই তিনি রিমান্ড বলেছেন। অর্থাৎ তোমাদের জীবনে এখন পড়া লেখার রিমান্ড চলছে আরকি। এবার নিশ্চয়ই ভাবছো, রকিব হাসানের কাছে হয়তো ইশকুল মানেই ছিলো আতঙ্ক? মোটেই তা নয়। তার কাছে ইশকুল ছিলো স্বপ্ন, আনন্দ আর যত দূরন্তপনার স্বর্গরাজ্য। সেইসময়ের ইশকুলগুলো এখনকার মতো ছিলো না। তোমরাতো পড়াপড়ির চাপে না সময় পাও খেলতে যেতে, না পারো গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াতে। তখনকার ইশকুল যদি এমন হতো, তবে হয়তো কিশোর রকিব হাসানের পড়ালেখাই করা হতো না। তাইতো এই বয়সে এসে পড়ালেখার রিমান্ডবন্দি তোমাদের জন্য বড় মায়া হয় তার। তোমরা কি এখন ইচ্ছে করলেই বেরোতে পারবে ডোংরা গাছের পাতার ভেতর টুনটুনির বাসা খোঁজার অভিযানে? একদমই পারবে না। এবার হয়তো মানবে যে, তোমাদের এখনকার অতিপড়াপড়িকে রিমান্ডের সাথে তুলনা করে ভুল করেন নি রকিব হাসান। শুনলে লোভ হতে পারে- রকিব হাসানদের ইশকুলবেলাটা ছিলো স্বপ্নের মতো। তিনি কেবল টুনটুনির বাসা-ই খুঁজেছেন এমন নয়, রীতিমত গুলতি নিয়ে পাখি শিকারেও বেড়িয়েছেন। ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিয়েছেন ডুব সাাঁতার দিয়ে। তাই বলে আবার ভেবো না, রোজ রোজ ইশকুল পালিয়ে কেবল হইরই করে বেড়াতেন। ইশকুল পালানোর রেকর্ড বলতে গেলে তার একদমই নাই। গুটিকয়েক যাও আছে তাও পড়ালেখার ভয়ে নয়। ইশকুলের পড়া তার কাছে কোন ব্যপারই ছিলো না। কারণ বছরের শুরুতে নতুন বই পাওয়ার পর পরই প্রায় সব পড়া শেষ হয়ে যেতো। তাই পিটুনির ভয়ে ইশকুল পালানোর প্রশ্নই উঠে না। তবে হ্যা, ইশকুল থেকে জানালা দিয়ে পালিয়ে আসার একটি ঘটনা আছে বটে- একবার কাসে বসেই তিনি খবর পেলেন বিরাট বিরাট গামলা ভরে মিষ্টি আসছে ইশকুলে। কি যেন কি উপলক্ষ্যে তাদেরকে মিষ্টি খাওয়ানো হবে। খবর শুনেতো কাসে শুরু হয়ে গেলো প্রচন্ড হট্টগোল। টেবিল চাপড়ানো, জোরে-জোরে কথা বলা, চেঁচানো ইত্যাদি আরকি। কিছুক্ষন পর ঠিকই দেখা গেল দফতরি মিষ্টি নিয়ে চলে এসেছে। সবাইকে বলল, যার যার খাতা থেকে একটা করে পাতা ছিঁড়ে নিতে। ফড়াত ফড়াত পাতা ছিঁড়তে লাগলো সবাই। কিন্তু রকিব হাসানের আর তর সইছিলো না। কিসের আবার ছেঁড়াছেড়ি, হাতে নিয়েই খেয়ে ফেলা যায়। আম্মাতো আর কাসে নেই যে হাত ময়লা কি না দেখতে আসবে। শুরু হলো মিষ্টি বিতরণ। সাথে করে একটা পিরিচ আর ছুরি নিয়ে এসেছে দফতরি। পিরিেিচ একটি করে রসগোল্লা তুলে রাখে, ছুরি দিয়ে কেটে দুই ভাগ করে, তারপর অর্ধেকটা রসগোল্লা আলগোছে তুলে এনে ফেলে দেয় ছেলেদের বাড়িয়ে দেয়া কাগজে। এই অর্ধেকটা করে রসগোল্লা বিতরণ করছে দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো রকিব হাসানের। তাকে যখন দিতে এলো, সাফ মানা করে দিলেন, খাবেন না।
হয়তো ভাবছো মিষ্টি খাওয়া-খাওয়ির সাথে আবার ইশকুল পালানোর সম্পর্ক কী? হ্যা সম্পর্কতো একটা আছেই। তাহলে পরের ঘটনা শোন- মিষ্টি খাওয়ার হইচইতো শেষ হলো। কিছুক্ষন পর পাশের ঘরে আবার শুরু হলো হট্টগােল। কী ব্যাপার? একটি ছেলে বলল, ‘আবার মিষ্টি নাকি?’। হলেও হতে পারে। তখন কম হয়ে গিয়েছিলো বলে আবার এনেছে। পরক্ষনেই গলা ফাটিয়ে চেঁচানোর শব্দ পেলেন। ঘটনা কী? কিছুক্ষন পরই খবর এলো ইশকুলের সব ছাত্রদেরকে কলেরার ইনজেকশন দেয়া হবে। এই ছিল তবে মিষ্টি খাওয়ানোর পেছনের কারণ! যথারীতি ভারিক্কি চালে কাসরুমে ঢোকল মেডিকেল টিম। ঢোকেই দরজা বন্ধ করে দিলো। প্রথম বেঞ্চের প্রথম ছেলেটার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো তারা। গাঁইগুঁই করতে লাগল ছেলেটি। কিন্তু এতে কোন কানই দিলোনা ওরা। চামড়ায় সুচ ঠেকতেই আঁউ করে উঠল ছেলেটা। তারপর ভ্য্যাঁ করে কেঁদে ফেলল। সিরিয়ালে দুই নম্বর ছেলেটাকে ধরতে যেতেই সে ঢুকে গেল বেঞ্চের তলায়।
এসব দেখে কি আর স্থির থাকা যায়? তার বুকেও তখন কাঁপুনি ওঠেছে। স্যার তাদেরকে অভয় দেয়ার জন্য বার বার বলছিলেন ‘কিছু না, কিছু না, পিঁপড়ের কামড়। টেরই পাবে না।’ কথার সত্যতা প্রমাণ করার জন্য নিজেই শার্টের হাতা গুটিয়ে এগিয়ে গেলেন ইনজেকশন নিতে। সুচ ফোটানোর সাথে সাথে দাঁতমুখ খিঁচিয়ে তাঁর চেহারা বিকৃত করে ফেলার ভঙ্গি দেখেই সবাই আন্দাজ করে ফেলেছিলো, পিঁপড়ের কামড়টা বড় শক্ত কামড়।
ভয়টা আরো বেড়ে গেল তার। হঠাৎ তিনি লক্ষ্য করলেন, তিনি যেখানে বসে আছেন এর পাশের জানালাতে শিক নেই। জানালাটা অনেক বড় হলেও বেশ উঁচুতে। ওটা ডিঙাতে হলে বেঞ্চের ওপর উঠতে হবে। স্যার দেখে ফেলতে পারেন। সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার যেটি তা হলো, ওখান থেকে নিচে লাফিযে নামা। জানালার ঠিক নিচে রয়েছে একটি চওড়া ড্রেন। আর কাঁটাঝোপে ভরা। তবুও সেটা ইনজেকশনের চেয়ে ভালো মনে হলো। হঠাৎ তিনি বেঞ্চের ওপর উঠে দাঁড়ালেন। একলাফে জানালায় উঠে যা থাকে কপালে ভেবে দিলেন লাফ। নর্দমা ডিঙিয়ে পড়লেন ওপাশে। কাঁটার আঁচড় লাগল দু-এক জায়গায়। তবুও দিলেন ঝেড়ে দৌড়। বইখাতা সব কাসেই ফেলে এসেছেন। জানেন, এগুলো হারাবে না। দফতরি হয়তো অফিসঘরে রেখে দেবে।
এই হলো রকিব হাসানের ইশকুল পালানোর গল্প। আর যেদিন তিনি স্থির করতেন ইশকুলে যাবেন না, ব্যাস জোর করেও কেউ তাকে পাঠাতে পারতো না। কারণ সবাই জানতো একগুঁয়ে এ ছেলের ওপর জোর খাটবে না। ইশকুলে না গিয়ে কি করতেন সে সময়টুকু? চলে যেতেন পুকুরে মাছ ধরতে কিংবা টই টই করে ঘুরে বেড়াতে।
এতক্ষনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জেগেছে, তিনি টই টই করে ঘুরে বেড়িয়েছেন, মাছ ধরেছেন, গুলতি দিয়ে পাখি শিকার করেছেন সবই মানলাম। তবে গোয়েন্দাগিরি করেছেন কখন?
খুবই যৌক্তিক প্রশ্ন। যেহেতু তিনি তিনগোয়েন্দা সিরিজের লেখক, সেহেতো তার কিশোরবেলাটা গোয়েন্দাদের পালের গোদা হিসাবে কেটেছে এমন ধারণা হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর নিশ্চয়ই বেশ কয়েকজন চৌকষ চেলাপেলা তাকে ছায়ার মতো অনুকরণ করতো। সবার কাজ ছিলো কোথায় কার মুরগি চুরি গেছে, কবে কার ছাগল হারিয়ে ফেলেছে ইত্যাদি নানান ঘটনার খোঁজখবর রাখা। আবার নিজেদের তাগিদেই রহস্য উদঘাটনে আদাজল খেয়ে লাগতো সবাই। রকিব হাসানের নামের সাথে এমন ধরনের কল্পনাইতো মানানসই, তাই না?
হ্যা, তাই। তিনিও গোয়েন্দা ছিলেন। তবে মনে মনে গোয়েন্দা আরকি। দস্যু বাহরাম, শার্লক হোমস এগুলো নিয়মিত পড়তেন। কিন্তু তিনি ছিলেন অনেকটা নিঃসঙ্গ। তাই কিশোরগোয়েন্দা দল গঠন করাও তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। অবশ্য এমন কোন ইচ্ছেও ছিলো না তার।
কি সাঙ্ঘাতিক কথারে বাবা, ছোটবেলায় গোয়েন্দাগিরি করার সামান্যতম অভিজ্ঞতা নেই, অথচ বড় হয়ে কিনা লিখে ফেললেন গাদাগাদা রোমাঞ্চকর গোয়েন্দা কাহিনী!
এতে মোটেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। সব শিক্ষার জন্য বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়না। বই পড়ে পড়ে পৃথিবী ঘুরে আসা যায়। কাজেই তিনিও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন বই পড়ে। তাকে বাস্তবে গোয়েন্দাগিরি করে গোয়েন্দাসিরিজ লিখতে হয়নি।
রকি বীচের লোহালক্করের জঞ্জালের ভেতর থাকে গোয়েন্দাপ্রধান কিশোর পাশা। বাংলাদেশী বংশো™ভ’ত। ুদ্র জিনিসও বুদ্ধিদীপ্ত এ ছেলেটির দৃষ্টি এড়ায় না। যে জিনিস একবার দেখে সেটা মনে থাকে দীর্ঘদিন। তার মুদ্রাদোষ হলো গভীর চিন্তামগ্ন থাকলে নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটা। গোয়েন্দা সিরিজের দ্বিতীয় চরিত্র মুসা আমান। তাকে ঘরবাড়ি পরিষ্কার করা, লনের ঘাস ছাটা এসব কাজ প্রায়ই করতে হয়। শত্রুর পেটে আঘাত করতে তার জুড়ি নেই। তার মুদ্রাদোষ হলো কথায় কথায় ‘খাইছে’ কিংবা ‘ইয়াল্লা’ বলা। ভ’তে তার যত ভয়। তবে বিপদের মুহূর্তে সবচেয়ে সাহসী হয়ে উঠে মুসা। আর তিন গোয়েন্দার নথি গবেষক হিসেবে পরিচিত রবিন মিলফোর্ড। আয়ারল্যান্ডের বংশোদ্ভোত। তার কাজ হচ্ছে তিন গোয়েন্দার সকল কেসের রেকর্ড ব্যখ্যা বা নথি সংরক্ষণ করা। সে তিন গোয়েন্দার সবার মধ্যে সবচেয়ে কেতাদুরস্ত।
এ তিনটি চরিত্রের রোমাঞ্চকর গোয়েন্দাগিরিই তার লেখার উপজীব্য। এ তিনটি চরিত্রকে অনুসরণ করে তোমাদের মতো অনেকেই গোয়েন্দা দল গঠন করে ফেলেছে। কেউ হাতে অস্ত্র নিয়ে গোপন আস্তানাও গড়েছে। দূর্ঘটনার রহস্য উদঘাটনের দায়িত্ব নেয়ার জন্য এলাকার মুরব্বিদের ফুসলিয়েছে এমন কিশোরেরও অভাব নেই। কেউ কেউ আবার শখের গোয়েন্দা হিসাবে নিজেদের পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করতো। আবার অনেকেই প্রচন্ড আবেগ নিয়ে রহস্যের জট খোলার নতুন কৌশল শেখার আশায় দেখা করেছে স্বয়ং রকিব হাসানের সাথেও। তারপর তিনি ওদেরকে কি উপদেশ দিয়েছেন জানো?
তিনি বলেছেন ‘কল্পনাকে সবসময় বাস্তবের সাথে মেলাতে নেই।’

শুক্রবার, মে ২৭, ২০১১

পাতায় পাতায় গাঁথা


পাতার দ্বীপের পাতার খবর দুধ সাগরে দুলছে
দোদুল দুলে হাওয়ায় ভেসে জনে জনে তুলছে-

হাসলে পাতা মুক্তো ঝরে
কাঁদলে ঝরে পাতা
পাতার দ্বীপের কান্নাগুলো
পাতায় পাতায় গাঁথা।

কেন কেন কাঁদবে কেন
দ্বীপের রাণি পাতা!
এমন খবর মিথ্যে খবর
ধ্যত্তেরি ছাই ছাতা।

মিথ্যেনাগো মিথ্যেনাগো
মিথ্যে নয় এক রত্তি,
পাতারাণি ভীষণ একা
সত্যি খবর সত্যি।

নাম রাখা যাক পাতা



যে মেয়েটি পাতার ঘরে
পাতায় পাতায় ঘুমোয়
চোখের পাতা এক করে যে
চাঁদের চুমোয় চুমোয়

সেই মেয়েটির নাম যেন কী?
তেপান্তরের কেউ জানে না
হয়তো বুঝি সেও জানে না
নাম ছাড়া সে যায় না ডাকা
যায়না মনের ছবি আঁকা
তাই মেয়েটার নাম রাখা যাক
পাতা

সেই মেয়েটির ধাম জেনেছি
দূর কোথাও অচীনপুরে
যেখানটাতে স্বপ্ন ঘুরে
দুধ সাদা এক সাগর তীরে
পাতার দ্বীপে পাতার ভীড়ে
পাতাই হলো সেই মেয়েটির
ছাতা

বুধবার, এপ্রিল ২০, ২০১১

দুইখানা গাভী লইয়া রাজনৈতিক রঙ্গ


ধরা যাক আপনি দু’টি গাভীর মালিক। এ দু’টি গাভীর পরিণতি কোথায় কেমন হবে তা নিয়েই রাজনৈতিক রঙ্গ

ডেমোক্রেট
আপনার দু’টি গাভী রয়েছে। নিজের জন্য একটি রেখে অপরটি প্রতিবেশীকে দিয়ে দিন।

সোসাইলিস্ট
আপনার দু’টি গাভী রয়েছে। এর মধ্যে একটিকে সরকার নিয়ে নেবে এবং আপনার প্রতিবেশীকে দিয়ে দেবে।

আমেরিকান রিপাবলিকান
আপনার দু’টি গাভী রয়েছে। আর আপনার প্রতিবেশীর কোন গাভীই নেই। তাতে কী আসে যায়?

কমিউনিস্ট
আপনার দু’টি গাভী রয়েছে। সরকার দুটোর মালিকানা নিযে নেবে এবং আপনাকে দুধ সরবরাহ করবে।

ফ্যাসিস্ট
আপনার দু’টি গাভী রয়েছে। সরকার দুটোকেই ক্রোক করে আপনার কাছেই দুধ বিক্রি করবে। আর আপনি গোপন আন্দোলনে জড়িয়ে গিয়ে ধ্বংসাত্বক প্রচারণা শুরু করবেন।

ডেমোক্রেসি (আমেরিকান স্টাইল)
আপনার দু’টি গাভী রয়েছে। একটি গাভীর মালিক এমন ভিনদেশী কারো সাহায্যার্থে সরকার আপনার কাছ থেকে অতিরিক্ত কর আদায় করবে। যার ধকল সইতে না পেরে দুটো গাভীই বিক্রি করতে বাধ্য হবেন। উল্লেখ্য, ভীনদেশীর আগের গাভীটি ছিলো আপনার সরকারেরই উপহার

পুঁজিবাদ (আমেরিকান স্টাইল)
আপনার দু’টি গাভী রয়েছ্ েএকটি বিক্রি করে একটি ষাঁঢ় কিনেন এবং গরুর পাল তৈরি করেন।

ব্যুরোক্রেসী (আমেরিকান স্টাইল)
আপনার দু’টি গাভী রয়েছে। সরকার দুটোকেই নিয়ে নেবে, একটিকে লাথি দেবে, অপরটির দুধ দোহন করবে এবং আপনাকে দুধের দাম পরিশোধ করতে হবে। তারপর সমস্ত দুধ ড্রেনে ফেলে দেবে।

আমেরিকান করপোরেশন
আপনার দু’টি গাভী রয়েছে। একটিকে বিক্রি করে অন্যটিকে চারটি গরুর সমান দুধ দেয়ার মতো ক্ষমতাসম্পন্ন করে তুলুন। আপনি তখনি অবাক হবেন, যখন গাভীটি মারা যাবে।

ফ্রান্স করপোরেশন
আপনার দু’টি গাভী রয়েছে। আরো একটি গাভীর মালিকানার দাবিতে আপনি ধর্মঘটে যান।

জাপানিজ করপোরেশন
আপনার দু’টি গাভী রয়েছে। এদেরকে এমনভাবে তৈরি করুন, যেন সাধারণ গরুর দশভাগের একভাগ আকার হয়েও দৈনিক বিশবার দুধ দেয়। তারপর চালাক চতুর গাভীর কার্টুন ইমেজ তৈরি করে বিশ্বের বাজারে ছেড়ে দিন।

জার্মান করপোরেশন
আপনার দু’টি গাভী রয়েছে। এদেরকে এমনভাবে তৈরি করেন, যেন গাভী দুটি ১০০বছর বাঁচে, মাসে একবার খায়, তাও নিজের দুধ।

ব্রিটিশ করপোরেশন
আপনার দু’টি গাভী রয়েছে। এরা পাগল, এরা মৃত। এখন এদের জন্য কেবল অনুগ্রহ প্রয়োজন

ইতালিয়ান করপোরেশন
আপনার দু’টি গাভী রয়েছে। কিন্তু জানেন না এরা এখন কোথায় আছে। এদেরকে খোঁজে বের করার আগে দুপুরের খাবারের বিরতি নিন।

রাশিয়ান করপোরেশন
আপনার দু’টি গাভী রয়েছে। সত্যিই গাভীর সংখ্যা দুই কিনা তা গুনে দেখুন। প্রথমবার গোনার পর দেখলেন গাভীর সংখ্যা দুইটি নয় পাঁচটি। আবার গুনুন। এবার দেখলেন পাঁচটি থেকে গাভীর সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৪২টিতে। ধৈর্য্য হারাবেন না। আবার চেস্টা চালান। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, এবার সংখ্যাটা কমে এসে দাঁড়িয়েছে ১২টিতে। অবশেষে ধৈর্য্যরে বাঁধ ভেঙ্গে গেল আপনার। গাভী গোনা বন্ধ করে আরেক বোতল ভদকার ছিপি খুলুন।

সুইস করপোরেশন
আপনার দু’টি নয় ৫০০০ গাভী রয়েছে। কিন্তু এগুলো আয়ত্ত্বের বাইরে। তাই অন্যদেরকে গাভীগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিন।

ব্রাজিলিয়ান করপোরেশন
আপনার দু’টি গাভী রয়েছে। আমেরিকান করপোরেশনের সাথে পার্টনারশীপে আসুন। দ্রুত আপনি ১০০০ গাভীর মালিক হয়ে যাবেন এবং একসময় আমেরিকান করপোরেশন কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হবেন।

ভারতীয় করপোরেশন
আপনার দু’টি গাভী রয়েছে। দুটোকেই পরম ভক্তিতে পূজা করুন।

চাইনিজ করপোরেশন
আপনার গাভী রয়েছে মাত্র দু’টি, আর দুধ দোহনের জন্য লোক রয়েছে ৩০০ জন। সবাইকে আরো বেশি দুধ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত করুন। এ লোকগুলোর সার্বক্ষণিক নজর রাখতে হবে প্রোডাকশন বৃদ্ধির দিকে। আর এসব নিয়ে যে সাংবাদিক রিপোর্ট করবে, তাকে গ্রেফতার করুন।

ইসরাইলি করপোরেশন
আপনার দু’টি গাভী রয়েছে। গাভী দু’টি আপনার ওপর নির্ভরশীল নয়। এরা নিজেরাই একটি দুধের কারখানা, একটি আইসক্রীম স্টোর খুলে বসলো। তারপর নিজেদের চলচ্চিত্র স্বত্ব বিক্রী করল। আর এদের বাছুরকে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পাঠাল এমফিল করার জন্য।
সেখানে আপনার প্রয়োজন আর কতটুকু?

শনিবার, এপ্রিল ০২, ২০১১

রঙ্গব্যঙ্গ পাঁচফোড়ন

আইডিয়াবাজ সম্পাদিত রঙ্গব্যঙ্গ পাঁচফোড়ন এর মোড়ক উন্মোচন।
উন্মোচন করছেন- আনিসুল হক ও আহসান হাবীব। পাশে সোহেল অটল ও তারেক ফিরোজসহ অন্যরা। আর ক্যামেরার আড়ালে আমিতো আছিই।
তারিখ- ২৪ ফেব্রুয়ারি'২০১১
স্থান- একুশে বইমেলা

শুক্রবার, মার্চ ০৪, ২০১১

গোঁফ বিভ্রাট


শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ
গোফরান সাহেব। কাজ করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। আপাদমস্তক ভদ্রলোক। অবশ্য তিনি ভদ্র কী অভদ্র সে বিষয়ে আপাতত না গেলেও চলে। কারণ অফিসের সবাই এখন গোফরান সাহেবের গোঁফ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। গোঁফ, সে তো যেকোনো পুরুষেরই থাকে। এ নিয়ে আবার ব্যস্ত হওয়ার কী আছে? হ্যাঁ, ব্যাপার একটা আছে বটেÑ
তবে ব্যাপারটাতে ঢোকার আগে গোঁফ বিষয়ে সবার একটা সাধারণ ধারণা থাকা প্রয়োজন। উইকিপিডিয়া বাংলায় গোঁফের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে ‘গোঁফ বা মোচ হলো ওষ্ঠের ওপরে গজানো চুল। সাধারণত কারো গোঁফ আছে বলা হলে মনে করা হয় তার ওষ্ঠের ওপরের অংশটুকুতেই তা সীমাবদ্ধ আছে, কারণ গাল ও থুতনির অন্যান্য অংশে গজানো চুলকে দাড়ি বলা হয়। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের গোঁফ ওঠা শুরু হয়। নিওলিথিক যুগ থেকেই পাথরের ুর দিয়ে ৗেরি করার চল শুরু হয়, আর এই সুদীর্ঘকালের ব্যবধানে গোঁফের নানারকম ফ্যাশন চালু হয়েছে। যারা গোঁফ রাখে তারা নিয়মিত ছেঁটে ও আঁচডে রীতিমতো এর যতœ করে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দীর্ঘ ও সযতেœ রতি গোঁফের প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। বিশ্ব দাড়ি ও গোঁফ চ্যাম্পিয়নশিপে ছয়টি উপবিভাগে গোঁফের বিভাজন করা হয়। গোঁফের এমন কদর দেখেই হয়তো বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ ননসেন্স ছড়াকার সুকুমার রায় বলেছিলেন : ‘গোঁফকে বলে তোমার আমারÑ গোঁফ কি কারো কেনা?/গোঁফের আমি গোঁফের তুমি, তাই দিয়ে যায় চেনা।’
উইকিপিডিয়ার বর্ণনা এতটুকুই। সেখানে গোফরান সাহেবের গোঁফের কথা উল্লেখ না থাকলেও সুকুমার রায়ের কবিতার একটি উদ্ধৃতি রয়েছে। হেড অফিসের এক বড়বাবু এ কবিতাটির নায়কের ভূমিকায়। আর আমাদের নায়ক গোফরান সাহেব। সুকুমার রায়ের নায়ক আর আমাদের নায়কের মাঝে পার্থক্য এতটুকু যে, বড়বাবুর সামান্য একটু মাথার ব্যামো থাকলেও এমনিতে বেশ শান্ত স্বভাবেরই। আর গোফরান সাহেবের মাথায় কোনো রকমের ব্যামোট্যামো নেই। কিন্তু তাকে কিঞ্চিত অস্থির স্বভাবের বলা চলে। আরো একটি সাঙ্ঘাতিক ধরনের পার্থক্য রয়েছেÑ একদিন কাউকে না বলে, না কয়েই বড়বাবু আন্দাজ করে বসলেন, তার গোঁফজোড়া বুঝি হারানো গেল, ‘ব্যস্ত সবাই এদিক-ওদিক করছে ঘোরাঘুরি.../বাবু হাঁকেন, ওরে আমার গোঁফ গিয়েছে চুরি!/ গোঁফ হারানো! আজব কথা! তাও কি হয় সত্যি?/ গোঁফ জোড়া তো তেমনি আছে, কমেনি এক রত্তি/সবাই তারে বুঝিয়ে বলে, সামনে ধরে আয়না।/ মোটেও গোঁফ হয়নি চুরি, কখনো তা হয় না।’ কিন্তু গোফরান সাহেবের গোঁফ কখনো চুরি গিয়েছিল বলে আজ পর্যন্ত কোনো প্রমাণ মেলেনি। চুরি করা তো দূরের কথা তার ভোলা-ভালা পাতলা গোঁফগুলোতে হাত দেয়ার সাহস পর্যন্ত কেউ রাখে না। পাতলা বলতে একেবারে পাতলা নয়। সামান্য চারা-চারা আর ছাড়া ছাড়া আরকি। উইকিপিডিয়ার সংজ্ঞা অনুযায়ী এগুলোকে নিঃসন্দেহে গোঁফ বলে স্বীকৃতি দেয়া যায়।
এ তো গেলো গোঁফের কথা। কিন্তু তার দাড়ির রকমটা কী? সে বিষয়েও ধারণা নিয়ে নেয়া জরুরি। হ্যাঁ, পাতলা-টাতলা গোঁফের পাশাপাশি হালকা-সালকা কিছু দাড়িও রয়েছে তার। একবার সময় করে বসলে গুণে ফেলা যাবে সবগুলো। গোফরান সাহেব নিজে বেশ কয়েকবার দাড়ি শুমারিতে মনোনিবেশ করেছিলেন। চুলের জুলফি থেকে গালের নরম অংশটুকু পর্যন্ত সফলভাবেই গুণে ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু থুতনির দিকে এসেই সব গোলমেলে হয়ে গেলো। ‘একবার না পারিলে দেখো শতবার’ এ মন্ত্রের শিক্ষা ছোটবেলায়ই পেয়েছিলেন তিনি। তাই জানার অদম্য বাসনায় শতবার পেরিয়ে হাজারবার পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যেতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। কিন্তু দাড়ি শুমারির কাজটা শেষ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বার বারই থুতনিতে এসে হিসাব লণ্ডভণ্ড। একজন মানুষের ধৈর্য্য বলতেও তো একটা কথা আছে। একদিন ঠুস করেই তার ধৈর্য্যরে বাঁধটা ভেঙে গেল। সব কিছু ভাঙলে যেমন কম্পন তৈরি হয়, তারপর সেই কম্পন শব্দ হয়ে আঘাত করে মানুষের কানে, গোফরান সাহেবের বেলায়ও তেমনটি ঘটল। অর্থাৎ তার অন্তরের অন্তঃস্থলে একটি মারাত্মক ধরনের কম্পন তৈরি হলো। আর সে কম্পনের বহিঃপ্রকাশ ঘটল মুখে-চোখে। এমনকি ঠোঁটেও। তবে এই কম্পন সেই কম্পন নয়। কম্পনের চোটে তার লজ্জারাঙা মুখে মিষ্টি ধরনের ভাব ফুটে উঠল। সেই সাথে ঠোঁটের ফোকর ভেদ করে ‘হিস হিস’ ধরনের হাসির শব্দও বেরিয়ে এলো।
দেখ দেখি কী কাণ্ড! দাড়ি শুমারিতে ব্যর্থ হয়ে তিনি আবার হাসতে যাবেন কেন? এই কেনর জবাবটা যে কি তার সবটুকু বলা যাবে না। সে এক লম্বা ইতিহাস। তবে এ হাসির গোপন রহস্য সম্পর্কে অল্প-স্বল্প ধারণা দেয়া যেতে পারে মাত্র। সেদিনের সেই ঘটনার কথাটাই ধরা যাকÑ
অফিসের ক্যান্টিনে রোজকার মতো খেতে বসেছিলেন গোফরান সাহেব। হঠাৎই আবিষ্কার করলেন তিনি কোনোভাবেই ডালে চুমুক দিতে পারছেন না। যতবারই চেষ্টা করছেন ততবারই গোঁফজোড়া ভিজে যাচ্ছে। এমন ফ্যাঁসাদে জীবনে পড়েননি। রবীন্দ্রনাথ তাহলে ডাল খেতেন কিভাবে? নাকি ডাল খাওয়ার জন্য গোঁফওয়ালাদের বিশেষ কোনো পদ্ধতি রয়েছে? একজন নতুন গোঁফওয়ালা হিসেবে এসব প্রশ্নের জবাব গোফরান সাহেবের না জানারই কথা। কিন্তু এর আগেও তো তিনি ডালে চুমুক দিয়েছেন, এমন তো কখনো হয়নি! তাহলে কি ধরে নেয়া যায় আগের চেয়ে গোঁফজোড়া আরো বড় হয়ে গেছে? হলেও হতে পারে, কমপক্ষে পনের দিন তো হবেই তিনি ডাল স্পর্শ করেননি। এবার খুশি হয়ে উঠলেন গোফরান সাহেব। যাক বাবা, ছাড়াছাড়া গোঁফগুলো এবার তাহলে বাড়তে শুরু করেছে। ইচ্ছা থাকলেই যে উপায় হয় এটা তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
বিপুল বিক্রমে ডালে চুমুক দিতে লাগলেন তিনি। ফুড়–ৎ-ফাড়–ৎ শব্দে ক্যান্টিন মুখরিত। অনেকটা নিজের ইচ্ছেতেই ঘনঘন গোঁফজোড়া চুবাচ্ছেন। যার গোঁফ আছে সেই তো গোঁফ নিয়ে যেমন খুশি তেমন খেলতে পারে। যার নেই তার পক্ষে তো আর সম্ভব নয়। কাজেই নগদ যা পাও তা উপভোগ করে নাও। ডালে গোঁফ চুবানোতে যে এত আনন্দ এর আগে চিন্তাও করতে পারেননি তিনি। বড্ড মায়া হলো গোঁফহীনদের জন্য। একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন ক্যান্টিনজুড়ে। তিনি ছাড়া আর কারো নাকের নিচে কিচ্ছুটি নেই। গোঁফ না রাখলে সে আবার কিসের পুরুষ মানুষ! তা ছাড়া গোঁফ চুবানো ডালের স্বাদ যে বুঝেনি তার জীবনের চৌদ্দ আনাই মিছা। তাও আবার যেনতেন গোঁফ নয়, সার-গোবর দিয়ে বড় করে তোলা গোফরান সাহেবের নিজের গোঁফ!
আহ। কী তৃপ্তিরে বাবা। হাত ধুয়ে পরপর দুইবার ঢেঁকুর তুললেন গোফরান সাহেব। তারপর ক্যাশ কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গেলেন বিল পরিশোধ করতে। বিল হলো সর্বমোট তেত্রিশ টাকা। তিনি পকেট থেকে একটি কড়কড়ে পঞ্চাশ টাকার নোট বাড়িয়ে দিলেন ম্যানেজারের দিকে। যথারীতি বিল রেখে একটি দশ টাকা আর একটি পাঁচ টাকার নোট ফেরত দিলো ম্যানেজার। ‘আর দুই টাকা কোথায়?’ এমন ধরনের একটি জিজ্ঞাসা গোফরান সাহেবের চোখেমুখে ফুটে উঠার আগেই ‘ভাঙতি দুই টাকা নেই’ বলে একটি চুইংগাম বাড়িয়ে দিলো ম্যানেজার। হালের দোকানদারদের যা অবস্থা আরকি। অন্য সময় হলে দুই টাকার পরিবর্তে এই জিনিসটা নিতে রাজি হতেন না তিনি। কিন্তু আজ যে বিশেষ দিন। শখের গোঁফজোড়া যে আরো বড় হয়ে উঠছেÑ আজই তো তার প্রমাণ মিলল। তাই একদমই মেজাজ খারাপ করলেন না গোফরান সাহেব। চুপচাপ খোসা ছাড়িয়ে মুখে পুরে দিলেন চুইংগামটি। শিশুদের এ খাবারটিতে যে এত্তো স্বাদ লুকিয়ে রয়েছে, এ বিষয়ে একদম ধারণা ছিল না তার। এত দিন চুইংগাম খায়নি বলে বড় আফসোস হতে লাগল। ছন্দে ছন্দে চুইংগাম চিবাতে লাগলেন তিনি। সেই সাথে লক্ষ করলেন তার গোঁফজোড়াও সমান তালে নেচে যাচ্ছে। একেবারে সোনায় সোহাগা। গোঁফের নাচনে দোলে দোলে নিজের চেয়ারটাতে এসে বসলেন। এবার একটা সুখের ঘুম প্রয়োজন। মাথা কাত করে চেয়ারেই গা এলিয়ে দিলেন গোফরান সাহেব। দুনিয়ার সব আরাম এসে যেন ঘিরে ধরলো তাকে। লেগে গেলো চোখের পাতা। পুরো পৃথিবীটাই যেন শান্ত হয়ে এলো। চুইংগাম চিবাতে চিবাতেই তিনি চলে গেলেন অতীতের অম্লমধুর দিনগুলোতেÑ
আজকের এই গোঁফ একদিনের ফসল নয়। প্রতিটি সফলতার জন্যই প্রয়োজন নিবিড় অধ্যবসায়। গোফরান সাহেবের অধ্যবসায়ের সেই দিনগুলোই বয়ে এনেছে আজকের সাফল্য। তখন কেবল গোফরান সাহেব কৈশোরে পা দিয়েছেন। সমবয়সি অনেকের কাজলকালো গোঁফ ভেসে উঠলেও তার নাকের নিচে গোঁফের কোনো রেখাই দেখা দেয়নি। সেই সুযোগে অনেক বন্ধুরাই নিজেদের বড় ভাই হিসেবে দাবি করে বসলো। সমবয়সি কাউকে ভাই বলে ডাকবে এমন অপমান সহ্য করার মতো লোক গোফরান নয়। কোনো কালেই তার এ অভ্যাস ছিল না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে করেই হোক নিজেকে বড় বলে প্রমাণ করতে হবে। কিন্তু এর জন্য কি করা যায়? দ্বারস্ত হলেন শুভাকাক্সিক্ষদের। কেউ কেউ একেবারেই নিরাশ করল তাকে। সাফ সাফ জানিয়ে দিলো কোনো দিনই নাকি তার গোঁফ গজাবে না। আবার একান্ত কাছের অনেকেই পরামর্শ দিলো ‘নাকের নিচে রেজার চালিয়ে দেখতে পারিস’। আইডিয়াটা পছন্দ হয়ে গেলো গোফরানের। কিন্তু বাসায় তো কোনো রেজার নেই। দোকান থেকে কিনতে যাওয়াটাও সমীচীন হবে না। বেরসিক দোকানি যদি জিজ্ঞেস করেই বসে ‘রেজার দিয়ে তোমার কি কাজ খোকাবাবু?’ কী আর করা, বাধ্য হয়েই বিকল্প পথ বেছে নিতে হলো। খাপখোলা চকচকে ব্লেড হাতে নিয়ে চুপি চুপি বাথরুমে ঢুকতে হয়েছিল তাকে। তারপর পানিতে মুখ ভিজিয়ে একচোট সাবান মেখে নিয়েছিলেন। ভাবখানা এমন যেনÑ সাবানের ফেনার নিচে অসংখ্য খোঁচা খোঁচা দাড়ি-গোঁফ লুকিয়ে আছে। একেবারে বড়দের মতো আরকি। তারপর কম্পমান হস্তে ব্লেডটা প্রথম চালিয়েছিলেন ঠিক ওষ্ঠ আর নাসিকার মাঝখানেই (ওষ্ঠ ও নাশিকা-উইকিপিডিয়ায় ব্যবহৃত এ দু’টি শব্দের অর্থ দাঁড়ায় যথাক্রমে ঠোঁট ও নাক)। যা হঙয়ার হলোও তাই। ঠোঁট কেটে একাকার। ভাগ্য সহায় ছিল বলে উন্নত নাসিকার কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আধুনিক যুগের ব্লেড ব্যবহার করেও পার পেলেন না গোফরান।
সদ্য কৈশোরপ্রাপ্ত গোফরান যে এমন কাজ করতে পারেন তা কেউ-ই ভাবতে পারেনি। ঘটনাটা প্রথম ফাঁস হয় তার নিজের বাড়িতেই। তারপর বাড়ি থেকে বন্ধু, বন্ধু থেকে স্কুল। এভাবে গড়াতে গড়াতে একেবারে মেয়ে বন্ধুদের কান পর্যন্ত গড়িয়ে যায়। জলের মতো সহজ বিষয়টা ধীরে ধীরে বরফের মতো সাঙ্ঘাতিক হয়ে উঠতে থাকে। অন্যদের হাসি-তামাশা যেমন তেমন, মেয়েদের টিটকিরি একেবারেই সহ্য হওয়ার মতো নয়। কাসে, প্রাইভেটে, রাস্তায় যেখানে খুশি পেলেই হলো, মেয়েরা সমস্বরে উত্যক্ত করা শুরু করলো গোফরানকে। আধুনিক ভাষায় একে সম্ভবত ‘এডাম টিজিং’ হিসেবেই অভিহীত করা যায়। কেবল এডাম টিজিংয়ের শিকার হওয়াই শেষ ছিল না, মুরব্বিদের কেউ কেউ ইচড়ে পাকা বলেও খোঁচাটোচা দিতো তাকে। সেই থেকেই জেদ ধরে বসল। যে করেই হোক নাকের নিচে গোঁফ চাই-ই চাই। প্রয়োজনে রোপণ করে হলেও। এর জন্য উর্বর মাটি দরকার হলে আফ্রিকার জঙ্গলে পর্যন্ত যেতে রাজি আছে। আর একবার যদি গোঁফের বাগান জেগে ওঠে, তবে তো ছেঁটে-আঁচড়ে নিয়মিত যতœ নেবেই। শুধু গোঁফের জন্য একটি আলাদা চিরুনির বাজেটও করে ফেললেন গোফরান। এভাবে যতœ-আত্তি আর পুষ্টি পেয়ে গোঁফজোড়া যখন বড় হয়ে উঠবে, তখন তাবড় তাবড় গোঁফের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন। এক সময় বিশ্ব গোঁফ চ্যাম্পিয়নশিপের গৌরব আসবে তার ঘরেই। তখন গিনেস বুকে যদি তার নাম উঠে যায়, এতেও কোনো আপত্তি থাকবে না।
কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়াল একটিমাত্র অপূর্ণতা। আর সেটা হলো চেষ্টা-তদবির করেও গোঁফের দেখা পাচ্ছেন না। কথায় আছে ‘একবার না পারিলে দেখো শতবার’। তাই একবার-দু’বার, তিনবার, চারবার করে করে শতবার পর্যন্ত দেখলেন তিনি। কিন্তু কোনো ফল হলো না। তার পরও ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলেন না গোফরান। শতবার পেরিয়ে হাজারবার। এভাবে হাজার হাজারবার রেজর চালাতে হলো তাকে। রেজরের আঁচড়ে আঁচড়ে গালের চামড়া ভারি করে তুললেন। অবশেষে দু-একটি গোঁফ অঙ্কুরিত হতে দেখা গেল। অর্থাৎ সফলতা তিনি পেয়েছেন। এই প্রথমবারের মতো তিনি প্রমাণ করলেন যেÑ ইচ্ছা থাকিলেই উপায় হয়।
গোফরানের নাকের নিচে গোঁফ দেখে তো মুখপোড়া বন্ধুদের মুখে স্কচটেপ লেগে যাওয়ার অবস্থা। যারা বলেছিল, ‘গোফরানের কখনো গোঁফ গজাবে না’ তাদের দেখিয়ে দেখিয়ে বেড়াতে লাগলেন তিনি। এরপর থেকেই সবকিছুর কেমন জানি আমূল পরিবর্তন হতে থাকল। যেই বাবার কাছে দশ টাকা চাইলে হাজারটি প্রশ্ন করে জর্জরিত করেন, সেই বাবাই তাকে রেজর কেনার জন্য পুরো ষাট টাকা দিয়ে দিলেন!
সেই থেকে তার গোঁফের যতœ-আত্তিতে মনোযোগ আরো বেড়ে গেল। আরো বেড়ে গেল আনন্দ-উচ্ছ্বাস আর শঙ্কার দোলা। শঙ্কাটা তখন হয়েছিল দাড়ি নিয়ে। গোঁফের দেখা মিললেও দাড়ির কোনো চিহ্নও ছিল না গোফরানের গালে। আবার সেই দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা। অর্থাৎ সার-গোবর, পানি-জল দিয়ে নিড়ানি পদ্ধতি অবলম্বন এবং অবশেষে সফল। এভাবেই চলছিল গোফরানের সংগ্রাম।
একদিন গোফরান বড় হলেন। একটি ভালো চাকরি পেলেন। সেই সাথে পেলেন মুষ্টিমেয় কিছু দাড়ি। এই গোফরান আর সেই গোফরান রইলেন না। তার ওষ্ঠ এবং নাসিকার মধ্যবর্তী স্থানে এখন ছাড়া ছাড়া গোঁফ। আর নিজে বেশ কয়েকবার শুমারি করে ব্যর্থ হয়ে নিশ্চিত হলেন যতেœ লালিত থুতনির দাড়িগুলো এখন শুমারিসীমা অতিক্রম করেছে। বিশেষ করে আজকের ডাল অনুভূতির কথা তো বলারই অপেক্ষা রাখে না। আহ্ বড়ই তৃপ্তির অনুভূতি। অম্লমধুর স্মৃতি রোমন্থন করতে করতেই আরো একটি মিষ্টি হাসি দিলেন তিনি।
কি অদ্ভুতুড়ে কাণ্ড! গোফরান সাহেব সামান্য একটি হাসি দিয়েছেন মাত্র, তাও নিঃশব্দে। কিন্তু তার কানে এসে প্রবেশ করল অসংখ্য হাসির কলরোল। পুকুরের মাঝখানে ঢিল ছুড়লে একটি ঢেউ থেকে যেমন পুকুরজুড়ে অসংখ্য ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়, ঘটনাটা ঠিক তেমনি ঘটল। ভূতটুত ভর করেনি তো তার ওপর? আধোঘুমে ডুবে থেকেই নিজের গায়ে চিমটি কাটলেন। পরক্ষণেই ককিয়ে উঠলেন ব্যথায় । সবকিছুই দেখি ঠিকঠাক আছে। অস্বাভাবিক কিছুই ঘটেনি। হয়তো সেটা মনের ভুল হতে পারে। আসলে হাসিটাসির কোনো শব্দই হয়নি। এবার নিশ্চিন্ত হতে যাচ্ছিলেন তিনি। পরপরই ভাবলেন পরীক্ষামূলকভাবে আরো একটি হাসি দিয়ে দেখা দরকার। যেই ভাবা সেই কাজ, ঠোঁট দুটোকে দুই দিকে ছড়িয়ে দিয়ে দাঁতগুলো বিকশিত করলেন। ওম্মা! এবার দেখি হাসির চোটে কানে তালা লেগে যাওয়ার অবস্থা হলো। তালা প্রায় লেগেই গিয়েছিলো, যদি তৎক্ষনাৎ চোখ না খুলতেন তিনি-
ততক্ষণে গোফরান সাহেবকে ঘিরে অসংখ্য মানুষের জটলা তৈরি হয়েছে। কেউ হু-হু-হু করে হাসছে, কেউ হাহ্ হাহ্ করে। আবার কারো পেটে খিল ধরে মরণাপন্ন অবস্থা। গোফরান সাহেব ঘটনার আদ্যোপান্ত ঠাহর করতে পারছেন না। এ দিকে বেরসিকের দল তাকে ঘিরে হেসেই চলেছে। কিছু বুঝে উঠতে না পেরে তিনি মোটামুটি ধরনের নিশ্চিত হয়েই গেছেন সুকুমার রায়ের বড়বাবুর মতো তার গোঁফজোড়াও বুঝি চুরি গেল। আচমকা চেঁচিয়ে উঠলেনÑ ওরে আমার গোঁফ গিয়েছে চুরি।
চুরি হবে কেনো, ডাকাতি। তারই এক সহকর্মী পরিস্থিতি সম্পর্কে সামান্য ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করলেন।
একি অনাসৃষ্টি! দিনদুপুরে ডাকাতি!
গোফরান সাহেবের গোঁফজোড়া বুঝি এবার খোয়াতে হবে। টিটকিরি করলেন ভিড়ের মধ্য থেকেই আরেকজন।
এতবড় স্পর্ধা! ডাকাতির হুমকি! উত্তেজিত বাতচিত শুরু করলেন গোফরান সাহেব। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন এক হাত দেখে নেয়ার উদ্দেশ্যে।
অভ্যাগতদের মাঝে এতক্ষণ যারা মূল ঘটনাটি দেখতে পাচ্ছিলেন না, এবার তারাও স্পষ্ট করে দেখার সুযোগ পেলেন। রাগে গজগজ করতে থাকা গোফরান সাহেবের ডালমাখা গোঁফজোড়ায় লেপ্টে আছে চুইংগাম। বড়ই আঠাল পদার্থ এটি। একবার গোঁফে লেপ্টে গেলে শেভ না করে উপায় থাকে না। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই অফিসজুড়ে লেগে গেল মহা হট্টগোল।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে গোফরান সাহেবের মুখের চুইংগাম গোঁফে লাগল কিভাবে?
কে জানে কিভাবে।

সোমবার, ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০১১

ম্যালা ভালোবাসা


কার্টুন: জাহিদ হাসান বেনু

শুক্রবার, জানুয়ারী ০৭, ২০১১

ঠান্ডা লড়াই


আমাকে আর সোহেল অটলকে একসাথে নয়া দিগন্তে দুটি সাপ্তাহিক প্রকাশনা অবকাশ ও থেরাপির দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে থেরাপি সম্পাদক নানাভাবে চেস্টা করেছেন অবকাশকে পেছনে ফেলতে। এর জন্য ভেতরে ভেতরে ষড়যন্ত্রেও মেতেছেন তিনি। এমনকি অবকাশের কয়েকটি সংখ্যা বন্ধ করে দেয়ার পায়তারা করেছেন এবং সফলও হয়েছেন। আমার মতো সোজাসাপটা মানুষের বিরুদ্ধে অটলের এই ষড়যন্ত্রকে আমিও সহজভাবে নিতে পারিনি।
তারপর লেগে যায় তুমুল লড়াই। সে এক ভয়ঙ্কর ঠান্ডা লড়াই।
আর সে লড়াইয়ের দৃশ্যই চিত্রিত করেছেন শিল্পী হামিদুল ইসলাম।