বৃহস্পতিবার, জুন ৩০, ২০১১

রাজশাহী চিড়িয়াখানায়







ছবিগুলো রাজশাহী চিড়িয়াখানায় তোলা। বলে রাখা প্রয়োজন- আমরা (আমি, সোহেল অটল ও রাসেল) কিন্তু চিড়িয়া নই।

`নানা হে..'


শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ, রাজশাহী থেকে ফিরে
নাতি মঞ্চে গিয়ে কয়েকবার ‘নানা’ বলে হাঁক ছাড়ে। গায়ে গেঞ্জি, কোমরে গামছা।
নেপথ্য থেকে একজন চেঁচিয়ে ওঠে, তুই এখেনে চিল্লেচিল্লি করছিস কেনে?
নাতি- তোমরা হাঁর নানাকে কেহু দেখ্যাছো নি আমি সেই সক্কাল থেইকা বোইলে রাখলাম এখেনে এক অনুষ্ঠান হবে। কিন্তু হাঁর নানার কোন দেখা নাই।
হঠাত মঞ্চে উদয় হন নানা। তারপর আচমকা লাঠি মারেন নাতির পেছনে এবং বলেন, শালাকে দিব পাইনঠ্যার বাড়ি।
নানার মুখে পাকা দাঁড়ি, মাথায় মাথাল, পরনে লুঙ্গি, হাতে লাঠি। হাতের লাঠিটি ঘুরাতে ঘুরাতে নাতিকে শুধায়, আগে বোল কিসের অনুষ্ঠানের লেগি আমাকে বোলেছিস?
- আজকে এখেনে আম, সিল্ক প্রদর্শনী ও লোকউতসব চলছে যে।
এভাবে নানা-নাতির রসালো আলাপচারিতা চলতে থাকে কিছুন। এর পর গানের ধুয়া তোলে দু’জন-
‘হে নানা, শান্তির শহর এই রাজশাহী
তার গুণগান হামরা গাহি
এই রাজশাহীর নাই যে কোথাও তুলনা
হে নানা, শিার শহর এই রাজশাহী
মানুষ গরার কারখানা।’
ধুয়ার পর সংলাপ। সংলাপের পর ধুয়া। এভাবেই গীত হতে থাকে গম্ভীরা।
গম্ভীরা পরিবেশনের এ চিত্রটি আম, সিল্ক প্রদর্শনী ও লোক উৎসব মঞ্চের। রাজশাহী নগরভবন প্রাঙ্গনে তিন দিনব্যাপী এ উতসব শুরু হয় গত ২২ জুন এবং শেষ হয় ২৪ জুন।
বরেন্দ্রনগরী রাজশাহীর বিখ্যাত আম, সিল্ক এবং গম্ভীরাকে উপজীব্য করে ‘আমরা রাজশাহীবাসী’ নামে একটি আঞ্চলিক সংগঠন বাৎসরিকভাবে এর আয়োজন করে। বরাবরের মতো এবারের উৎসবেরও পৃষ্ঠপোষকতা করেছে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংক। এবার নিয়ে পরপর চারবার এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। গত বুধবার নগরভবন প্রাঙ্গনে তিনদিনব্যাপি অনুষ্ঠানটি শুরু হয় বিকেল পাঁচটায়। শেষ হয় রাত দশটায়। বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও ফিতা কাটার মধ্য দিয়ে এটি উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ সরিফুল ইসলাম বাবু। সভাপতিত্ব করেন আমরা রাজশাহীবাসীর সভাপতি মো. আবু বাক্কার আলী। উদ্বোধনের পর মেলামঞ্চে একে একে বক্তৃতা করেন রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের চেয়ারম্যান ড.আবুল আহসান চৌধুরী, বাংলাদেশ সিল্ক বোর্ড রাজশাহীর চেয়ারম্যান সুনীল চন্দ্র পাল এবং বাংলালিংকের সহকারি ম্যানেজার শিবলী সাদিকসহ আরো অনেকেই ।
নগরভবন আঙিনায় বসেছিল আম ও সিল্কের পসরা। উদ্বোধনের সময় দর্শনার্থীর সংখ্যা কম থাকলেও সন্ধ্যার পর সরগরম হয়ে উঠতে থাকে মেলাপ্রাঙ্গন।
রাজশাহীর কৃষকদের অনেকেই আমের ওপর নির্ভরশী। বাংলাদেশেতো নয়ই বরং পৃথিবীর কোথাও এমন সুস্বাদু ও সুগঠিত আম নেই। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় ও তৃতিয় দিনও সকাল ১০টা থেকে রাত দশটা পর্যন্তভিন্ন ভিন্ন জাতের রকমারি স্বাদের আম প্রদর্শিত হয়।
রাজশাহীকে বলা হয় রেশমনগরী। এখানকার সিল্কের গুটি থেকে তৈরি হয় অভিজাত ও মসৃন কাপড়। রাজশাহী সিল্কের শাড়ি ও অন্যান্য পণ্যের চাহিদা দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বাইরেও ছড়িয়ে পরেছে। মেলার স্টলগুলোতে সিল্কের তৈরি পোশাক প্রদর্শিত হয়েছে।
রাজশাহী অঞ্চলের আরেক ঐতিহ্য গম্ভীরা। পশ্চিমবঙ্গের মালদহ এলাকায় এ গানের সূচনা হয়। পরবর্তীতে তা রাজশাহী অঞ্চলের গান হয়ে ওঠে। এ ধারার গানে প্রধানত দু’টি কেন্দ্রীয় চরিত্র মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এদের একজন হচ্ছেন নানা, যিনি পেশায় কৃষক এবং অন্যজন নাতি, যে একজন রাখাল। গম্ভীরায় সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি উঠে আসলেও সময়ের সাথে সাথে এর স্বরুপ পাল্টাচ্ছে। এবারের উতসবে পরিবেশিত গম্ভীরার মূল বিষয়বস্তু ছিল রাজশাহীর শিা-সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরনে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। গম্ভীরায় নানার ভূমিকায় ছিলেন খুরশিদ আল মাহমুদ ও নাতির ভূমিকায় মো: মনি আক্তারুল ইসলাম সনি। দু’জনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন যায়গায় গম্ভীরা পরিবেশন করছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে রাজশাহী থিয়েটারের মাধ্যমে গম্ভীরার সাথে আস্টেপৃস্টে জড়িয়ে যান ‘ খুরশিদ।
মো: মনি আক্তারুল ইসলাম সনি নাতির ভূমিকায় মঞ্চে আছেন ছয় বছর হলো। নিজের মনের তাগিদেই আনন্দের সাথে কাজটি করে যাচ্ছেন তিনি ‘লোকজ সংস্কৃতিকে ধরে রাখার জন্য আমরা গম্ভীরা শুরু করি। আমাদের পরিবারের কেউ সংস্কৃতিক অঙ্গনের সাথে জড়িত না থাকলেও নিজের চেস্টায় আমি উঠে এসেছি।’ খুরশিদের মতো তিনিও রাজশাহী থিয়েটার থেকেই উঠে এসেছেন। তিনি মনে করেন ম্যাসেজ পৌঁছানোর একটি ভালো মাধ্যম হলো গম্ভীরা ‘ নানা নাতির হাস্যরসের মাধ্যমে সহযেই মানুষের কাছে মেসেজ পৌঁছে দিতে পারি আমরা। তাই গম্ভীরা সমাজসচেতনতা তৈরি করতে সহায়ক।’
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করার পর অন্য কোন পেশায় না গিয়ে গম্ভীরাকেই তারা পেশা হিসাবে নিয়েছেন। তবে তিনি বলেন ‘এখন পর্যন্ত গম্ভীরা তেমনভাবে পেশাদারিত্বের পর্যায়ে পৌঁছায়নি। কিন্তু এর প্রসার যেভাবে হচ্ছে, সেই ধারাবাহিকতা অব্যহত থাকলে গম্ভীরাকে পরিপূর্ণ পেশা হিসাবে গ্রহণ করার জন্য খুব বেশি দিন অপো করতে হবে না আমাদের।’

সোমবার, জুন ২৭, ২০১১

ছবিটা ডাইনোসর যুগের


ছবিটা ডাইনোসর যুগের। চলে এসেছে টাইম মেশিনে চড়ে। সেই যুগের কোন একদিনে (২৩ জুন) আমরা তিনজন ( বা থেকে আমি, বিশিস্ট আম্রখাদক সোহেল অটল ও জোবায়ের) গিয়েছিলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে।
সাথে অবশ্য আরো অনেকে ছিলেন কিন্তু টাইম মেশিনের চোখে তারা আপাতত ধরা পড়েননি।