রবিবার, এপ্রিল ০৪, ২০১০

আজ মন্তাজ উদ্দিন বড়ই বিমর্ষ

প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে তিন কি চারদিন যেন তার আসতেই হবে। কোনদিন এক কাপ চা, আবার কোনদিন সাথে একটা টোস্ট বিস্কিটও ভিজিয়ে খায়। আর খেতে খেতে কাউকে সাথে পেলে কিছুক্ষণতো বক বক করবেই। সেই কবেকার বর্ষায় তার ভিটে ভাঙ্গলো, কিভাবে অর্ধাহারে অনাহারে কাটালো, এসব গল্প। শুধু তা-ই নয়, দেশ বিদেশের নানা খবর বয়ে বেড়ায় এই মন্তাজ উদ্দিন। শুনতে বেশ ভালোই লাগে ময়নার।
আজ মন্তাজ উদ্দিন যেনো একটু বিমর্ষ। মুখ নিচু করে নীরবেই কাপে চুমুক দিয়ে যাচ্ছিলো। আহা, কত কষ্টইনা রয়েছে মানুষটার। তার মেয়ে ফজিলা খুন হয় দশ বছর বয়সে। কিন্তু কেউ জানে না কিভাবে খুন হলো । ওর লাশ ভেসে উঠেছিলো ভরা বর্ষার পানিতে। এরপর থেকেই নাকি সে ভবঘুরের মতো হয়ে গেছে । এসব কথা অনেকের মুখেই শুনেছে ময়না। কিন্তু ফুর্তিবাজ এই মানুষটির ভেতরে যে কষ্ট লুকিয়ে থাকতে পারে তা এর আগে বিশ্বাস করতে পারেনি। প্রতিটি চুমুক পর্যবেক্ষণ করতে করতে সে লক্ষ্য করলো চা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে মন্তাজ উদ্দিনের।
- আরেক কাপ চা দেই পুতু (চাচা)? উপযাজক হয়েই প্রস্তাব করল ময়না। এরপর সম্মতির অপেক্ষা না করে আরো এক কাপ চা বানানোর উদ্দেশ্যে গরম পানি ঢালতে শুরু করল সে।
মাঝ বয়সী মানুষটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখ তুলল এবার। কিন্তু কোন জবাব না দিয়ে উদভ্রান্তের মত এদিক ওদিক দৃস্টি ঘুরিয়ে বিড় বিড় করে একটি শব্দ উচ্চারণ করল ‘খুন!’। শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল ময়নার।
- পত্রিকার পাতায় লাল কালিতে বেসুমার খুনের খবর। বড়ির ভিতরে খুন, রাস্তায় খুন, ই্িসটশনে খুন। সারা দেশের বাতাসে অহন খুনের খবর। এত খুন রুখব কেডা?
এতটুকু বলে দ্বিতীয় কাপটি টেনে নিয়ে আবার চায়ের দিকে মনযোগ দিলো মন্তাজ উদ্দিন।

কোন মন্তব্য নেই: