সোমবার, মার্চ ২৯, ২০১০

ঘড়ির কাঁটায় সময় আঁটা


-কিরে তোর বাবার আর কত সময়? লোকটার প্রশ্নের জবাবে কিছু বললনা ময়না কারণ তারও একই প্রশ্ন, কখন ফিরে আসবে বাবা আর কখনইবা কেরোসিন দিয়ে বিদায় করতে পারবে এই শহুরে দম্পতিকে
খানিকটা অধৈর্য্য হয়ে উঠে দাঁড়ালো মহিলা-বাড়ি চল এবার দোকানি কখন ফিরে আসে কি না আসে তার কোন ঠিক নেই আর কী আশ্চর্য্য গ্রাম-ই বা তোমাদের নেই বিদ্যুৎ, নেই দোকান পাট একটা ঝুপড়ি যা-ও পাওয়া গেল, তাতেও আবার কেরোসিনের টিন খালি!
- অপেক্ষা কর মেয়েটাতো বললোই ওর বাবা কেরোসিন নিয়ে আসছে
- হ্যা, অপেক্ষাতো করছিই তবে এ অপেক্ষার শেষ কি আদৌ হবে?
- কিভাবে আর হবে, ঘড়ির কাঁটা পুনরায় এগিয়ে নেয়ার সিদ্ধন্ত তো সরকার বাতিল করে দিয়েছে যদি আগামী ৩১ তারিখ মধ্য রাত থেকে ডে-লাইট সেভিং সিস্টেম আবার চালু হতো তবে কিছুদিন পর হয়ত আমাদের এই গ্রামের মত বঞ্চিত এলাকাগুলোতেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যেতো তখন আর দু’দিনের জন্য গ্রামে এসে কেরোসিন কিনতে অপেক্ষা করতে হতো না তোমাকে
- তাই নাকি! আগে এক ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকলে আরেক ঘন্টা থাকার নিশ্চয়তা ছিল এখন তাও নেই
দম্পতির দূর্বোধ্য কথাগুলো পুরোপুরি বুঝতে না পারলেও শংকিত হয়ে উঠল ময়না ভাগ্যিস ওর বাবা ঘড়ি কেনার মতো বোকামি করতে যায়নি
কিছুক্ষন নিরব থেকে আবার কথা শুরু করল মহিলা -সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করায় সরকারকে অভিনন্দন কিন্তু এ সিদ্ধান্তটা ছিল নিজের সাথে প্রতারণা করার মত
- ঘড়ি কি কখনো বন্ধ থাকে? মিনিট, সেকেন্ড আর ঘন্টার কাঁটা নির্দিষ্ট কক্ষপথে ২৪ ঘন্টায় একবার পরিভ্রমণ করে ২০০৯ সালের ১৯ জুন থেকে সরকার যখন কাঁটা একঘন্টা এগিয়ে দিলো, তখন যেমন দিনে একবার পরিভ্রমণ করেছে, ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে আগের অবস্থায় পিছিয়ে দেয়ার পরও একবারই করেছে
- বিভিন্ন উন্নত দেশে ডে-লাইট সেভিং সিস্টেম রয়েছে
- উন্নত বিশ্বের অনুকরণ আমাদের একটা বাজে স্বভাব অনুকরণ কেন করবো কিংবা করলে লাভ না কি তি সে হিসাব না করে সঙ সেজেই বেশি আনন্দ পাই আমরা, অন্তত লোক হাসানো তো যায়
- তাদের কোন ভালো উদাহরণকেও কি গ্রহণ করা যাবেনা?
- এটা আমাদের জন্য মোটেই ভালো উদাহরণ নয় বিষুব রেখার কাছাকাছি দেশ এটি এখানে দিন এবং রাতের দৈর্ঘ্য শীত এবং গ্রীষ্মকালে খুব বেশি বড় এবং ছোট হয়না এছাড়া তাদের জীবণযাত্রা আমাদের মতো নয় পশ্চিমা দেশগলোতে সময় দেখে খায় সময় দেখে ঘুমায় আর আমরা ছয়টার গাড়ি নয়টায় ছাড়ি!
-আমাদের দেশের জনগণকে নতুন নিয়মে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে ঘুম থেকে ওঠে সূর্যের আলো না দেখা পর্যন্ত বিছানা ছাড়া যাবে না এমন অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে
- আর কি কি ত্যাগ করতে হবে শুনি?
-আপাতত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার জন্য যা যা প্রয়োজন
একমুহুর্ত কিছু একটা ভাবলো মহিলা তারপর হাত ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো স্বামীকে -বাড়ি চল, কেরোসিন লাগবেনা এখন থেকে অন্ধকারে থাকার অনুশীলন শুরু করব আমরা প্র্যাকটিস ম্যাকস এ ম্যান পারফেক্ট কারণ, বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহার করার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে তো!
লোকটা জবাবে যা বলল তা স্পস্ট শুনতে পেলনা ময়না কারণ ততক্ষনে ঝুপড়ি থেকে দূরত্ব অনেকটা বেড়ে গেছে দম্পতির ক্রমেই দৃস্টি থেকে তারা মিলিয়ে যাবার পর সম্বিত ফিরে পেলো সে ভাবল এসব জেনেইবা কী কাজ? ঘড়ির কাঁটা তার জীবনে প্রভাব ফেলেনা সে সুর্য্য দেখে ঘুম থেকে জাগে এবং সুর্য্যাস্ত দেখেই সন্ধ্যাবাতি জ্বালে

কোন মন্তব্য নেই: