বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৯, ২০১০

কাঁদতে কাঁদতে বুক ভাসালো সখিনা বুবু

শুকনো খড়িকাঠের জ্বালানি পেয়ে উসকে উঠল চুলার আগুন। সেই সাথে উসকে উঠল চাচীর ক্রোধ। চুলার পাড়ে বসে থাকা জহুর চাচার দিকে একবার দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেখল ময়না। নাহ, কোনোই বিকার নেই তার। মুখ নিচু করে সরিষাবাটা দিয়ে একের পর এক চিতই পিঠা খেয়েই চলছে। স্ত্রীর মনের ঝাঁজে বিচলিত হওয়া তো দুরের কথা, সরিষার ঝাঁজও কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না তার ওপর। অন্তত চেহারা দেখে তা-ই মনে হচ্ছে ময়নার কাছে। গনগনে আগুনের তাপে লাল হয়ে ওঠা মুখটি আরো লাল হতে লাগল চাচীর।
হাতে থালা নিয়ে চিতই পিঠা খেতে খেতে জহুর চাচাকে যতই দেখছে ততই অবাক হচ্ছে ময়না। চাচার এমন চুপচাপ বসে থাকাটা মোটেই ভালো লাগছে না তার। আজ হঠাৎ কী হলো যে বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে! বাড়ির সবাই তো ঠিকঠাকই আছ্ েকেউ মারা যায়নি। তা হলে কেনই বা সকালে কাঁদতে কাঁদতে বুক ভাসালো সখিনা বুবু! বুবুর কান্না দেখে বড়ই কষ্ট পেয়েছিল স্ েতা হলে কি মেয়ে কেঁদেছির বলেই জহুর চাচা কষ্ট পেয়েছে? ভেবে কোনো কিনারা করতে পারল না ময়না।
- আরেকটা পিডা(পিঠা) দেও সখিনার মা
- অর্ধসেদ্ধ একটা চিতই পিঠা বিপুল বিক্রমে তুলে দিতে দিতে ঝামটা দিয়ে উঠল চাচী
- খাও। খাওয়া ছাড়া আর কিছুতো পারবা না। কত কইরে কইলাম মাইয়াডারে গার্মেন্ট সে পড়ানোর কাম নাই। ঢাকা শহরে অহন বখাটে পোলারা বেসুমার ঘটনা ঘটাইতাছে।
কোনো কথা বলল না জহুর চাচা। অর্ধসেদ্ধ চিতই পিঠাটি আবার খোলায় রেখে অপেক্ষায় থাকল পূর্ণসেদ্ধ হওয়ার। উত্তর না পেয়ে এবার যেন ক্রোধে ফেটে পড়তে চাইল চাচী। হাতের ছেনিটা খসে পড়ে টুং করে শব্দ তুলল খোলার ওপর। এ শব্দ-ই ধ্যান ভাঙাল চাচার। তারপর যেন স্থির শিলাখন্ড ফেটে বজ্রের আওয়াজ বেরিয়ে এলো....
- আল্লাগো তুমি এই আমার উপরে জুলুম নাজিল করলা কেরে? আমি কী পাপ করছিলাম, আমার মাইয়া কী অন্যায় করেছিল? শিক্ষিত অইয়াও এই কাম কেমনে করল পোলাডা! আগে হুনতাম, ইস্কুল-কলেজে পড়লেই নাকি মানুষ অওয়ন (হওয়া) যায়। ময়নাও শুনেছে শিক্ষাই নাকি মানুষকে মানুষের মতো মানুষ করে তোলে। কিন্তু সখিনা বুবুর কান্নার সাথে তো এ কথার কোনো মিলই খুঁজে পাচ্ছে না ময়না। দেশেতো এখন অনেক লোকই পড়াশোনা করছে। তা হলে মানুষের এত অভাব কেন? ব্যাপারটা স্পষ্ট হওয়ার জন্য জহুর চাচার কথায় আরো মনযোগী হতে চেষ্টা করল ময়না। কিন্তু ততক্ষণে আবার উদাস হয়ে গেল চাচা। আর শুন্যে ঘুরপাক খেতে থাকা চাচীর চোখ থেকে এক ফে৭াটা পানি গড়িয়ে পড়ল চুলায় বসানো গরম খোলার ওপর। তারপর ময়নার চোখের সামনেই বাষ্প হয়ে উড়ে যেতে লাগল চিতই পিঠা পোড়ার ধোঁয়ার সাথে।

কোন মন্তব্য নেই: