বুধবার, আগস্ট ২৪, ২০১১

মিথ্যা ধরার মেশিন


তোতামিয়াকে চমকে দিয়ে হঠাৎ উদয় হলো নিরুদ্দেশ মন্তাজউদ্দিন কোনদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই হেটে যাচ্ছিলো দোকানের সামনে দিয়ে প্রায় একবছর পর অ™ভ’ত এ লোকটার দেখা মিলল ডেকে দু’চার কথা জিজ্ঞেস না করলেই নয়-
-এতদিন আছিলা কই?
-আমার কি আর ঠিক-ঠিকানা আছে? ওপরে আসমান, নিচে জমিন, মাঝখানে আমি সেইখানেই থাকি, যেইখানে রাখেন অন্তর্যামী
- আ রে ধূর, মারফতি কথা বাদ দেও বও দেহি, দুই-চাইরডা আলাপ করি
অনিচ্ছা সত্বেও বেঞ্চের এক কোনায় বসলো মন্তাজ উদ্দিন বসতে বসতেই চোখ পড়লো উইল্লা চোরার দিকে, অপর কোনায় বসে আছে মাথায় টুপি, পরনে পাঞ্জাবি, শুকনো মুখ কিন্তু চেহারায় পবিত্রতার ছাপ বিমুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে তার দিকে নিজের চোখকে একদম বিশ্বাস করাতে পারছে না মন্তাজউদ্দিন
- কিমুন আছুইন বাইছা (ভাইসাহেব)?
- বালা তোমার এই পরিবর্তন কেমনে?
কপালের চোখ মাথায় তোলে জিজ্ঞেস করলো মন্তাজ উদ্দিন
উইল্লা চোরা জবাব দেয়ার আগেই কথা কেড়ে নিলো তোতা মিয়া
- উইল্লা চোরা তো চুরি-চামারি করে না একবছর ধরে গত বছর রমজান মাসে তওবা কাটছিল
লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিলো উইল্লা চোরা গোঁফের নিচে হাসি লুকিয়ে রাখলো তোতা মিয়া আর একটু নড়েচড়ে বসে লজ্জাবনত উইল্লা চোরার চোখে সরাসরি চোখ রাখলো মন্তাজ উদ্দিন-
- তুমি হাছা কইতাছ নাকি, চুরি-চামারি একেবারে ছাইরা দিছ?
- এইসব লইয়া কেউ মিছা কয় নাকি? বলেই দাঁত কেলিয়ে সরল হাসি দিলো সে তারপর অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল বাকি দুইজন তবে দু’জনের হাসির আওয়াজ প্রায় সমান হলেও অর্থ একেবারে ভিন্ন তোতা মিয়া হেসেছে উইল্লা চোরার দাঁত কেলানো হাসি দেখে আর মন্তাজ উদ্দিন হেসেছে যে কারণে তা তাৎক্ষনিকভাবে অন্যদের বোঝার কথা নয় দু’জনের হাসির মাঝে আরেকটি পার্থক্য হলো- দু’জন হাসি শুরু করেছে একই সাথে কিন্তু তোতা মিয়ার হাসির রেশ শেষ হয়েছে অনেকে আগেই আর মন্তাজ উদ্দিন এখনো হেসে চলেছে হেসে চলেছে হেসেই চলেছে হাসতে হাসতে উইল্লা চোরাকে জিজ্ঞেস করলো-
এইসব লইয়া কেউ মিছা কয় না, না? তারপর আবারো হাসতে লাগল
মন্তাজ উদ্দিনের হাসি দেখে রীতিমতো ঘাবড়ে গেলো অন্যরা হাসতে হাসতে একবার কুঁজো হয়ে যায়, আবার পেছনে কাত হয়ে উল্টে যায় তবুও হাসি বন্ধ হওয়ার নাম নেই
- রোজা রাইখা এতো হাসো কেমনে?
তোতা মিয়ার প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে দ্বিরুক্তি করল মন্তাজ উদ্দিন- এইসব লইয়া কেউ মিছা কয় না, না?
তারপর একমুহুর্ত থামল এবং বলল, চুরি-চামারি কইরা কিছু হর্তা-কর্তারা দেশের মাটিসুদ্ধ গায়েব করতাছে আর মুখে কইতাছে দেশ প্রেমের কথা গোরস্থান, মসজিদ, ইস্কুলের টাকা মাইরা প্রকাশ্যে মিছা কইতাছে
- আ রে হাসি থামাইয়া কথা কও মন্তাজউদ্দিনের বেগতিক অবস্থা দেখে অনুরোধ করলো সন্ত্রস্ত উইল্লা চোরা
- কেরে, হাসি থামাইয়া কথা কইতাম কেরে? পাল্টা প্রশ্ন করলো মন্তাজ উদ্দিন কিন্তু পরক্ষণেই একরকম বেখাপ্পাভাবে দীর্ঘক্ষন চলতে থাকা হাসিটা থামিয়ে দিলো সে তারপর বললো, আমিতো তোর হাসির কথা হুইন্না হাসতাছি কিন্তু কেউ কেউ যে মানুষের বিপদে হাসে, মানুষরে বিপদে ফালাইয়া হাসে?
- মানুষের বিপদে হাসে? এমন মানুষও আছে নাকি?
- আছে রে আছে কেউ কেউ আছে সুখে-দুখে হাসে কারণে-অকারণে হাসে পথে-ঘাটে হাসে সড়ক দূর্ঘটনায় মানুষ মারা যায়, খবর শুনে হাসে রাস্তা খাল হয়ে বাস বন্ধ হয়ে যায়, তখনও হাসে ঈদে ঘরমুখি মানুষের ভোগান্তি দেখে হাসে খালি হাসে আর হাসে হাসে আর মিছা কথা কয়
- এত হাসে!
-হ্যা এত হাসে হাসে আর আকাশ পথ-পাতাল পথের স্বপ্ন দেখায় আর মানুষ স্বপ্ন দেখতে দেখতে তিনঘন্টার পথ ছয় ঘন্টা লাগিয়ে বাড়ি ফেরে অথচ গত তিন বছরে সড়ক উন্নয়ন ও রক্ষনাবেক্ষনে কুড়ি হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হইছে
চমকে ওঠে তোতা মিয়া কিছু একটা বলতে যায় কিন্তু ইশারা দিয়ে থামিয়ে দেয় মন্তাজ উদ্দিন
-কিছুদিন আগে ভারতের এক টেলিভিশন চ্যানেলে আজব একখানা মেশিন দেখছিলাম মিথ্যা ধরার মেশিন’
- মিথ্যা ধরার মেশিন! এইটা আবার কী?
- আছে, মিথ্যা ধরার মেশিন আছে এইটার আসল নাম হইলো ‘পলিগ্রাফ মেশিন’ এইটা মানুষের বুকে লাগাইতে অয় তারপর হৃদয়ের ধুকপুকানি গুইনা মেশিনটা কইয়া দিতে পারে কার কথা হাছা, আর কার কথা মিছা কার হাসি কালা, আর কার হাসি বালা (ভালো)
ওমা, ওমা! এমন মেশিন আছে নাকি! একেবারে রে-রে করে দোকানের সামনে চলে এলো ময়না এতক্ষণ কোথায় ছিলো কে জানে? হয়তো আড়ালে থেকে কথা শুনেছে এমন মেশিন ুথাকলে তো এবারের ঈদে জামা কেনার পরিবর্তে ওর একটা মিথ্যা ধরার মেশিনই দরকার কারণ এ দেশের হর্তা-কর্তাদের হাসি সাদা না কালো তার একটা পরীক্ষাতো নিতেই হয় তবে মিধ্যা ধরার মেশিন যে একেবারে সত্যি সত্যিই আছে তা কোনভাবে বিশ্বাস করলো না ময়না মন্তাজ উদ্দিন বোঝানোর চেস্টা করলো, তারপরও না

কোন মন্তব্য নেই: