রবিবার, অক্টোবর ১১, ২০০৯

হোজ্জ্বা কাহিনী

শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ

একবার হলো কি নাসিরুদ্দিন হোজ্জ্বাকে সবাই মিলে দাঁড় করিয়ে দিলো খুতবা দেয়ার জন্য। অথচ তিনি তেমন বক্তৃতা দিতে পারতেন না। মিম্বরে দাঁড়িয়ে কোনটা থেকে কোন কথা বলে ফেলেন, শেষতকে নাকি আবার লজ্জ্বায় পরতে হয়, এসব শংকাই কাজ করছিলো তার মনে। কিন্তু সবাই এমন করে ধরলো যে তাকে দাঁড়াতেই হলো। কিন্তু তিনিও কম যাননা। মনে মনে এঁটে নিলেন বিদঘুটে এক বুদ্ধি। প্রথমেই গলা খাঁকারি দিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন আমি এখন আপনাদের উদ্দেশ্যে কি বলবো তা কি আপনারা জানেন? সমস্বরে জবাব এলো, না আমরা জানিনা। তার পর তিনি কপট রাগ দেখিয়ে বললেন, আমি কি বলবো তা যদি আপনারা নাই জানেন তবে সেটা বলে আর লাভ নেই। তারপর সোজা বেরিয়ে গেলেন মসজিদের বাইরে। মুসল্লিরাতো হা-হুতাশ। এত কষ্ট করে হোজ্জ্বাকে ধরে এনেও তার মুখ থেকে বক্তৃতা বের করানো গেলোনা! কিন্তু সহজেই তারা ছেড়ে দিতে রাজি নন। এঁটে নিলেন নতুন এক ফন্দি। অন্য একদিন আবার হোজ্জ্বাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে বক্তৃতার জন্য দাঁড় করানো হলো মিম্বরে। তখনও তিনি সবার উদ্দেশ্যে আগের প্রশ্নটিই করলেন। উপস্থিত মুসল্লিরা এবার জবাব দিলেন, হ্যা আপনি কি বলবেন তা আমরা জানি। হোজ্জ্বা এবারও পেয়ে বসলেন সবাইকে। বললেন আপনারা যেহেতু জানেনই তবে আমার আর বলার কি প্রয়োজন। তারপর উপস্থিত সবার হা হয়ে যাওয়া মুখের সামনে দিয়েই বেরিয়ে গেলেন মসজিদ থেকে। কিন্তু তবু হাল ছাড়তে রাজি ছিলেননা তারা। ক্রমেই বুদ্ধি আঁটছিলেন কি করে কথার জালে আটকানো যায় হোজ্জ্বাকে। অবশেষে ঠিক করা হলো শেষবারের মতো আরো একবার চেস্টা করে দেখা যাক। বুদ্ধির বাকসো ওই বেটা হোজ্জ্বার দৌর কতটুকু তা তাদের দেখে নিতে হবেই। আগের মতোই আবার তাকে টেনে আনা হলো মিম্বরে। এবারও ঠিক আগের প্রশ্নটিই করলেন তিনি। মুসল্লিরা এর জবাব আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন। তাদের অর্ধেক লোক উত্তর দিলেন, হ্যা আপনি কি বলবেন তা আমরা জানি। আর বাকি অর্ধেক বললেন, না আমরা জানিনা। তারপর সবাই তাকিয়ে থাকলেন হোজ্জ্বার মুখের দিকে। ভাবলেন এবার নিশ্চয়ই কোন চালাকি করতে পারবেননা তিনি। চালাক হোজ্জ্বাকে ফাঁসানো গেলো ভেবে সবার মুখে ফুটে উঠলো তৃপ্তির হাসি। কিন্তু না হোজ্জ্বা কি এত সহজে হেরে যাবার পত্র নাকি! মুখ খুললেন তিনি। ধীরে ধীরে সবার উদ্দেশ্যে বললেন, আমি আজ কি বলব এ কথাটি যারা জানেন, তারা দয়া করে বুঝিয়ে দিন যারা জানেননা তাদেরকে। বলেই আর দেরি করলেন না দ্রুত নেমে গেলেন মিম্বর ছেড়ে।
গল্পের শেষ এখানেই। কিন্তু গল্পের নায়ক নাসিরুদ্দিন হোজ্জ্বা যে এখানে বুদ্ধিমত্ত্বার পরিচয় দিয়েছেন তা কিন্তু একদম বুঝার বাকি নেই আমাদের। আর কেনইবা বুঝবোনা, সেই কবে থেকে হোজ্জ্বার সাথে আমাদের পরিচয়! দাদুর কাছে চুপি চুপি কত্তো শুনেছি হোজ্জ্বার গল্প, শুনেছি গুরুজনদের কাছে, কাসের পড়া ফাঁকি দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে কত্তো পড়েছি হোজ্জ্বা সংগ্রহ! আর হোজ্জ্বা মানেইতো হাসতে হাসতে একেবারে গড়াগড়ি অবস্থা। হ্যা নাসিরুদ্দিন হোজ্জ্বা ছিলেন সত্যিই একজন রহস্য পুরুষ। রাহস্যপুরুষ বলছি এ কারণে যে তাকে কখনো আমরা চিনেছি চালাক ও তীক্ষ্ম বুদ্ধিসম্পন্ন হোজ্জ্বা হিসাবে আবার কখনো চিনেছি বোকা হোজ্জ্বা হিসাবে। কোন কোন কাহিনীতে তাকে আমরা দেখি যৌক্তিক ভ’মিকায়, কোনটিতে অযৌক্তিক ভ’মিকায়। কোনটিতে দেখি স্বাভাবিক আবার কোনটিতে তার ভ’মিকা থাকে একেবারেই অস্বাভাবিক। কোনটিতে বুদ্ধিসম্মন্ন একজন প্রগাঢ় হোজ্জ্বার চরিত্র ফুটে উঠে, আবার কোনটিতে তিনি থাকেন একেবারে গো-বেচারা বোকার ভ’মিকায়। উপরে চালাক নাসিরুদ্দিন হোজ্জ্বার পরিচয়তো পেলামই, এবার বোকা হোজ্জ্বার একটি পরিচয় পেলেই তার রহস্যময় চরিত্রটি আরো খোলাসা হয়ে ধরা দেবে।
http://www.english-for-students.com/images/HodjasDonkey.gif
কোন এক রমজান মাসের আগে সবার মাঝে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে রোযা রাখার জন্য। কিন্তু প্রতি রমজানেই রোযা রাখতে বেশ কষ্ট হয় হোজ্জ্বার। তাই এবার ঠিক করলেন যে, রোযা রাখবেন না। কিন্তু সমস্যা হলো রোযা না রাখলে লোকজনতো তাকে মন্দ বলবে। তাই কি করা যায, কি করা যায়, চিন্তাভাবনা করে বুদ্ধি ঠিক করলেন যে সবার সামনে তিনি রোযা রাখার ভান করবেন। আর চুপি চুপি ঠিকই খেয়ে নেবেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও দেখা দিলো আরেক সমস্যা। কেউ যদি হঠাৎ তার কাছে জানতে চায় যে আজ কততম রোযা, তখন তিনি কি বলবেন? নিজে রোজা না রাখলেতো সঠিক হিসাবও দিতে পারবেন না। তছাড়া তখনতো আর ক্যালেন্ডারও ছিলোনা। অবশেষে হোজ্জ্বা ঠিক করলেন যে, যত রোযা যাবে তিনি ততটি পাথর একটা বাক্সে জমা করে রাখবেন। অর্থাৎ প্রতিদিন বক্সে একটা একটা করে পথর জমা হবে। কেউ জিজ্ঞেস করলে পথরগুলো গুণে বলে দেয়া যাবে আজ কততম রোজা। তিনি ভাবলেন তার এই চালাকি কেউ ধরতে পারবেনা। কিন্তু সব প্ল্যান কি আর সব সময় সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়! এর মাঝেও লেগে গেলো গন্ডগোল। তার স্ত্রী খেয়াল করলেন যে হোজ্জ্বা প্রতিদিন একটি বাক্সে পাথর রাখছেন। স্বামিভক্ত স্ত্রী ভাবলেন নিশ্চয়ই হোজ্জ্বা কোন মহান কাজ করছেন। তাই তাকেও প্রতিদিন একটি করে পাথর এই বাক্সে রাখতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। অবশেষে বাক্সে পাথর রাখার দলে সামিল হলো তার ছেলে এবং মেয়েও। মোটকথা তারা সবাই বিপুল বিক্রমে পাথর জমাতে শুরু করল। এদিকে কি ঘটছে এসবের কিছুই কিন্তু হোজ্জ্বা জানেননা। বিপত্তিটা ঘটলো সেদিনই, এক ফাজিল প্রতিবেশি হোজ্জ্বাকে হঠাৎ জিজ্ঞেস করে বসলো যে, এখন পর্যন্ত কয়টা রোযা গেলো? অতিচালাক হোজ্জ্বা বললেন, "দাঁড়াও একটু অপেক্ষা করো, আমি আসছি"। তারপর তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে বাক্স খুলে পাথর গোনা শুরু করলেন তিনি। কিন্তু তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো, যখন পাথরের সংখ্যা দাঁড়াল মোট ৯৬ টিতে। ভাবলেন এই কয়দিনেতো এত্তো পাথর হওয়ার কথা না। আবার নিজের হাতে যা গুণলেন তাও তো সত্যি। এসব সাত পাঁচ ভেবে তিনি ভাবলেন রোজার সংখ্যা কিছুটা কমিয়ে বলাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। অবশেষে প্রতিবেশির সামনে এসে তিনি বিপুল বিক্রমে জানিয়ে দিলেন যে ইতিমধ্যেই ৫৩ টি রোজা চলে গিয়েছে। প্রতিবেশিতো তাকে পাগল ঠাওরে নিয়ে বললেন "যান কি যা-তা বলছেন, এতো হতেই পারেনা!"। কি এতো বড়ো অপমান ভেবে গর্জে উঠলেন হোজ্জ্বা, "চোপরাও! আমি তো তাও কমই বলেছি, পাথর গুনলে তো আরো বেশিই পেতে"।
বোকা বা চালাক যাই হোকনা কেন রহস্যময় হোজ্জ্বার প্রচলিত এসব কাহিনীগুলো যেমনভাবে আমাদের হাসির খোড়াক তেমনি এসবের প্রায় সবগুলোতেই লুকিয়ে রয়েছে নীতি-নৈতিকতা কিংবা শিক্ষনীয় বিষয়। কৌতুহল জাগা স্বাভাবিক যে, কিভাবে সৃস্টি হয়েছিলো এসব কাহিনীর? এ প্রশ্নের জবাব স্পস্ট করে এখন পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি। অনেকে অনুমান করছেন তার চরিত্রই ছিলো এরকম উদ্ভট, আবার অনেকের ধারণা মানুষ যেন হাসি-আনন্দের সাথে সাথে খুঁজে নিতে পারে শিক্ষার উপাদান তাই নিজের নামে তিনি তৈরি করেছেন এমন গল্পকথা। সে যাই হোক হোজ্জ্বা চরিত্র আমাদেরকে আনন্দ দিতে পেরেছে বলেইতো ছোট নেই বড় নেই সবাই আমরা তার সাথে পরিচিত। শুধু তাই নয় অবাক বিষয় হলো মধ্যপ্রাচ্য থেকে হোজ্জ্বা কাহিনীর সৃস্টি হলেও কালের বিবর্তনে হাসি-আনন্দের হিল্লোলে তা স্পর্শ করে গেছে সারা বিশ্বকে। আর এগুলোর শিক্ষনীয় ছিলো বলেই স্থায়িত্ব পেয়েছে এতকাল। শুরুতে উল্লেখিত গল্পটির শিক্ষনিয় বিষয় হলো বুদ্ধি থাকলে যে কোন পরিস্থিতিই সামাল দেয়া যায়। আর দ্বিতীয় গল্পটির দ্বারা আমরা বুঝতে পেরেছি, আসলে ফাঁকি দেয়ার চেস্টা কখনো সফল হয়না। তাই এ চেস্টা করা উচিত নয়। রোজা না রাখলে আল্লাহর কাছেতো জবাবদিহীতা রয়েছেই, সেই সাথে কোন না কোনভাবে মানুষের সামনেও তা প্রকাশ পেয়ে যাবে। হোজ্জ্বার এমন কিছু কাহিনী রয়েছে যেগুলো কেবলমাত্র কৌতুক হিসাবেই ধরা হয়। যেমন: একদিন হোজ্জ্বা নদীর তিরে বসে আছেন। তখন অপর পার থেকে এক লোক চিৎকার করে তাকে জিজ্ঞেস করলো, আমি কিভাবে নদীর ঐপার যাবো একটু বলে দিবেন কি? হোজ্জ্বা এর জবাবে বললেন, তুমি নদীর ঐপারেই আছো। শিক্ষনীয় এবং মজাদার এসব গল্পের সৃস্টি যেভাবেই হোকনা কেন বর্তমানে এগুলোর কোনটিতে হোজ্জ্বা উপস্থাপিত হয়েছেন প্রগাঢ় হিসাবে কোনটিতে বোকার ভ’মিকায়। আবার দেখা গেছে তিনি কখনো শাসকের বিরুদ্ধে কথা বলতেও ভয় পেতেননা। রাজসভা বা যে কোন অনুষ্ঠানে প্রবল বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে তিনি হার মানিয়ে দিতেন বাদশাহকেও। মোটকথা বর্তমানে হোজ্জ্বার উপস্থাপন রয়েছে নানা আঙ্গিকে। কিছু রয়েছে আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য সমন্বিত বর্ণনার মাধ্যমে। আবার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠিত গল্প, কবিতা ও বিভিন্ন ধারণার উপর।
প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে প্রচলিত রয়েছে নাসিরুদ্দিন হোজ্জ্বার বিভিন্ন কাহিনী। ইতিহাসের মজার এই চরিত্র হাসি আনন্দ মিশ্রিত ভালোলাগার এক আবেশ। নাসিরুদ্দিন হোজ্জ্বা নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে বুদ্ধিদীপ্ত কিন্তু কৌতুকমিশ্রিত এক চেহারা। অনেকটা কল্পিত এ চেহারার অধিকারীর মাথায় বিশাল এক পাগড়ি, তিনি চড়ে বেড়াচ্ছেন গাধার পিঠে করে। অথচ এ চরিত্রটি আসলেই কি বাস্তব, আর বাস্তব হলেও ঠিক কোন সময়টা ছিলো হোজ্জ্বার সময়কাল, কোথায় তার জন্ম এসব প্রশ্নের জবাব আমরা কয়জনইবা খুঁজতে যাই! হ্যা নাসিরুদ্দিন হোজ্জ্বা নামে সত্যি সত্যিই একজন ছিলেন। ঐতিহাসিক এই চরিত্রের জন্ম মেসোপটেমিয়ার প্রাচীন এনাতোলিয়াতে। প্রাচীন মেসোপটেমিয়া সভ্যতার দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে এর অবস্থান। তিনি ১২০৯ সালে বর্তমান সিভরিহিসার জেলার হরতু গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সিভরিহিসার বর্তমান তুরস্কের একটি প্রদেশ। জন্মের পর থেকে কিছুদিন এ গ্রামেই ছিলো তার বসবাস। পরবর্তীতে তিনি আকসেহিরে চলে যান। তার শেষ জীবণ কাটে তুরস্কের প্রাচীন নগরী কোনিয়াতে। এ কোনিয়া নগরী থেকেই সৃস্টি হয় হোজ্জ্বার যতসব কাহিনী। অবশেষে তাঁর মৃত্যুও হয় এখানেই। ধারণা করা হয় তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন ১২৭৫ সালে।
http://englishcafecdn.englishcafe.com/files/images/ec_13203_1250540215.post.jpg
আমরা হোজ্জ্বার গল্প ও কাহিনীগুলোর সাথে পরিচিত হয়েছি আমাদের আগের প্রজন্মের কাছ থেকে শুনে, বই পড়ে এবং বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে। তবে মূলত প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাঁধে ভর করেই হোজ্জ্বার পরিচয় ঘটেছে আমাদের সাথে। সময়ের যাত্রায় অনেক কিছুই পরিবর্তনশীল। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয় সংস্কৃতি, সাহিত্য, জীবণপ্রণালী, লোক কথা, উপকথা প্রভৃতি। তেমনি তের শতকের চরিত্র নাসিরউদ্দিন হোজ্জ্বার সাথে এখন আমরা যেভাবে পরিচিত হচ্ছি, তিনি হয়তো ঠিক তেমন ছিলেননা। তবে প্রচলিত ধারণাগুলোর চাইতে যে একেবারে ব্যতিক্রম ছিলেন তাও নয়। একটু যে পরিবর্তিত, পরিবর্জিত বা পরিবর্ধিত হয়েছে তাও সময়ের স্বাভাবিক হিসাবেই। তার গল্প কাহিনীগুলো বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে যাওয়ায় এগুলোকে উপস্থাপন করা হয়েছে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে। আর এ কারণেই বিভিন্ন সময় হোজ্জার কাহিনীর সাথে হয়েছে নানা সংযোজন বিয়োজন। বিভিন্ন ভাষায় এসব কাহিনীগুলো অনুবাদ হওয়ায় কোন কোন এলাকায় হোজ্জ্বার মতো স্বতন্ত্র চরিত্রেরও তৈরি হয়ে গেছে। অনেক এলাকায় নাসিরুদ্দীন পরিণত হয়েছে সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশে। এসব কারণেই হোজ্জ্বা একেক এলাকায় একেক নামে পরিচিত। নাসিরুদ্দিন হোজ্জ্বা নামে তিনি তার বসবাসের এলাকা তুরস্কে, বসনিয়ান এবং আমাদের বাংলাভাষাবাসিদের কাছে পরিচিত। কুর্দীদের কাছে তিনি মোল্লা নাসিরুদ্দীন। আরব এবং পারসিয়ানদের কাছেও তাই। আলবেনিয়ায় তাকে ডাকা হয় নাস্ট্রাদিন হোক্সা কিংবা শুধুমাত্র নাস্ট্রাদিনী নামে। আজেরীদের কাছে মোল্লা নাসিরুদ্দীন। উজবেকদের কাছে নাসিরুদ্দীন অফেন্দী অথবা শুধুমাত্র অফেন্দী নামে তাঁর পরিচয়। এসব এলাকা ছাড়াও তার কাহিনী-উপকাহিনীগুলো আরমেনিয়ান, বুলগেরিয়ান, গ্রীক, হিন্দি, ইতালিয়ান, পশতু, রুমানিয়ান, সারবিয়ান, উর্দু, বুলগেরিয়া প্রভৃতি লোক ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে। এসব এলাকায় অনেক ক্ষেত্রে তিনি তার প্রজ্ঞা এবং বিচারিক ক্ষমতার জন্য বেশ জনপ্রিয়। আবার চীনেও তিনি অফেন্দি নাসিরুদ্দিন নামে পরিচিত। বর্তমান চীনে তাকে নিয়ে বিভিন্ন রকমের মুভি, কার্টুন এবং উপন্যাসও রচিত হয়েছে। সময়ের সাথে সংস্কৃতি পরিবর্তিত হলেও কিংবদন্তী নাসিরুদ্দিন হোজ্জ্বার প্রবাহ স্তিমিত হওয়ার নয়। বরং তা আরো বিস্তার লাভ করছে প্রযুক্তির কল্যাণে। প্রযুক্তি ও প্রজন্মের কাঁধে ভর করে এভাবেই মানুষের কানে কানে বেঁচে থাকবে হোজ্জ্বা কাহিনী।

কোন মন্তব্য নেই: