সোমবার, জুন ২১, ২০১০

ভিনদেশি পতাকায় সয়লাব বাংলাদেশ

‘ছলাৎ’ করে একটি শব্দ হলো মাত্র। সাথে সাথে কাঁদা-পানিতে একাকার হয়ে গেল ময়না। কিছু বুঝে উঠার আগেই লক্ষ করল তার ঠিক সামনে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে একটি ফুটবল। আর সেটা নেয়ার জন্য দ্রুত এগিয়ে আসছে এক দল পুঁচকে ছেলে। ওরা ভালোভাবেই জানে যে ময়নার কাছে একবার বল আটক হলে ফেরত পাওয়া সহজ নয়।
এ দিকে ময়নার মেজাজ দেখে কে! মনে হলো গোটা প্রকৃতিই যেন টিটকিরি করছে ওর সাথে। ঘাসের ফাঁকে জমে থাকা পানিতে সূর্যের খাড়া রশ্মি পড়ে চিকচিক করছে। কিন্তু ওর মনে হলো এই পানিও বুঝি চিকচিকে দাঁত বের করে হেয়ালি করছে। আর দেরি করল না ময়না। ফুট বলটা পুঁচকেদের আয়ত্তে চলে যায় যায়, এমন সময় ছুঁ মেরে নিয়ে নিল।
-হ্যাই পোলাপাইন, চ্যাপচ্যাইপ্পা পানি (জমে থাকা পানি) ছাড়া খেলনের আর যাইগা নেই?
আচমকা ধমকে ভয় পেয়ে গেল ওরা। হাত কাঁচুমাচু করে মাটির মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইল সবাই। ওদের পায়ের আঙুল থেকে মাথার চুল পর্যন্ত ঢাকা পড়েছে কাঁদায়। চাপচাপ কাঁদার ভারে চোখের পাতা পর্যন্ত মেলতে পারছে না কয়েকজন। আর যারা পাড়ছে তাদের চোখের ভাষায় ফুটে উঠছে ফুটবলটি ফেরত পাওয়ার আকুলি বিকুলি। মুখ ফুটে বলার সাহস নেই, ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে তবু। পরনে হাফপ্যান্ট থাক বা না থাক, প্রায় সবার কপালেই আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকার মতো ফিতা বাঁধা রয়েছে। ব্যাপারটা গোচরে আসার পর ফুটবলটাকে নিজের সাথে আরো সেঁটে নিলো কাঁদা-পানিতে কিম্ভুত ময়না। তারপর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল ন্যাংটা ছেলেদের কপালে কপালে। নাহ্! আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল ছাড়া অন্য কোনো দেশের পতাকাই নেই। অবশ্য থাকলেও চিনতে পারত না একমাত্র লাল সবুজ পতাকাটি ছাড়া। কিছুটা অবাকই হলো সে। ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে বাড়িতে বাড়িতে, দোকানে দোকানে পতাকা উড়ছে, কিন্তু কোথাও বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা চোখে পড়ছে না। অথচ খাতার পুরো পৃষ্ঠাজুড়ে সবুজ জমিনে লাল বৃত্ত এঁকে একটি পতাকা বানিয়েছিল সে। আহলাদ করে সেঁটেও রেখেছে দোকানের বেড়ায়।
-ভিইজা এইত্তো গেছগা ময়না বুবু, আমরার লগে খেলাত নাইম্যা পর। আমরা বিশ্বকাপ খেলতাছি
একজন একটু এগিয়ে এসে সাহস করে কথাটা বলল। তারপর আবার চলে গেল নিরাপদ দূরত্বে। কিন্তু খেলার আমন্ত্রণ পেয়ে যে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে ময়না, এতটা ভাবেনি ওরা।
-তুমি কোন পক্ষে আর্জেন্টিনা না ব্রাজিল?
-আমি বাংলাদেশের পক্ষে
ঠিক বুঝে উঠতে পারল না ওরা। বুঝার খুব একটা প্রয়োজনও মনে করল না। হই হই করে নেমে গেল মাঠে। কাঁদা-পানিতে আলোড়ন তুলে আবার শুরু হেয়ে গেল ফুটবল বিশ্বকাপ। আর ছোট্ট ফুটবলটি ঘুরতে লাগল আর্জেন্টিনা থেকে ব্রাজিল, ব্রাজিল থেকে আর্জেন্টিনা কিংবা স্বপ্নচারি বাংলাদেশের পায়ে পায়ে।

কোন মন্তব্য নেই: