সোমবার, এপ্রিল ২৭, ২০০৯

অবারিত আকাশ


সামনে অবারিত আকাশ

রবিবার, এপ্রিল ২৬, ২০০৯

তলিয়ে যান সুখনিদ্রায়


শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ:

ঘুম! চোখের পাতা আর মেলে রাখা যায়না। ক্রমশ মাথা থেকে দূর হয়ে যেতে থাকে পৃথিবীর ভাবনা। নিভতে নিভতে এক হয়ে যায় পাতা। তখন পৃথিবীর আলো আর ভাবনা থেকে অনেক দূরে অন্য এক জগতে। সেখানে শুধূই প্রশান্তি আর তৃপ্তি। আমরা অনেকেই বুঝতেও পারিনা এ তৃপ্তির উপরই কতটা নির্ভর করে আমাদের শরীর, স্বাস্থ ও মনন। সুখনিদ্রায় তলিয়ে যেতে না পারলে সারাটা দিন-ই কেটে যায় অস্ব¯িÍ অতৃপ্তির সাথে। অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাসের কারণেই পুরো দিন কাটে অবসাদ এবং ঘোরের মধ্য দিয়ে। হারিয়ে যায় সময়ের ছন্দ। ঘুম প্রভাব ফেলে দৈনন্দিন রুটিনে এবং রুটিন প্রভাব ফেলে ঘুমে। যাদের রয়েছে অনিদ্রা রোগ, যাদের দু’চোখের পাতা এক করার জন্য নিয়মিত খেতে হয় ঘুমের বড়ি তাদের যন্ত্রণা কেবল তারাই অনুধাবন করতে পারেন। সে কারণেই সুস্থতার জন্য প্রয়োজন একটি রুটিন করে নেয়া। ঘুম ও কাজের জন্য বেঁধে দিন নির্দিস্ট সময় এবং এর ছন্দ রেখে চলার চেস্টা করুন ঘড়ির কাটার সাথে ।

প্রতিদিন একই সময় বিছানা ছাড়ুন
প্রতিদিন একই সময়ে বিছানা ছাড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এ অভ্যাসের কারণেই নিরবচ্ছিন্ন প্রশান্তিময় রাতের ঘুমের শেষে শুরু হতে পারে সুন্দর একটি সকাল। আপনার মনের মতো করে সাজানো শয়নকÿটিতে মনোরম পরিবেশের পাশাপাশি এমন ব্যবস্থা রাখবেন যেন আলোর আনাগোনা সহজ হয়। সকালের কোমল আলো ঘরে প্রবেশ করে যখন চোখের পাতায় আলতু স্পর্শ করে যাবে আর গাইবে ঘুমভাঙ্গানির গাণ তখনি মিটমিট করে চোখ মেলুন। সাথে সাথেই সে আলো আপনার চেতনাকে ছুঁয়ে যাবে। স্বক্রীয় করবে চিন্তা এবং অনুভ‚তিকে।
‘ইউসিএল এ ¯িøপ ডিজর্ডারস সেন্টার’ এর পরিচালক ড. ফ্রীসকা এল ইয়ান-গু বলেছেন ‘সূর্যলোক ম¯িÍষ্ককে কার্যÿম করে তোলে’। সে বিবেচনায় প্রয়োজন প্রথম সূর্যালোকের সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিদিন একই সময়ে বিছানা ছাড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। তাহলেই প্রতিটি কাজ এবং রাতের ঘুম হবে স্বাস্থসম্মতভাবে।

মনের ভারসাম্য
আনন্দ, সুখ, বেদনার অনুভ‚তিগুলো মনের ভেতর প্রবাহিত হয় তরঙ্গের মতো। আর সে কারণেই কখনো উৎফুলø, কখনো মেঘাচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে মানুষের মন। নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে মনের পরস্পর বিপরীত এ দুটি অবস্থার মাঝে দূরত্ব কমিয়ে আনা যায় ভারসাম্য।
সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর বিছানায় বসে থাকবেন দশ মিনিট। এ দশ মিনিট আপনি বরাদ্দ করে রাখুন প্রতিটি দিনের জন্য। সে সময়টাতে সোজা হয়ে বসবেন বিছানার উপর। তারপর চোখ দুটি বন্ধ করুন এবং আপনার সুন্দর জীবণের জন্য আলøাহর কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করুন। সেই সাথে নিজের মাঝে একটি সুখানুভ‚তি জাগ্রত করুন। আপনার এ সময়ের কৃতজ্ঞতা এবং নির্মল সূখানুভ‚তিটুকুই প্রশান্তিময় সারাদিনের উৎস।
এরপর বিছানা ছাড়–ন এবং প্রাত কাজগুলো একে একে সারতে থাকুন। এ সময়টুকুকে আপনি মনে করবেন ‘বুটিং পিরিয়ড’। অর্থাৎ গুছিয়ে নেয়ার সময়। এ সময় গুছিয়ে নেবেন নিজেকে। স্মরণ করার চেস্টা করবেন আজকের দিনে যে কাজগুলো করতে হবে সেগুলোর কথা। বিশৃঙ্খল ম¯িÍষ্ককে থরে থরে সাজিয়ে একটি শৃঙ্খলার মাঝে নিয়ে আসুন। আপনার গুছিয়ে নেয়ার জন্য ঘড়ির কাটা যতটুকু সময় বরাদ্দ করেছিল তা শেষ হওয়া মাত্রই নেমে যান কাজে। যদি পারা যায় ঘর থেকে বেরুনোর সময় সুগন্ধি ব্যবহার করুন। এতে আপনার মাঝে চলে আসবে ফুরফুরে ভাব।
প্রশান্তির ঘুম এবং সুন্দর সকালের পর পেশাগত কাজে সূর্য যখন গড়িয়ে যাবে দুপুরে ততÿন বেশ ভাল মেজাজেই থাকবেন আপনি। এতটুকু অবসাদ ঘিরে ধরবেনা।
মনের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য চাই মনকে সবসময় প্রফুলø রাখা। সকল ÿেত্রে সেটা সম্ভব না হলেও চেস্টাতো করতে হবে। সে চেস্টাগুলোর মাঝে একটি হলো কোন দুশ্চিন্তা তৈরি করতে পারে এমন সবকিছু এড়িয়ে চলা। বিশেষ করে খুন এবং জখমের অপরাধ সংক্রান্ত খবরের প্রতি অতিরিক্ত কৌতুহল রাখবেন না। যাদের সাথে আপনার বনিবনা হয় তাদের সাথেই সময় বেশি কাটান। এমনকি খেলাধূলা করার জন্যও বন্ধুদের সঙ্গ আগে বাছাই করুন।

খাবার এবং বিশ্রাম
মানসিক প্রশা¯িÍ আর সুখনিদ্রা অনেকটাই নির্ভরশীল আপনার খাবারের তালিকা এবং সময়ের উপর। অবশ্যই আপনাকে সচেতন হতে হবে তিনবেলা খাবারের সময়ের ব্যাপারে। লÿ্য রাখতে হবে যা খাচ্ছেন তা স্বাস্থসম্মত এবং আপনার উপযোগি কিনা। আপনি কর্মজীবী হলে সকালের খাবার তালিকায় এমন কিছু উপাদান রাখবেন যেন এ থেকে সারা দিনের জন্য শক্তি সঞ্চয় করে নিতে পারেন। আপনার কাজ এবং কাজের অবস্থানের উপর নির্ভর করবে দুপুরের খাবার। কর্মÿেত্রে দুপুরের খাবার খেতে হলে খেয়াল রাখবেন তা যেন অতিভোজন হয়ে না যায়। তুলনামুলক হালকা খাওয়ার চেস্টা করবেন। যদি সুযোগ থাকে দুপুরে খাবার পর অল্প সময়ের জন্য বিশ্রামে যেতে পারেন। সকাল থেকে দূপুর পর্যন্ত যতটুকু কান্তি ভর করেছিল ত্রিশ মিনিটের সে বিশ্রামটুকু ঝেরে ফেলে দিতে পারে সব। হ্যা ঘুমের জন্য আপনার সময়ের বরাদ্দ কম হলেও এর সবটুকুই কাটাবেন কেবল ঘুমিয়ে। প্রথম দিকে এটি অসম্ভব মনে হলেও পরবর্তীতে অভ্য¯Í হয়ে যাবেন। আপনি ইশারা দেবেন আর অমনি ঘুম পাড়ানি মাসিপিসি এসে আপনাকে তুলে নিয়ে যাবে। তবে দুপুরের ঘুমের পূর্বমুহুর্তে অবশ্যই চেস্টা করবেন অন্যসব চিন্তুা মাথা থেকে সরিয়ে রাখতে। পরিবেশ নিযে আসুন আপনার অনুকুলে। ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রগুলোর জ্বালাতন এড়াতে গুছিয়ে নিন এগুলোকে। মোবাইল ফোনটি বন্ধ বা নিঃশব্দ করে রাখুন। ই-মেইলের ইনস্টেন্ট নোটিফিকেশন অফ করুন, রেডিও এবং টিভি বন্ধ রাখুন। তারপর ঘরের আলো নিভিয়ে দিন। আবছা অন্ধকার আর শান্ত পরিবেশই বলে দেবে এখন আপনার ঘুমের সময়।
আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে আপনার ম¯িÍষ্কের সময় সচেতনতার ÿমতা। ম¯িÍষ্ক ঘড়িকে এমনভাবে অভ্য¯Í করে তুলুন যেন যখন আপনার জেগে উঠতে হবে তখনি যেন ঘুম ভাঙ্গানোর সঙ্কেত দিতে থাকে। দেখবেন ঘড়ির কাটায় কাটায় ঘুম থেকে জেগে উঠেছেন আর এ অভ্যাসের কারণেই সময়ের কাজ সময়ে করে ফেলতে পারছেন। আর অলসতা করে হাতের কাজ ফেলে রাখা উচিত নয়। এমনটি করলে তা প্রভাব ফেলবে রাতের ঘুমের উপর। এলোমেলো কাজের জন্য ঘরে ফিরতে দেরি হবে আপনার। সেই সাথে বিছানায় যেতেও পারবেন না সঠিক সময়ে। আর কাজ বাকি রেখে বিছানায় গেলেও মানসিক অস্থিরতা ব্যাঘাত ঘটাবে ঘুমের। মনে রাখবেন সমগ্র চক্রের কোথাও ছন্দ পতন হলে তা কেবল হতেই থাকবে। কাজের মাঝেই খুঁজে নেন জীবণ।

নিজের দিকে দৃস্টি দিন
কাজ এবং উৎফুলøতা এ দুটোর সমন্বয়ের জন্য যথাযথ ঘুম জরুরি আর ঘুমের জন্য প্রয়োজন মানসিক স্বাচ্ছন্দবোধ। সুস্থতা এবং স্বাচ্ছন্দের জন্য অবশ্যই এগিয়েই থাকতে হবে আপনাকে। মনে রাখতে হবে, ঘুম হল স্বাস্থ এবং সুখের জন্য জরুরি। অবাঞ্চিত কোন শব্দ যদি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় বলে আপনার মনে হয় তবে দ্রæত এর সমাধান করে ফেলুন। আপনার সঙ্গীর আচরণ কিংবা বিরক্তিকর শব্দে ঘুমের সমস্যা হলে তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। এতেও ফল না হলে আলাদা কÿের ব্যবস্থা করুন।
একান্ত নিজের প্রশান্তির জন্যই আপনার প্রয়োজন নিদ্রাবান্ধব একটি শয়নকÿ। আর এ কÿটিকে সাজানোর ব্যাপারে পরিচয় দিতে হবে নিজস্ব রুচির। সচেতন থাকতে হবে এর আসবাবসহ পরিবেশের উপর। আসবাবপত্র কেনার জন্য আপনি কখনো সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগবেননা। নিজের সিদ্ধান্তকেই গুরুত্ব দিন বেশি। যখন কÿটিকে সাজানোর মনস্থির করবেন এরপর অন্তত ত্রিশ দিন ভাবুন এর অঙ্গসজ্জার ব্যাপারে। পরামর্শ করুন সঙ্গির সাথে। তারপর যেসব আসবাবে আপনাদের স্বাচ্ছন্দ হবে বলে মনে হয় সেগুলোই কিনে আনবেন। তবেই নিজের পছন্দে রুচিসম্মতভাবে সাজিয়ে তোলা কÿটিতে প্রতিদিন নিশ্চিন্তে হারিয়ে যেতে পারবেন সুখনিদ্রার অতলে।

হাতে রাখুন একান্ত সময়
বেশিরভাগ ÿেত্রেই দেখা যায় ঘুমের আগের সময়টুকুতে একেকজন ব্য¯Í থাকেন একেক কাজে। বিশেষ করে মহিলাদের মাঝে এ প্রবণতাটা একটু বেশি। পৃথিবীব্যাপী মহিলাদের অনিদ্রা রোগের কারণ নিয়ে ২০০৭ সালে একটি সংস্থার গবেষণায় দেখা যায় ঘুমানোর পূর্বের ১ ঘন্টা তারা কাটান বিভিন্ন ব্য¯Íতার মধ্য দিয়ে। কেউ গ্রহস্থালী কাজে, কেউ বাচ্চাকাচ্চাদের সামলানোতে, কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কেউ ইন্টারনেট ব্রাউজিংএ সময় কাটিয়ে বিছানায় যান। আর এসবের প্রভাব মাথায় থেকে যায় এবং নানা চিন্তা ভীর করে দূরে সরিয়ে রাখে ঘুমকে। ঘন্টার পর ঘন্টা দু’চোখের পাতা বন্ধ রেখেও চেতনাকে বিলিন করতে পারেন না ঘুমের দেশে।
নিজের জন্য কিছু সময় বরাদ্দ রাখুন ঘুমাতে যাবার আগে। সম্ভব হলে সে সময়ের ব্যাপ্তিটা হবে এক ঘন্টা বা এর কাছাকাছি। এ সময়টকু একান্তই আপনি কাটাবেন নিজেকে দম দেয়ার জন্য। ঘড়িতে যেমন করে দম দেয়া হয় পরবর্তীতে সঠিক সময় নির্দেশ করতে, তেমনি আপনি এই সময়টুকুর মধ্যে পরিকল্পনা তৈরি করবেন আগামীকালের। ভাববেন আজকের স্বাপেÿে আগামীকাল কি কি করা উচিৎ। সমালোচনা করবেন আজকের কাজগুলোর এবং একটি পরিসংখ্যান দাঁড় করাবেন সঠিক-বেঠিকের । তারপর নিদ্রায় তলিয়ে যাবার পূর্বমুহুর্তে ম¯িÍষ্ক ঘড়িতে সঙ্কেত দিয়ে রাখবেন যথাসময়ে জেগে উঠার জন্য। চক্রাকারে এরকম অনুশীলনে অভ্য¯Í হতে পারলে ঘুম আসতে সময় নেবেনা একদম । পাশাপাশি তলিয়ে যেতে পারবেন গভীর সুখনিদ্রায়। আর এ নিদ্রাতো শুষে নিচ্ছেই সকল কান্তি এবং অবসাদ।

শনিবার, এপ্রিল ২৫, ২০০৯

ফাঁক ফেয়ে এক কাক


পিঞ্জিরাটার দরজা নাকি
একটু ছিলো ফাঁক
সেই সুযোগে উড়াল দিলো
আটকে থাকা কাক!
আড়েমাড়াটা ভেঙ্গে ডানা
মেললো নীলিমায়,
ভাবলো এমন খুশীর দিনে
কোনটা করা যায়।
জর্দা দিয়ে পান চিবুবে
করলো ভেবে ঠিক,
ফেলবে মাথায় পথচারীদের
মলের সাথে পিক।

জর্দা-খয়ের-পান-সুপারীর
সাথে খেয়ে চুন
তীব্র ঝাঁঝে পাগল হলো
চড়লো মাথায় খুন।
রাস্তা এবং পার্কে গিয়ে
ঠুকরে দিলো লোক,
শহর জুড়ে কাকের ভয়ে
কাঁপলো সবার বুক।
এক বিকেলে বুদ্ধি এঁটে
শহরবাসী সব
আনলো লাঠি-খন্তা-কুড়াল
দারুণ কলরব।

কিন্তু কাকের ঠোকর কেয়ে
ঝরলো অনেক প্রাণ
কেউবা আবার নাক হারালো
কেই হারালো কান।
খবর পেয়ে আসলো পুলিশ
আসলো বিশষ ফোর্স,
গতিক ভালো নয় দেখে কাক
ধরলো আরেক কোর্স।

কোথায় নকল চুলগুলি

চুল গজানোর রূপ নিয়ে
ভাবছে খোকন বড়শী ফেলে টুপ দিয়ে
কেমনে চুলের ফাঁক ঘুরালো
টাকু মামুর টাক ফুরালো
মাছ না পেয়ে ভাবছে শুধুই ভাবছে যে
উত্তেজনায় থরো থরো কাঁপছে সে।

হঠাৎ মামু কেমন করে কোত্থেকে
এসেই হাজির বড়শী পাতার জোত দেখে।
যেইনা মাছে ঠোঁট বাগিয়ে
টোপ টেনেছে চোট লাগিয়ে
অমনি খোকন সাঁই করে ছিপ টান দিতেই
মাছসহ তা পরলো মামুর চান্দিতেই।

টাকু মামু তার পেছনে, জানতো না
জানলে এমন মাছ দেখে ছিপ টানতো না।
বড়শী এঁটে টানলো চুলে
হ্যাঁচকা টানে আনলো তুলে।

তেল-তেলে সেই টাক দেখে এক বুলবুলি
ব্যঙ্গ করে হেসেই বলে, কোথায় নকল চুলগুলি?

বিষ্ঠা রহস্য


অর্ধ ছেলা চান্দি মেলে
মানি বাবু যাচ্ছিলেন
আপন মনে গুনগুনিয়ে
একটা কিছু গাচ্ছিলেন।

হঠাৎ কীযে পড়লো এসে
উপর থেকে চান্দিতে
চমকে গিয়ে তপ্ত আঁচে
ভুললো গানে টান দিতে।

ঘটলো কীসব আজব ব্যাপার
বুঝতে বাবু হাত দিয়ে
একটুখানি আনলো তুলে
চিন্তা ফিকির বাদ দিয়ে।

ফিকে-সাদা ক্রিমের মতো
বস্তুটা কি ভাবতে হয়!
সবার আগে নাকের কাছে
গন্ধটা তার মাপতে হয়।

কৌতুহলে জিহ্বা দিয়ে
চেখেই দেখেন ঝাঁজ আছে
তাইতো ভাবেন, এটার বুঝি
প্র্যাকটিকেলি কাজ আছে।

নিন্দুকেরা বলছে বাবু
কীসব দিয়ে হাত মাজেন
আবার নাকি কাকের ছাওয়ের
বিষ্ঠা দিয়ে দঁাত মাজেন।

শেয়ার করে সস্তাতে

দুলা: সুঁই কিনেছি ঢাকায় এসে
আগের চেয়ে সস্তাতে
নয়তো গাঁয়ের দোকান থেকে
কিনলে হতো পস্তাতে।

আলফা: ভাগ্য ভালো বুদ্ধি এঁটে
এসেই গেলাম ঢাকায় হেটে
চড়া দামে কিনলে তখন
কেমন হতো লস্‌ তাতে।

দুলা: গাঁয়ের বেটা জ্যন্ত ডাকাত
দাম হেঁকেছে আট আনা
তুই এগুলে গাল বরাবর
জোরসে দিতাম চাটকানা।
জিহ্বা টেনে সুঁই ফুটিয়ে
চড়া দামের সাধ চুটিয়ে
একটি কোপে কল্লা কেটে
ভরেই দিতাম বস্তাতে।

আলফা: এই আবারো পরলি পিছে
হাটার গতি শ্লথ নাকি?
জোর কদমে চলরে দুলা
আরো অনেক পথ বাকি।
আলসেমিটা দূরে ঠেলে
ক্লান্তি দেহের ছুঁড়ে ফেলে
এক নাগাড়ে পা চালিয়ে
পৌঁছতে হবে দশটাতে।

দুলা: সামনে যেতে পারছি না আর
বুকের ভেতর ফালপারে
আমার হাতের সুঁইটা তবে
রাখনা এখন আলফারে।
কিনছি ওটা শেয়ার করে
কিন্তু একা বেয়ার করে
ভেবেই দেখি ক্ষয় করেছি
নিজেই নিজের যশ তাতে।

আলফা: আমিই বহন করবো কেন
বিচার করে দেখনারে
তারচে ধরি দু মাথাতে
তুই-আমি চল একসারে।
উদাস করা গানের কলি
কণ্ঠ ছেড়ে আওড়ে চলি
চাঙ্গা হয়ে নতুন করে
লাগবে মনে রস তাতে।

দুলা: ভাবনাটা তোর মন্দনারে
কিন্তু ছোট সুঁইটাতে
কেমন করে ধরবো এখন
মস্ত এমন দুই হাতে!
কলাগাছে সুঁইটা গেঁথে
কাঁধে তুলে যেতে যেতে
নৃত্য করে ঘাড় উঁচিয়ে
গাছটি কলার ঘঁষ তাতে।

সোনালি চুলের এক দিগ্বিজয়ী বীর

শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ:
দশ বছরের এক কিশোর। অন্যদের মত সাধারণ নয়, ঝাঁকড়া সোনালী চুলের এ কিশোর প্রতাপশালী এক রাজ্যের রাজপুত্র। রাজ্যে একটি ঘোড়া ছিল অদ্ভূত বৈশিষ্টের। এর মাথার আকৃতি ষাঁড়ের মত দেখতে। সুগঠিত পেশীর এই ঘোড়ার গায়ে প্রচন্ড শক্তি, প্রসস্ত দেহ, চওড়া পিঠ। তেজে টগবগ করত সারাক্ষণ। কেউ বাগে আনতে পারেনি একে। তাই রাজা সিদ্ধান্ত নিলেন ঘোড়াটি বিক্রি করে দেবেন। একথা কানে যেতেই কিশোর রাজপুত্রের মন বিষন্ন হয়ে গেল। কারণ এ ঘোড়টির মধ্যে সে তার নিজের ছায়া দেখতো। কেন জানি কিশোর যুবরাজের ইচ্ছা হতো এর পিঠে সওয়ার হয়ে তীর বেগে ছুটে যাওয়ার। ইচ্ছা হত দিগন্ত ভেদ করে সকালের উদিয়মান সূর্যের লাল টকটকে গোলকের ভেতর মিলিয়ে যেতে। ঘোড়াটা বিক্রির ব্যাপারে সবকিছু যখন চূড়ান্ত, কিশোর রাজপুত্র আর তর সইতে পারলোনা। একলাফে অভিজ্ঞ সওয়ারীর মত চড়ে বসল এর পিঠে। সাথে সাথেই চিহি ডাক তুলে তাকে পিঠে নিয়ে ছুটলো উল্কার মত। অ™ভ‚ত তেজী এ ঘোড়ার পিঠে সেঁটে বসা ছোট্ট এ কিশোরকে মনে হয়েছিল একটি ধনুক। ঘটনা দেখেতো সবাই তাজ্জব। বাবা বুকে জড়িয়ে ধরে চুমো খেলেন। উৎফুলø হয়ে সেদিন তিনি বলেছিলেন “আমার সন্তান, তুমি এ রাজ্যের বাইরেও সীমান্তকে সম্প্রসারণ কর। কেবল ম্যাকডোন তোমার জন্য যথেস্ট নয়।”
সত্যিই হল সেকথা। এই কিশোরই পরবর্তীতে দিগি¦জয়ী হয়েছিল, শাসন করেছিলো অর্ধেক পৃথিবী। ইতিহাস খ্যাত বীর আলেকজান্ডারই হলো সেই কিশোর এবং ম্যাকডোনের শাসক ফিলিপ-২ ছিলেন তার বাবা। মায়ের নাম অলিম্পিয়া।
ভালবাসার সেই ঘোড়াটি সবসময় তার কাছে প্রিয়-ই ছিলো। এর নাম ছিলো বুচিফালুস। যার অর্থ হল ষাঁড়ের মত মাথা। সকল অভিযানে ভালবাসার বুচিফালূসের পিঠে চড়ে ছুটতেন তিনি। আলেকজান্ডার এটিকে এমন ভালবাসতেন যে, ঘোড়াটি মারা যাবার পর এর নামে একটি শহরের নামকরণ করেছিলেন। যা বুচিফালুস বা বুচিফালা নামে পরিচিত। অনেকে মনে করেন বুচিফালুসের মৃত্যু হয়েছে ভারতের যুদ্ধে। আবার অনেকের ধারণা স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধ হয়ে ঘোড়াটি মারা যায়।
বাবা ফিলিপ এবং মা অলিম্পিয়া
আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট। যার জন্ম নিয়েই রয়েছে নানা কিংবদন্তী। বাবা ফিলিপ এবং মা অলিম্পিয়া আলেকজান্ডারের জন্মের পূর্বে অদ্ভূত ধরনের স্বপ্ন দেখতেন। ফিলিপ দেখেছিলেন, তিনি অলিম্পিয়ার গর্ভে সিংহের মোহর প্রতিস্থাপন করে দিয়েছেন। এ স্বপ্নটি নিয়ে রাজ্যের গণকদের সাথে কথা বললে তারা ভবিষ্যদ্বানী করেন, শীঘ্রই অলিম্পিয়ার গর্ভে একটি ছেলে সন্তান আসছে। এ সন্তানটি হবে সিংহের মত।
কিংবদন্তীর আলেকজান্ডার ৩৫৬ খ্রিস্টপূর্বে জন্মগ্রহণ করেন ম্যাকডোনের রাজধানী পেলাতে। তিনি ছিলেন ইতিহাসের অন্যতম সফল সেনানায়ক এবং সুকৌশলী যুদ্ধা। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছিলো তাঁর সাহস আর প্রতাপের কথা। বাবা ফিলিপ-২ এর মৃত্যুর পর পারস্য, এনাটোলিয়া, সিরিয়া, ফইনিসিয়া, জুদিয়া, গাজা, মিশর, ব্যক্ট্রিয়া, মেসোপটেমিয়া এবং ভারতের পাঞ্জাব পর্যন্ত তাঁর শাসন বিস্তৃত হয়।
ছোটবেলার শিক্ষক এরিস্টটলের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে বুদ্ধিবৃত্তির এতটা প্রসার ঘটেছিল যে, তিনি সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক করতেন। আলেকজান্ডারের বয়স যখন ১৩, তখন থেকে তিনি এরিস্টটলের ছাত্র হয়ে যান। নিয়মিত এরিস্টটলের কাছে তাত্তি¡ক ও ব্যবহারিক শিক্ষা নিতেন। এরিস্টটল তাকে সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী করে তুলেছিলেন। পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র, মানুষের আচরণবিধি, পশু পাখি জীব জন্তু ও শস্যসহ অনেক বিষয়ই ছিল তার শিক্ষনিয় বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। এরিস্টটলের কাছে এসব শিক্ষা পুঁথিবদ্ধ ছিলনা। আলেকজান্ডারের শরীর গঠনের জন্য নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন করার অভ্যাসও তৈরি হয় এরিস্টটলের মাধ্যমে।
ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার প্রথম দিক থেকেই আলেকজান্ডারের পরিকল্পনা ছিলো আরব উপদ্বীপে তাঁর সৈন্যবাহিণী এবং অর্থনৈতিক ব্যাপকতা প্রসারিত করবেন। পূর্ব-পশ্চিম সকল দিকের শাসক হবেন তিনি। সে কারণে প্রয়োজন একটি চৌকস সেনাবাহিনীর। সে লক্ষে কাজও করেছেন তিনি, বিভিন্ন অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন ভ‚মি ও আবহাওয়ায় সৈন্যদেরকে খাপ খাওয়ানোর জন্য ব্যাপকহারে বিভিন্ন অঞ্চলের লোকদের অন্তর্ভুক্ত করে তিনি তার সেনাবাহিনী গঠন করেন। এসব কৌশল এবং পন্থা অবলম্বন করা তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে কেবল এরিস্টটলের ছাত্র হওয়ার সুবাদে।
আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট সম্বন্ধে রয়েছে অনেক আলোচনা, পর্যালোচনা, সুনাম, দুর্নাম। প্রচলিত রয়েছে অনেক কাহিনী। উদার, হিংস্র কিংবা কৌশলী বিভিন্ন আখ্যায় আখ্যায়িত করা হয় তাকে। তার সম্বন্ধে ভাষ্য রয়েছে বাইবেলসহ নানা ধর্মগ্রন্থে, কালজয়ী বিভিন্ন সাহিত্যে। মুসলমান পন্ডিতদের কেউ কেউ মনে করছেন পবিত্র কোরআনে বর্ণিত জুলকারণাইন-ই হলো আলেকজান্ডার। আসলেই কি তাই!
আলেকজান্ডারের রাজত্ব
ম্যাকডোনের সিংহাসনে আলেকজান্ডার
৩৩৯ খ্রিস্টপূর্বে আলেকজান্ডারের বাবা যখন ৫ম স্ত্রী কিউপেট্রা ইউরিডাইসকে বিয়ে করে আনেন তখন থেকে শুরু হয়ে যায় পারিবারিক দ্বন্দ। এর পেছনের কারণ হলো জাতিয়তাবাদী চেতনা। আলেকজান্ডারের মা অলিম্পিয়া ছিলেন এপিরাসের অধিবাসিনী। অপরদিকে ৫ম স্ত্রী কিওপেট্টা ছিলেন নিখাঁদ ম্যাকডোনের কণ্যা। এ জাতিয়তাবাদ নিয়েই শুরু হয়ে যায় রাজনৈতিক নানা চক্রান্ত। অলিম্পিয়া এবং কিউপেট্রার মাঝে চলতে থাকে ঠান্ডা লড়াই। কিউপেট্রা এবং তার পক্ষের লোকজন আলেকজান্ডারের উত্থানকে সহ্য করতে পারতনা। এপিরাসের কণ্যার গর্ভের সন্তান কখনো ম্যাকডোনের রাজার উত্তরাধিকারী হতে পারেনা। ম্যাকডোনের সিংহাসনে চাই নিখাঁদ ম্যাকডোনের সন্তান। এ যুক্তির পক্ষে সিংহাসনের উত্থরাধিকারী নিয়ে অলিম্পিয়াকে কোণঠাসা করার চেস্টা চলত। সম্ভবত এসব কারণেই পরবর্তীতে আলেকজান্ডারের ক্ষোভ জন্মেছিল এবং তার শাসনামলে তার বাহিনীতে বিভিন্ন অঞ্চলের সেনা অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল।
৪র্থ এবং ৫ম স্ত্রীর মাঝে ঠান্ডা লড়াই ফিলিপ পর্যন্ত গড়ায়, এ বিষয়টি নিয়ে আলেকজান্ডার ও ফিলিপের মাঝে বাক-বিতন্ডাও হয়। আলেকজান্ডারের একটি বেপরোয়া চিৎকারের জবাবে বাবা তাকে লক্ষ্য করে তলোয়ার ছুঁড়ে মেরেছিলেন। এর জের ধরেই মাকে নিয়ে আলেকজান্ডার ম্যাকডোন ত্যাগ করে এপিরাসে চলে যান। কিন্তু তার বোন থেকে যায় ম্যাকডোনেই। সেই বোনের নামও ছিলো কিওপেট্রা।
এর কিছুদিন পর ফিলিপ এবং আলেকজান্ডারের মাঝে আবার সমঝোতা হয় এবং সে আবার ম্যাকডোনে ফিরে আসে। কিন্তু মা থেকে যান এপিরাসে। ৩৩৮ খ্রিস্টপূর্বে বাবার অধীনে আলেকজান্ডার চীরুলিয়া যুদ্ধে বীরত্বের সাথে লড়াই করেন। এতে ফিলিপ তাকে সেনাবাহিনীর একটি অংশের অধিনায়ক করে দেন এবং তার বীরত্বের জন্য উৎসবের আয়োজন করেন।
৩৩৬ খ্রিস্টপূর্বে ফিলিপ তার মেয়ে ক্লিওপেট্রার বিয়ের অনুষ্ঠানে ঘাতকদের আক্রমণে মারা যান। কেউ কেউ মনে করেন বিয়ে সংক্রান্ত জটিলতা নিয়েই তাকে হত্যা করা হয়েছে। হয়তো মেয়ের সাবেক প্রেমিক কিংবা মেয়ের স্বামীর সাবেক প্রেমিকা ছিলো ঘাতক। আবার আরেকটি ধারণা রয়েছে যে, ফিলিপকে হত্যা করার পেছনে আলেকজান্ডার এবং অলিম্পিয়ার হাত রয়েছে। অবশ্য এ ব্যাপারে প্রশ্ন থেকে যায় অনেক অনেক বছর পর ইতিহাসের গতি কারো কারো পছন্দমত বাঁক খায়নি এর কি নিশ্চয়তা? বরং ইতিহাসের অনেক ঘটনা বর্তমান বর্ণনায় উল্টো হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক।
ফিলিপ-২ এর মৃত্যুর পর সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সুকৌশলী সেনানায়ক আলেকজান্ডার মাত্র ২০ বছর বয়সে আরোহণ করেন ম্যাকডোনের সিংহাসনে। সেনাবাহিনী মেনে নেয় তার আনুগত্য।

আলেকজান্ডার এবং রুক্সানা
আলেকজান্ডার এবং তার সেনাপতি হেফিশন এক জাকজমক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দারিউসের দুই কন্যাকে বিয়ে করেন
File:Hephaistion portrait Prado bronze sketch.jpegসেনাপতি হেফিশন

ব্যক্তিগত জীবন
আলেকজান্ডারের জীবনের দীর্ঘ সময়ের সাথী ছিলেন তার সেনাপতি হেফিশন। তাছারা হেফিশন ছিল তার একজন বড় বন্ধু। তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত হেফিশন-ই ছিল বাহিনীর ২য় ব্যক্তি।
আলেকজান্ডার বিয়ে করেন ২টি। প্রথম স্ত্রী ব্যক্ট্রিয়ার আদর্শ কণ্যা রুক্সানা। অপরজন পারস্যের রাজা দারিউস-৩ এবং তার স্ত্রী স্ট্যটেইরা-১ এর কণ্যা স্ট্যটেইরা-২। রুক্সানার জন্ম ৩৪১ খ্রিস্টপূর্বে। ব্যক্ট্রিয়ায় রুক্সানার জন্ম স্থান সম্বন্ধে অনেকের ধারণা তা বর্তমান আফগানিস্তান। আলেকজান্ডারের সাথে রুক্সানার বিয়ে হয় ৩২৭ খ্রিস্টপূর্বে। অপর স্ত্রী স্ট্যটেইরার সাথে বিয়ে হয় ৩২৪ খ্রিস্টপূর্বে। পারস্যের রাজা দারিউস-৩ আলেকজান্ডারের সাথে যুদ্ধে হেরে গিয়ে স্ত্রী, দুই কন্যা এবং মাকে রেখে পালিয়ে যান। এর কিছুদিন পর আলেকজান্ডার এবং তার সেনাপতি হেফিশন এক জাকজমক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দারিউসের দুই কন্যাকে বিয়ে করেন। আলেকজান্ডারের সাথে বিয়ে হয় স্ট্যটেইরা-২ এর এবং তার বোন ড্রিপটেইসকে বিয়ে করে হেফিশন।
আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর পরিবারে রাজ্যের হাল ধরার মত কেউ ছিলেননা। তার ভাই ফিলিপ এরিডাস তখন ছিল মানসিকভাবে অসুস্থ। অপরদিকে ছেলে আলেকজান্ডার-৪ এর জন্মই হয় তার মৃত্যুর পর। তাই বিশাল এ সাম্রাজ্যকে এক করে রাখা সম্ভব হয়নি। সেনাপতিদের মাঝে ভাগ হয়ে চারটি সাম্রাজ্যে পরিণত হয়।

মৃত্যু ও কফিন
আলেকজান্ডারের মৃত্যু নিয়ে কয়েকটি ধারণা রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, তাকে বিষ প্রয়োগ করে মেরে ফেলা হয়েছে। কারো মতে পূর্বের ম্যালেরিয়া রোগ আবার তাকে আক্রমণ করেছিল। আবার কেউ মনে করছেন কেবল মাত্র অতিরিক্ত মদ্যপান-ই তার মৃত্যুর কারন। ৩২৩ খ্রীস্টপূর্বের ২৯মে আলেকজান্ডার তার বন্ধুদের সাথে একটি অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত মদ্যপান করেন। তখন থেকেই তিনি অসুস্থ হয়ে যান। বিছানায় পতিত তরুণ শাসক তখন কথাও বলতে পারেননি। নির্দেশনা দিতে পারেননি জেনারেল ও সৈন্যদেরকে। এমনকি হাত উঁচু করাও তার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। এভাবে কয়েকদিন মাত্র। ৩২৩ খ্রীস্টপূর্বের ১০ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন ব্যবিলনের নেবুচাড্্েরজার-২ এর প্রাসাদে। তার জীবনকাল ছিল ৩৩ বছরের চেয়ে ১ মাস কম।
বর্তমানে আলেকজান্ডারের কফিন সংরক্ষিত রয়েছে তুরস্কের ইস্তাম্বুল জাদুঘরে। এটি ১৮৮৭ সালে লেবাননের সিডন এর কাছাকাছি কোন একটি স্থান থেকে পাওয়া যায়। আলেকজান্ডারের দেহের ধারক মানুষের আকৃতির এ কফিনটি স্বর্ণের তৈরি। এটি বর্তমানে একটি প্রতীকি ঢিলা কাপড় দিয়ে ঢাকা রয়েছে। কফিনের পাশেই রয়েছে তার ব্যবহৃত অস্ত্রসস্ত্র।
আলেকজান্ডারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি সম্পদ ও ক্ষমতার লোভে অভিযান চালাতেন। ÿমতার দম্ভ ও সম্পদের জন্য তিনি ছিলেন বেপরোয়া। কিন্তু এ কথাও প্রচলিত রয়েছে যে, সহযোগিদের প্রতি আলেকজান্ডারের শেষ অনুরোধ ছিল মৃত্যুর পর তার হাত দুটো যেন কফিনের বাইরে প্রসারিত করে রাখার হয়। যেন সবাই দেখতে পায় বিশ্ববিজয়ী বীর আলেকজান্ডার পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছে শূন্য হাতে। বিশাল সাম্রাজ্যের কিছুই তিনি সাথে করে নিয়ে যেতে পারেননি।

বাইবেল এবং আলেকজান্ডার

বাইবেলে আলেকজান্ডারের প্রতীকি বর্ননা রয়েছে। এখানে আলেককজান্ডারের প্রতীক হিসেবে দুইটি শিং এর উলেøখ রয়েছে।
দানিয়েল ৮ঃ৫-৮ পদে রয়েছে “ ... পশ্চিমদিক হইতে এক ছাগ সম¯Í পৃথিবী পার হইয়া আসিল, ভ‚মি স্পর্শ করিল না, আর সেই ছাগের দুই চুর মধ্যস্থানে বিলÿণ একটা শৃঙ্গ ছিল। পরে দুই শৃঙ্গবিশিষ্ট যে মেষকে আমি দেখিয়াছিলাম, নদীর সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছে, তাহার কাছে আসিয়া সে আপন বলের ব্যগ্রতায় তাহার দিকে দৌড়িয়া গলে। আর আমি দেখিলাম, সে মেষের কাছে আসিল, এবং তাহার উপরে ক্রোধ উত্তেজিত হইল, মেষকে আঘাত করিল, ও তাহার দুই শৃঙ্গ ভাঙ্গিয়া ফেলিল, তাহার সম্মুখে দাঁড়াইবার শক্তি ঐ মেষের আর রহিল না, আর সে তাহাকে ভ‚মিতে ফেলিয়া পদতলে দলিতে লাগিল, তাহার হ¯Í হইতে ঐ মেষটীকে উদ্ধার করে, এমন কেহ ছিল না। পরে ঐ ছাগ অতিশয় আত্মগরিমা করিল, কিন্তু বলবান হইলে পর সেই বৃহৎ শৃঙ্গ ভগ্ন হইল, এবং তাহার স্থানে আকাশের চারি বায়ুর দিকে চারিটী বিলÿণ শৃঙ্গ উৎপন্ন হইল। ..”
পরবর্তীতে ২১-২২ পদে বিষয়টি স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে “ ... তুমি দুই শৃঙ্গবিশিষ্ট যে মেষ দেখিলে, সে মাদীয় ও পারসীক রাজা। আর সেই লোমশ ছাগ যবন দেশের রাজা, এবং তাহার দুই চুর মধ্যস্থানে যে বৃহৎ শৃঙ্গ সে প্রথম রাজা। আর তাহার ভগ্ন হওয়া, ও তৎপরিবর্ত্তে আর চারি শৃঙ্গ উৎপন্ন হওয়া, ইহার মর্ম্ম এই, সেই জাতি হইতে চারি রাজ্য উৎপন্ন হইবে, কিন্তু উহার ন্যায় পরাক্রম-বিশিষ্ট হইবে না। ...”
পশ্চিম দিক থেকে আগত এই ছাগ বা ছাগলটি ছিল গ্রীক সাম্রাজ্যের প্রতীক এবং বড় বড় শিংগুলো ছিল আলেকজান্ডারের প্রতীক, যিনি তার ÿমতার সর্বোচ্চ শিখরে থাকার সময় অকালে মারা যান। পরবর্তীকালে এ সাম্রাজ্য তার চারজন সেনাপতির মাঝে ভাগ হয়ে যায়।

কাসপিয়ান গেট
পবিত্র কোরআন এবং আলেকজান্ডার
পবিত্র কোরআনে ‘আলেকজান্ডার’ নামে সরাসরি কোন ভাষ্য নেই। তবে কোন কোন মুসলিম পন্ডিতগণ মনে করেন সূরা কাহাফ্-এ বর্ণিত জুলকারণাইনই হলেন আলেকজান্ডার। আরব উপদ্বীপে জুলকারণাইন নামটি পরিচিত ছিল অল্প বয়সে অধিক ক্ষমতাধর শাসক হিসেবে। জুলকারণাইন শব্দটির অর্থ হল দুই শিং বিশিস্ট। এ নামকরনের কারণ সম্পর্কে বহু কথা রয়েছে। কেউ বলেন: তাঁর মাথার চুলে দু’টি গুচ্ছ ছিল, যেগুলো দেখতে শিংএর মত। বেউ বলেন: পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যদেশগুলো জয় করার কারণে জুলকারণাইন খেতাবে ভ‚ষিত হয়েছিলেন তিনি। কেউ এমনও বলেছেন যে, তাঁর মাথায় শিং এর মত দু’টি চিনহ ছিল। অনেকের ধারণা এগুলো ছিল ক্ষত চিনহ। কিন্তু কয়েকজন মুফাচ্ছির বলেছেন এটা নিশ্চিত যে, কোরআন স্বয়ং তাঁর নাম জুলকারণাইন রাখেনি; বরং ইহুদীরা এ নাম দিয়েছিল। ইসলামী পন্ডিতদের অনেকেই কোরআনে বর্ণিত জুলকারণাইনের বৈশিষ্টগুলোর সাথে আলেকজান্ডারের বৈশিষ্টের মিল খুঁজে পান। এর মাঝে উলেøখযোগ্য হলো আলেকজান্ডারও ‘দুই শিং বিশিস্ট’ হিসেবে খ্যাত এবং তিনি পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের দেশগুলো জয় করেছিলেন। তাছারা বাইবেলেও আলেকজান্ডারকে দুই শিংবিশিস্ট বলেই অভিহিত করা হয়েছে।
আলøাহতাআয়ালা বিভিন্ন সময় পৃথিবীর মানুষকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। এদের মাঝে মাত্র কয়েকজনের নাম কোরআনে উলেøখ রয়েছে। নবী হিসেবে জুলকারণাইন এর নাম উলেøখ নেই, আবার তিনি নবী ছিলেননা এমনটিও বলা হয়নি। তাই পন্ডিতদের কেউ কেউ বলছেন হয়তো জুলকারণাইন আলøাহ প্রেরিত নবীদের মাঝে একজন ছিলেন। হয়তো সে কারনেই নিপীড়িত মানুষ সাহায্য, সহযোগিতার জন্য তাঁর কাছে ছুটে আসত। অনুসরণ করতো তাঁর দিক নির্দেশনা। তিনি নবী ছিলেন কি ছিলেননা, সে বিতর্কে না গিয়ে জুলকারণাইন-ই হলেন আলেকজান্ডার পন্ডিতদের একাংশের এ ধারণা কিভাবে হলো, তা স্পস্ট হবে কোরআনের এ বর্ণনা থেকে
“ ওরা তোমাকে জুলকারনাইন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে। বলো, ‘আমি তোমাদের কাছে তার কথা বয়ান করব।’ আমি তাকে পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দিয়েছিলাম ও প্রত্যেক বিষয়ের উপায় ও পথনির্দেশ করেছিলাম। সে এক পথ অবলম্বন করল। চলতে চলতে সে যখন সূর্যের অ¯Íাচলে পৌঁছাল তখন সে সূর্যকে এক পঙ্কিল জলে অ¯Í যেতে দেখল এবং সে সেখানে এক স¤প্রদায়কে দেখতে পেল। আমি বললাম, ‘হে জুলকারণাইন! তুমি এদেরকে শাস্তি দিতে পার বা এদের সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পার।’
সে বলল, ‘যে-কেউ সীমালঙ্ঘন করবে আমি তাকে শা¯িÍ দেব, তারপর তাকে প্রতিপালকের কাছে ফিরিয়ে আনা হবে ও তিনি তাকে কঠিন শা¯িÍ দেবেন। তবে যে বিশ্বাস করে সৎকর্ম করে তার জন্য প্রতিদান হিসেবে আছে কল্যাণ ও তার সাথে ব্যবহার করার সময় আমি সহজভাবে কথা বলব।’
আবার সে এক পথ ধরল। চলতে চলতে যখন অরুণাচলে পৌঁছল তখন সে দেখল তা (সূর্য) এমন এক স¤প্রদায়ের ওপর উঠছে যাদের জন্য সূর্যের তাপ থেকে আত্মরÿার জন্য আমি কোনো আড়াল সৃষ্টি করি নি। প্রকৃত ঘটনা এই, তার বিবরণ আমি ভালো ক’রে জানি।
আবার সে এক পথ ধরল। চলতে চলতে সে যখন পাহাড়ের প্রাচীরের মাঝখানে পৌঁছল তখন সেখানে সে এক স¤প্রদায়কে পেল যারা তার কথা একেবারেই বুঝতে পারছিল না। ওরা বলল, ‘হে জুলকারণাইন! ইয়াজুজ ও মাজুজ পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করছে; আমরা কি তোমাকে কর এই শর্তে দেব যে তুমি আমাদের ও ওদের মধ্যে এক প্রাচীর গ’ড়ে দেবে?
সে বলল, ‘আমার প্রতিপালক আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন তা-ই ভালো। সুতরাং তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য করো, আমি তোমাদের ও ওদের মাঝখানে এক মজবুত প্রাচীর গড়ে দেব। তোমরা আমার কাছে লোহার তাল নিয়ে আসো।’ তারপর মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা পূর্ণ হয়ে যখন লোহার ঢিপি দুটো পাহাড়ের সমান হল তখন বলল, ‘তোমরা হাপরে দম দিতে থাকো।’ যখন তা আগুনের মতো গরম হল তখন সে বলল, ‘তোমরা গলানো তামা নিয়ে আসো, আমি তা ওর ওপর ঢেলে দেব।’
এরপর ইয়াজুজ ও মাজুজ তা পার হতে পারল না বা ভেদ করতেও পারল না। সে (জুলকারণাইন বলল, ‘এ আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ। যখন আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রæতি পূর্ণ হবে তখন তিনি ওকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেবেন, আর আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্য।’
সেদিন আমি ওদেরকে দলেদলে তরঙ্গের আকারে ছেড়ে দেব, আর শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে। তারপর আমি ওদের সকলকেই একত্র করব। আর সেদিন আমি জাহান্নামকে প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত করব অবিশ্বাসীদের কাছে, যাদের চু আমার নিদর্শনের প্রতি ছিল অন্ধ, আর যাদের শোনারও ক্ষমতা ছিল না।” (সূরা কাহাফ্ ৮৩-১০১)
জুলকারণাইন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে বেড়াতেন নির্যাতীত, বঞ্চিত, শাসকের হাতে শোসিত লোকদের মুক্তি দিতেন। আলেকজান্ডারের বেলায়ও ঘুরে বেড়ানোর এবং রাজ্য জয় করার ইতিহাস রয়েছে। কুরআনের বর্ননা অনুযায়ী অরুণাচলে, যেখান থেকে সূর্য উদিত হয় সেখানে ইয়াজুজ, মাজুজের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য দেয়াল তুলে দিয়েছিলেন জুলকারণাইন। আর সে স্থানটি পাহাড়ের প্রাচীরের মাঝখানে। এই বর্ণনার সাথে মিলে যায় এমন একটি দেয়াল রয়েছে কাসপিয়ান সাগর উপক‚লে। ইতিহাসবিদদের দ্বারা স্বীকৃত যে এ দেয়াল তৈরি করেছিলেন আলেকজান্ডার। যা তৈরি করতে লোহা ও তামা ব্যবহৃত হয়েছে। সেখানে একটি তোরণ রয়েছে যেটি ‘কাসপিয়ান গেট’ বা আলেকজান্ডারের গেট নামে পরিচিত। দারিয়াল এবং ডারবেন্ট নামে দুটি শহরে এর ব্যপ্তি। দারিয়াল রাশিয়া এবং জর্জিয়ার সীমান্তে অবস্থিত। এটিকে বলা হয় কাজবেক পাহাড়ের পূর্ব প্রাম্ভ। ডারবেন্ট রাশিয়ার দক্ষিণে অবস্থিত একটি শহর। কাসপিয়ান সাগরের দক্ষিণপূর্ব উপকূলে নির্মীত এ দেয়ালটি তোলা হয়েছে দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা যায়গ্রায়। এ পাহাড় দুটিকে বলা হয় পৃথিবীর ¯Íন। আলেকজান্ডার নির্মীত এ দেয়ালের উচ্চতা ২০ মিটার এবং এটি ৩ মিটার (১০ ফুট) পুরো। এ দেয়াল ভেদ করে শত্রæদের এগিয়ে আসা অসম্ভব। তাছারা কাসপিয়ান গেটে আলেকজান্ডার রেখেছিলেন নিñিদ্র পাহাড়া। যেন গ্রীকের শত্রæরা দেয়ালের এ পাশে কোনভাবেই আসতে না পারে। কুরআনে রয়েছে যে, ইয়াজুজ মাজুজের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য এ দেয়াল নির্মাণ করা হয়। ইয়াজুজ মাজুজ সম্পর্কে বিভিন্ন মত রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন এ নামে অত্যাচারী শাসক ছিলো। আবার কারো মতে প্রতিকী অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে এ দুটি শব্দ। এ প্রতীক হতে পারে অত্যাচারী শাসক বা শাসকদের, যারা কাসপিয়ান সাগরের এ উপক‚র দিয়ে আক্রমণ ও লুণ্ঠন চালাত।
মুসলমান পন্ডিতদের পাশাপাশি পশ্চিমা অনেক পন্ডিতগণও আলেকজান্ডারকে জুলকারণাইন বলেই অভিহীত করেন। কারণ কুরআন এবং বাইবেলে বর্ণিত অনেককিছুর সাথেই সাদৃশ্য রয়েছে বর্তমানে প্রচলিত আলেকজান্ডারের ইতিহাসের। প্রশ্ন উঠতে পারে কুরআনে বর্ণিত জুলকারণাইন ছিলেন সু শাসক। কিন্তু সেই জুলকারণাইনকে কিভাবে আলেকজান্ডার ধরা হবে? কারণ আলেকজান্ডারের ব্যাপারে সুনামের চেয়ে দুর্নামের কথা-ই বেশি প্রচলিত রয়েছে। তাছারা আলেকজান্ডারের আস্তিকতার ব্যাপারে স্বীকৃতি থাকলেও অনেকে মনে করছেন তিনি ছিলেন অগ্নিপূজক। এর সঠিক জবাব হলো পবিত্র কোরআন ব্যতিত আল্লাহ প্রদত্ত ধর্মগ্রন্থগুলো যদি সময়ের সাথে সাথে মানুষের খেয়াল খুশিমত পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে, তো একজন ব্যক্তি বা শাসকের চরিত্রও বিকৃত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। অস্বাভাবিক নয় তাদের দর্শন বিবর্তনের।
হাজার হাজার বছর পর বিতর্ক করে হয়তো দেখা যাবে আলেকজান্ডার আদৌ জুলকারণাইন ছিলেননা। আবার হয়তো আরো গভীর পর্যালোচনা করলে একথাটি দাঁড়িয়ে যাবে আলেকজান্ডার দ্যা গ্র্যাট ছিলেন জুলকারণাইন।

শুক্রবার, এপ্রিল ২৪, ২০০৯

ঘুমের ছবি তারার বুড়োর








ইলিক ঝিলিক তারার বুড়ো
নীলের চাতাল ফুঁড়ে
জোসনা দিয়ে গা মাখিয়ে
নামলো ভুবন জুড়ে
এখানটাতে ভরলো আলোয়
হলুদ এলো ঘাসে
ঘাস বলো না ঘাস বলো না
সর্ষে দেখো হাসে।
সর্ষেতো নয় হলদে ফুলের
হলদে মাদুর পেতে
আবছা আকাশ গড়লো দেয়াল
তিন সীমানায় যেতে
চার সীমানার তিনটি গেলো
একটি রলো ফাঁকা
ওখানটাতে গাও গেরামের
সবুজ ছবি আঁকা।
কাদার ওপর এক পরতের
রুপোর টলোমলো
আলতু নুয়ে ঝাঁকড়া হিজল
ঘুমে ঢলোঢলো।

এই ছবিটা ঘুমের ছবি
কেউ ধরো না এতে
এর ভাগিদার শুধুই বুড়ো
কেউ চেয়োনা পেতে।

বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৩, ২০০৯

আগুনঝড়

শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ:
বন-বনানীতে ঘেরা ছোট্টশহর মারিসভিলে। বিশ্বের কয়জনই বা চিনতো একে? খোদ অস্ট্রেলিয়াবাসীর অনেকেই জানতোনা দক্ষিণাঞ্চলের ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্যের এই শহরটিকে। পৃথিবীর অন্যান্য অনেক শহরের মতোই এখানকার বাতাসে ভেসে বেড়াতো জীবণের কলরোল। এর আগে নিভৃত এ জনপদের প্রাণের স্পন্দন কখনো আলোড়ন তুলেনি গোটা পৃথিবীর বাতাসে। কিন্তু হঠাৎ-ই এক ভয়ঙ্কর আগুনঝড় মারিসভিলেকে পরিচিত করে তুললো হতবিহহ্বল বিশ্ববাসীর কাছে। সেখানকার উত্তপ্ত বাতাস পৃথিবীর কানায় কানায় ছড়িয়ে দিলো শহরটির নাম। প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবীবাসী পরিচিত হলো জ্বলে-পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া এক অন্যরকম মারিসভিলে’র মতো আরো কয়েকটি এলাকার সাথে। মাত্র কদিন আগে সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের মাধ্যমে মানুষকে নাড়া দিয়ে গেলো অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ ভিক্টোরিয়ায় সৃস্ট দাবানল। দীর্ঘস্থায়ী সে আগুনঝড় প্রাণের আর্তচিৎকারে ভারি করে তুলেছিলো ভিক্টোরিয়ার বাতাস। মুহুর্তের মাঝেই দাবানলের লেলিহান শিখা গোটা বিশ্ববাসীকে ভাসিয়ে দেয় চোখের জলে।

উষ্ণতা থেকে দাবানল
পৃথিবী সৃস্টির আদি উপকরণ কোনটি, আগুন, নাকি পানি? এ নিয়ে প্রাচীন দার্শনিকদের মাঝে ছিলো তুমুল বিতর্ক। দার্শনিক থেলিসের মতো কেউ কেউ বলেছিলেন যেহেতু পৃথিবীর তিনভাগ জল আর এক ভাগ স্থল, সেহেতু জলই হলো পৃথিবীর আদি উপাদান। আবার দার্শনিক এনাক্সিমেন্ডারের মতো কারো কারো ধারণা ছিলো যেহেতু আগুন বদলে দিতে পারে পৃথিবীর রূপ, সেহেতু আগুন থেকেই পৃথিবীর সৃস্টি। আগুনের কারণেই প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে পৃথিবী। প্রাচীন দার্শনিকদের এসব বিতর্কের সমাপ্তি না ঘটলেও আগুন যে একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক শক্তি তা অস্বীকার করার জো নেই। উষ্ণতা থেকেই আগুনের সৃস্টি। কি অদ্ভূত ব্যাপার! অদৃশ্য উষ্ণতাই হঠাৎ দৃশ্যমান হয়ে রূপ নেয় অগ্নিশিখায়! উষ্ণতা বাড়লো, তো শিখা লেলিহান হয়ে উঠলো। অপরদিকে উষ্ণতা কমতে থাকার সাথে সাথে গুটিয়ে যেতে থাকে শিখাগুলোও। ধিকিধিকি জলার পর দপ করে নেই হয়ে যায হঠাৎই। উষ্ণতার এই আকার-নিরাকারের জাদুকরী শক্তি আগুনকেতো প্রকৃতির শক্তিশালী উপাদান হিসাবে গণ্য করা হবেই। ছোট-বড় সকল পরিসরে পানি যেমন আশির্বাদ এবং অভিশাপ দুটোই, আগুনও ঠিক তেমনি।
আগুনের উৎপত্তি কিভাবে হয়? এর জন্য অবশ্যই প্রয়োজন দাহ্য পদার্থ, অক্সিজেন এবং অগ্নুতপাত হওয়ার মতো উষ্ণতা। দাহ্য পদার্থ এবং অক্সিজেনের উপস্থিতিতে যখন সেখানকার উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় তখনি জ্বলে উঠে আগুন। সেটা কখনো মানুষ ঘটায়, কখনোবা প্রকৃতির নিয়মেই ঘটে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে যে অপ্রতিরোধ্য আগুনের সৃস্টি হয় তাকেই বলে দাবানল। অবারিত দাহ্য পদার্থের ভান্ডার প্রাকৃতিক বনগুলোতেই সাধারণত দাবানলের সৃস্টি হয়। অপ্রত্যাশিতভাবে তৈরি হওয়া এ আগুন বনের গাছপালা, ঘাস এবং অসহায় জীবজন্তুকে পুড়িয়ে খাক করে দেয়।
যেসব বনাঞ্চলের আবহাওয়া সাধারণত গরম, শুকনো থাকে সেসব অঞ্চলেই দাবানল বেশি হয়ে থাকে। সেদিক থেকে অনাবৃস্টির অস্ট্রেলিয়ার কিছু কিছু এলাকা বছরের যেকোন সময়ই দাবানলের ঝুঁকিতে থাকে। ছোট পরিসরের আগুন অবশ্যই দাবানল নয়। কিন্তু ছোট পরিসর থেকেই অনেক সময় বড় পরিসরে গড়াতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় একই সময়ে একই বনের বিভিন্ন স্থান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরবর্তীতে তা ছড়িয়ে এক হয়ে যায়। আর সে অবস্থাটাই হলো দাবানল।
দাবানলের উৎপত্তি নির্ভর করে জ্বালানির উপস্থিতি, আদ্রতা, বাতাসের গতি এবং বাতাসের কৌণিক গতির উপর। বনের যেসব অঞ্চলের উষ্ণতা আগুন জলে উঠার পর্যায়ে পৌঁছে সেসব অঞ্চলে একই সময়ে বা প্রায় কাছাকাছি সময়ে সৃস্টি হয় স্ফুলিঙ্গের। তারপর সময়ের ব্যবধানে সকল উৎসগুলো একাকার হয়ে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে লেলিহানগুলো। বিপুল পরিমাণ জ্বালানির উপস্থিতিতে শক্তিশালী আগুনের সৃস্টি হয়। ঘন ও বিন্য¯Í জ্বালানির উপস্থিতির চাইতে যথেস্ট জায়গা নিয়ে জ্বালানি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে সেখানে আগুন দ্রæত ছড়ায়। বনে সৃস্ট আগুন একটি উৎসের দাহ্য পদার্থগুলো যখন পুড়িয়ে শেষ করে, তখন শুকনো ডালপালা এবং পাতার মাধ্যমে তা ছড়াতে থাকে। লেলিহানগুলো দূরের দাহ্য পদার্থে ছড়িয়ে যেতে সক্ষম না হলেও তা নিভে যায়না। বরং সহজদাহ্য কিছু ঘাসের মাধ্যমে তা আরো দ্রুত বিস্তার লাভ করে। এ কারণে দাবানলে জ্বলতে থাকা কোন বনের দিকে দূর থেকে লক্ষ্য করলে মনে হতে পারে আগুন বুঝি লাফিয়ে লাফিয়ে বিস্তার লাভ করছে।
অনেকদিন অনাবৃস্টির কারণে বনের গাছপালার আর্দ্রতা কমে গেলে শুষ্ক ও উত্তপ্ত বায়ু প্রবাহই সূত্রপাত ঘটায় দাবানলের। অবশ্য আগুনের এ চাদরের বিস্মৃতি নির্ভর করে বাতাসের আনুকুল্যতা কিংবা প্রতিক‚লতার উপর। অনুকুল বাতাস আগুনের শিখাকে লাফিয়ে লাফিয়ে নতুন জ্বালানি পুড়াতে সাহায্য করে। জ্বলতে সাহায্য করে অক্সিজেনের জোগান দিয়ে। একটি স্থানে আগুনের সূত্রপাত হলে তা থেকে অপরস্থানে সে আগুনকে বয়ে নেয়ার মূল দায়িত্ব পালন করে বাতাস। আর সেই সূত্রে আগুনকে সহজে বহন করে নিয়ে যায় সহজদাহ্য ঘাস। তবে আগুন ছড়ানোর চিরচারিত যে রীতি তা অনুযায়ী দাবানলের উৎস থেকে লেলিহানগুলো জিহ্বা বিস্তৃত করে দূরের জ্বালানির উৎসগুলোকে উত্তপ্ত করতে থাকে বিকিরণের মধ্য দিয়ে। আর যখন জ্বালানীগুলো দাহ্য হবার উপযুক্ত হয়, ততক্ষণে লেলিহানগুলোও সেখানে ছড়িয়ে যায় পূর্ণ উষ্ণতা নিয়ে। আগুনের স্বাভাবিক ধর্মের কারণেই দাবানলের বিস্তৃতি উপরের দিকেই বেশি ঘটে।
দাবানলসহ যে কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগই ইকোসিস্টেমের ক্ষতি করে। কোনো একটি নির্দিস্ট এলাকায় যত জীবিত বা মৃত বস্তু থাকে তারা সবাই ইকোসিস্টেমের উপাদান। দূর্যোগের কারণে প্রকৃতি তার স্বাভাবিকতা হারায়। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, কোন কোন ক্ষেত্রে দূর্যোগও কাজ করে আশির্বাদ হিসাবে। দাবানল সেরকম একটি দূর্যোগ। বনে অনেক গাছ রয়েছে যেগুলোর বংশ বৃদ্ধিই হয়না দাবানল না হলে। দেবদারু তেমন একটি বৃক্ষ। দেবদারুর ফলের খোসা এতটাই শক্ত যে ভেতরে থাকা বীজের পক্ষে কোনো দিনই বাইরে আসা সম্ভব নয়। আগুনের তাপে এর শক্ত খোসা গলে গেলেই কেবল বীজের অঙ্কুর এবং বংশবিস্তার সম্ভব।

অস্ট্রেলিয়ার সেই আগুন ঝড়
প্রাকৃতিকভাবেই হোক বা মনুষ্য সৃস্টই হোক ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্যের সেই আগুন ঝড়ের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার জন্য নেমে আসে এক অভিশাপ। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত স্থায়ী হওয়া এ আগুনঝড়ে সেখানকার উত্তপ্ত বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল প্রাণের আর্তচিৎকার। আবার একই সময়ে ভিন্ন চিত্র ছিল দেশটির কুই›সল্যান্ড এলাকায়। সেখানে ভারী মৌসুমি বৃষ্টিতে দেখা দিয়েছিল বন্যা। দুই অংশে দুই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেন নেমে এসেছিলো নরকের অভিশাপ।
তিনটি অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে পড়া দাবানলে ৫০টিরও বেশি স্থানে একইসাথে চলতে থাকে অপ্রতিরোধ্য আগুনের ধ্বংসযজ্ঞ। প্রচন্ড বাতাসের উস্কানিতে ক্রমেই পরিধি বৃদ্ধি করতে থাকে দাবানলের লেলিহান জিভ। উত্তাপের ঢেউ পুড়াতে থাকে সংরক্ষিত বনভ‚মি, ন্যাশনাল পার্ক, খামার এলাকা এবং লোকালয়সহ ৪৫০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। যার ফলশ্রুতিতে সেখানকার তাপপ্রবাহ ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছে গড়ে তোলে নতুন রেকর্ড। নিহত হয় ১৭৩ জন, আহত হয় ৬০০ জন, ছাই হয়ে যায় লোকালয়ের আশ্রয়। অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ এ দাবানল ছড়িয়ে পড়ে তিনটি অঙ্গরাজ্যে। ধ্বংস হয়ে যায় কয়েকটি শহর ও ২,০২৯ টি বাড়িঘর। গৃহহারা হয় কয়েক হাজার মানুষ। সবচেয়ে বেশি তিগ্রস্ত হয় ভিক্টোরিয়া রাজ্য। নিহতদের সবাই সেখানকার বাসিন্দা। সেখানকার ৩০ হাজার হেক্টর বনাঞ্চল, কৃষিজমি ও বেশ কয়েকটি শহর থেকেই প্রথম উৎপত্তি হয় আগুনঝড়ের। আগুনের লেলিহান-শিখা ছিলো চারতলা ভবনেরও উঁচুতে। বিভীষিকাময় সে মুহুর্তে গোটা আকাশ ঢেকে যায় ছাইয়ে। হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নেয় কমিউনিটি হল, স্কুল ও অন্যান্য আশ্রয়কেন্দ্রে। কিন্তু দিকবিদিক ছুটে পালাতে ব্যস্ত বনের পশুপাখিরা পায়নি সে ধরনের কোন আশ্রয়ের খোঁজ। এদেরকে মুহুর্তেই ছাই হয়ে যেতে হয় আগুন ঝড়ের অভিশাপে। রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখা যায় হাজার হাজার ক্যাঙ্গারুর নিথর দেহ। ভয়াবহতম এ দাবানলে মারা যায় লাখ লাখ প্রাণী।
হাজার হাজার দমকল কর্মী, স্বেচ্ছাসেবক আপ্রাণ চেস্টা করে যায় দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। সহায়তার জন্য ছুটে আসে অস্ট্রেলিয়ান সেনাবাহিনী। কিন্তু প্রতিরোধ করা যায়নি প্রকৃতির ভয়ঙ্কর আক্রোশকে। অস্ট্রেলিয়ানরা এ দাবানলকে ‘স্থল সুনামি’ বলেও অভিহিত করছেন। দাবানল পরবর্তী পরিস্থিতিও দৃশ্যত এতটাই ভয়ঙ্কর ছিলো যে অ¯েট্রলিয়ার পুলিশ ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্যের মারিসভিলে শহরটি বন্ধ করে দেয়। বেঁচে যাওয়া শহরবাসী তাদের বাড়িতে ফেরার জন্য শহরের চারদিকে ভিড় করলে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়। পুলিশের ভাষ্যমতে ধ্বংসস্ত‚পের সে বীভৎস পরিস্থিতি লোকজনকে আরো আতঙ্কিত করে দিতে পারে বলে শহর ছেড়ে যারা চলে গিয়েছিল তাদেরকে পরমুহুর্তেই ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
অপরদিকে একই সময়ে অস্ট্রেলিয়ার উপর নেমে আসে আরেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ বণ্যা। বিজ্ঞানীরা বলেন, বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ার কারণে এ দুর্যোগের সৃষ্টি হয়েছে। অ¯েট্রলিয়ার শীর্ষস্থানীয় জলবায়ু বিজ্ঞানী কেভিন হেনেসি বলেন, ১৯৫০ সালের পর থেকে অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বে তাপমাত্রা বাড়ার প্রবণতা যে অব্যাহত রয়েছে তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা বলতে পারি, ভিক্টোরিয়ায় যে দাবানলের ঘটনা ঘটেছে, এর পেছনে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন। আর সেটি হয়েছে বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ার কারণে।’ দেশের উত্তরে প্রবল বর্ষণজনিত সে বণ্যা এতটাই ভয়াবহ ছিলো যে, নদ-নদীগুলো প্লাবিত হয়ে কুমির ঢুকে পড়ে শহরে।
অস্ট্রেলিয়ায় সৃস্ট ভয়ঙ্কর এ দাবানল এবং বণ্যাকে প্রাকৃতিক দূর্যোগ হিসাবে দেখা হলেও এ নিয়ে সৃস্টি হয় কিছু বিতর্কেরও। উদ্দেশ্যম‚লকভাবে বনের শুকনো গাছপালায় আগুন লাগানো হয় বলেও সন্দেহ করে পুলিশ। ইসলামি জঙ্গিরা ‘জঙ্গল জিহাদ’ হিসেবে বনে আগুন লাগিয়েছে বলে কোনো কোনো মহল থেকে তোলা হয় অভিযোগ। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ তা একেবারেই নাকচ করে দেয়। আবার ১৩ ফেব্রুয়ারি আগুন লাগিয়ে দাবানল সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু কিসের ভিত্তিতে তাকে সন্দেহ করা হয় এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। শেষ পর্যন্ত দাবানল সৃস্টি করার পেছনে কাউকে দোষি সাব্যস্ত করা যায়নি। তবে একইসাথে আগুন-পানির এ তান্ডবকে অস্ট্রিলিয়ার জন্য অভিশাপ হিসাবে দেখছেন অনেকেই।

গ্রীসে সৃস্ট দাবানল
অস্ট্রেলিয়ায় সম্প্র্রতি যে দাবানল হয়ে গেলো, এর প্রায় দুই বছর আগে গ্রীসে সৃস্ট দাবানলটিও হতবাক করে দেয় বিশ্বকে। ২০০৭ সালে সৃস্ট এ দাবানলটি ছিলো মূলত চারটি পর্যায়ে। গ্রীসের বেশির ভাগ এলাকাতেই ছড়িয়ে পড়েছিলো ভয়ঙ্কর আগুনের লেলিহান। গ্রীসের পিলোপোনীস, আট্টিকা এবং ইভিয়া এলাকায় ২৮জুন থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলমান এ ভয়ঙ্কর দাবানলে মোট মৃতের সংখ্যা ৮৪ জন। এদের মাঝে জুনে ৯জন, জুলাই মাসে ৫ জন, আগস্টে ৬৭ জন এবং সেপ্টেম্বরে মারা যায় ৩জন। অপ্রতিরোধ্য আগুন ৬৭০ একর বা ২,৭১১ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিলো। সবচেয়ে বড় ক্ষয়ক্ষতি হয় আগস্টের শেষ সপ্তাহের দাবানলে। চারদিনব্যাপী স্থায়ী হওয়া এ দাবানল বিশাল আকারে এক সর্বগ্রাসী আগুনের চাদর হয়ে রাজধানী এথেন্সের উত্তরের ইভিয়া দ্বীপ থেকে শুরু করে দক্ষিণে পিলোপোনীস পর্যন্ত ঘিরে ফেলে। সেই সাথে শুষ্ক ও উত্তপ্ত বায়ু প্রবাহের কারণে বিভিন্ন স্থানে থেকে থেকে জ্বলতে থাকে আগুন।
গ্রীসে এ ভয়ঙ্কর দাবানল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্ন দেশ থেকে অগ্নি নির্বাপক বিমান এসে প্রচেষ্টা চালায়। প্রধানমন্ত্রী কস্টাস কারামানলিস দেশে জররী অবস্থার ঘোষণা দেন। সেনাবাহিনী যুদ্ধ-পদক্ষেপে কাজ করে। গ্রীক পুলিস এটি পরিকল্পি হতে পারে বলেও ধারণা করে। সেজন্য তারা ১২ ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করে। ১ মিলিয়ন ইউরো পুরস্কার ঘোষণা করে দাবানল সৃষ্টিকারীর সন্ধান পাবার জন্য। অনেকেই অনুমান করেন এ-দাবানল একটি সংগঠিত কান্ড যার উদ্দেশ্য ছিলো গ্রীসের বন-সংরক্ষণ আইনে পরিবর্তন আনা।
আরো ভয়ঙ্কর খবর হলো, গ্রীসের ইতিহাস-খ্যাত অলিম্পিকের আদি স্টেডিয়ামে অবস্থিত যাদুঘরের আঙ্গিনাকে ঝলসে দেয় এর লেলিহান শিখা। বহু কসরত করে গ্রীসের মহত্তম এ প্রতœতাত্তি¡ক সংগ্রহ ও স্টেডিয়ামকে আগুনের হাত থেকে রক্ষা করা হয়।

বয়ে যাওয়া উত্তাপ
মানুষ আর গাছের জীবনপ্রণালী পরস্পর নির্ভরশীল। মানুষ অক্সিজেন নেয় গাছ থেকে আর গাছ নেই কার্বন ডাই অক্সাইড মানুষের কাছ থেকে। যা মানুষের জন্য বিষ, তাই আপন প্রয়োজনে নিজের মধ্যে টেনে নেয় গাছ। প্রকৃতির এই সুন্দর এবং গোছালো শৃঙ্খলার কারণেই টিকে আছে জীব ও জগতের ভারসাম্য। মানুষ যেমন জন্মায় এবং মৃত্যুবরণ করে। গাছেরও তেমন রয়েছে জন্ম এবং মৃত্যু। মানুষ, গাছ এবং সৃস্টির অন্যান্য অনুষঙ্গগুলোর মাঝে পরস্পর নিরবচ্ছিন্ন বন্ধনের মাধ্যমেই পর্যায়ক্রমে এগিয়ে চলেছে পৃথিবী। এগিয়ে চলার এ পথে প্রভাব ফেলছে কেবল সময়। সময়ই বদলে দিচ্ছে প্রকৃতির রূপ। দাবানল সময়েরই একটি অনুষঙ্গমাত্র। যেমনভাবে দাবানল মাইলকে মাইল বনভ‚মিকে পুরিয়ে খাক করে দিতে পারে, তেমনভাবে আবার প্রাকৃতিক নিয়মেই আবার জেগে উঠে সবুজ বন। পৃথিবীর গহীন বনভ‚মির এমন অনেক অঞ্চল রয়েছে যেগুলোতে মানুষের পায়ের স্পর্শ কখনো পরেনি। সেগুলোতেও সৃস্টির আদিকাল থেকেই বয়ে আসছে আগুনঝড়। এদের কোনটির উত্তাপ স্পর্শই করতে পারেনি সভ্য জগতকে, আবার কোনটির খবর বাতাসে ভেসে এসেছে মানুষের কানে। বিভিন্ন সময় পৃথিবীর বিভিন্ন বনভ‚মিতে বয়ে যাওয়া কিছু উত্তাপে উত্তপ্ত হয়েছে বিশ্ববাসী।

উত্তর আমেরিকা: উত্তর আমেরিকার আবহাওয়া দাবানলের ঝুঁকিপ্রবণ। সেখানকার সৃস্ট দাবানল সম্পর্কে খোঁজ নিতে গেলে ১৮২৫ সালে সৃস্ট মীরামিকি দাবানল থেকে শুরু করে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৫৮টি দাবানলের ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যায়। উত্তর আমেরিকার আবহাওয়া অপেক্ষাকৃত শুষ্ক বলে এর বিভিন্ন এলাকায় ঘন ঘনই দাবানলের সৃস্টি হয়। ২০০৮ সালের ভেতরেই সেখানকার বনভ‚মিতে ঘটে যায় তিন তিনটি আগুন ঝড়ের ঘটনা। এগুলো হলো ট্রিগু দাবানল, ইভান্স রোড দাবানল এবং ক্যালিফোর্নিয়া দাবানল। এর আগের বছর ২০০৭ সালে উত্তর আমেরিকায় বয়ে যায় সাত সাতটি আগুন ঝড়।

অস্ট্রেলিয়া: ১৯৩৯ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় ১২টি আলোচিত দাবানলের সৃস্টি হয়। ১৯৩৯ সালের ১৩ জানুয়ারি ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্যে ৪,৯৪২ একর এলাকাজুড়ে সৃস্ট দাবানলে প্রাণহানী ঘটে ৭৮ জনের। দিনটি শুক্রবার ছিলো বলে এটি বø্যাক ফ্রাইডে নামে পরিচিত। অবশ্যই একই কারণে ১৯৫৫ সালের দাবানলটি বø্যাক সানডে, ২০০১-২০০২ সালের দাবানল বø্যাক ক্রিস্টমাস এবং ২০০৫ সালে সৃস্ট দাবানল বø্যাক টুয়েসডে দাবানল হিসাবে পরিচিত।
১৯৬১ সালে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া, ১৯৬৭ সালে তাসমানিয়ায়া, ১৯৮০ এবং ১৯৮৩ সারে ভিক্টোরিয়া ও দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় সৃস্ট দাবানলও ছিলো অস্ট্রেলিয়ার জন্য অভিশাপ স্বরূপ। ১৯৯৪ সালে নিউ সাউথ ওয়ালেসে সৃস্ট আগুনে বিরান হয়ে হয়ে ৮,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। অস্ট্রেলিয়ার জন্য আলোচিত ও ভয়ঙ্কর আরো দুটি দাবানল হলো ২০০৩ সালের ১৮ জানুয়ারিতে সৃস্ট ক্যানবেরা এবং ২০০৬ সালের মাউন্ট লুব্রা দাবানল।

ইউরোপ: ইউরোপের মাঝে দাবানল সবচেয়ে বেশি সৃস্টি হয়েছে গ্রীসেই। ১৯৯৫ সালের জুন মাসের শেষ সপ্তাহে গ্রীসের পেনটারী পাহাড়ি এলাকায় দাবানলের সৃস্টি হয়। যার স্থায়িত্ব ছিলো ৭ দিন। গ্রীসে ১৯৯৮, ২০০০ এবং ২০০৫ সালে সৃস্টি হয় আরো তিনটি দাবানলের।
১৯৭৫ সালে জার্মানীতে ৭৪.১৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে সৃস্ট আগুনে পাঁচজন অগ্নিনির্বঅপক কর্মী মারা যায়। ২০০ সালে ইতালী এবং ফ্যান্সের কিছু অংশের বনভ‚মিতে সৃস্টি হয়েছিলো আগুনের। ১৯৯২ সালের ২৬ আগস্ট পোল্যান্ডে এবং ২০০৩ সালের আগস্টে পর্তুগালের বনভ‚মিতে সৃস্টি হয় ভয়ঙ্কর আগুনঝড়ের। রাশিয়া এবং সুভিয়েত ইউনিয়নে ১৯২১ সাল এবং ১৯৩৫ সালের পর আর কোন উলেøখযোগ্য দাবানলের সৃস্টি হয়নি। ২০০৫ সালে স্পেনের ১৩২ বর্গ কিলোমিটার বনভ‚মিতে সৃস্ট দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে ১১ জন অগ্নিনির্বঅপক কর্মী প্রাণ হারায়।

দক্ষিণ আমেরিকা: দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়াতে ২০০২ সালে সৃস্টি হয়েছিলো দাবানলের

এশিয়া: এশিয়ার ভিতর দাবানলের সবচেয়ে ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা হলো ইন্দোনেশিয়ায়। সেখানে দাবানলের সৃস্টি হওয়া এখন বার্ষিক রীতিতে পরিণত হওয়ছে। তবে সেখানে সৃস্টি হওয়া কয়েকবারের দাবানরে কথা বিশেষভাবে উলেøখ করা যায়। ১৯৮২-৮৩ সালে ক্যালিমানটান এবং পূর্ব সুমাত্রার ৩৬,০০০ বর্গকিলোমিটার বনভ‚মি জুড়ে আগুন লেগে যায়। এই একই এলাকায় পরবর্তীতে আরো দাবানলের সৃস্টি হয় ১৯৮৭, ১৯৯৭, ১৯৯৯ এবং ২০০৫ সালে। তবে ক্যালিমানটান এবং সুমাত্রাতে ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতিবছরই ছোট খাট দাবানলের ঘটনা ঘটে আসছে। এশিয়ার দেশগুলোর মাঝে উলেøখ করার মতো দাবানল প্রবণ অন্য কোন দেশ নেই। তবে ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল জাপানের ৩.৪ বর্গকিলোমিটার বনভ‚মিতে সৃস্ট আগুনের কথা উলেøখ করা যায়। যার স্থায়িত্ব ছিলো ১ দিন এবং এতে প্রাণ হারায় ১৮ জন অগ্নিনির্বঅপক কর্মী।

বিষাদের মূর্ছনা
কার্য কারণ তত্তে¡র ভিত্তিতে যদি বনভ‚মিতে সৃস্ট দাবানলের কারণ খোঁজা হয়, তবে সহজেই চোখে ভেসে উঠে এগুলো। যেমন- আগুনের বিস্তৃতির কারণে দাবানলের সৃস্টি। জ্বালানির উপস্থিতি এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে আগুনের সৃস্টি। কার্য কারণ তত্ত¡ অনুযায়ী সবই যথাযথভাবে মেলানো যায়। কিন্তু তবুও মাঝখানে থেকে যায় জগতের অপার এক রহস্য।
ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকা তাপ বনভ‚মির জ্বালানীর পানিগুলোকে ধীরে ধীরে শুকিয়ে প্রজ্জ্বলনের উপযোগী করে তোলার পর একটি নির্দিস্ট পরিমাণে তাপমাত্রা পৌঁছলে হঠাৎই সৃস্টি হয় স্ফ‚লিঙ্গের। এ স্ফ‚লিঙ্গের মাঝেই নিহীত যত রহস্য। হঠাৎই কিভাবে আকার পায় নিরাকার উষ্ণতা! এ পরিবর্তনকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন প্রত্যÿবাদীরা? অতীন্দ্রীয় কোন সত্ত¡াই কি তাহলে এই পরিবর্তনের কারণ? যে সত্ত¡ার মাঝে জীব ও জগতের সকল রহস্যই লুক্কায়িত?
এমন অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো জগতের অসংখ্য উপাদানের নিগূঢ় রহস্যের তরঙ্গে কখনো ভেসে বেড়ালে যে সত্ত্বার কাছে গিয়ে আছড়ে পরতে হয়, তিনিই পরম সত্তা। সে সত্ত্বা থেকেই আগুন-পানি কখনো এসেছে মানুষের জন্য আশীর্বাদ হিসাবে আবার কখনোবা অভিশাপ নিয়ে। পরমসত্ত্বার সেই অভিশাপ আবিভর্‚ত হয়েছে নীতি-নৈতিকতা থেকে বিচ্যুত জাতির জন্য, সৃস্টি হয়েছে গোটা পৃথিবীর পরবর্তী প্রজন্মের সচেতনার জন্য ভয়ঙ্কর কিছু নজির। নূহ্-এর প্লাবন থেকে শুরু করে পতঙ্গ বৃস্টি, রক্তবৃষ্টির মতো অসংখ্য অভিশাপের অনুভ‚তি ইতিহাসের পাতা বেয়ে নাড়া দিয়ে গেছে আমাদের। আমাদেরকে নাড়া দিয়ে গেছে সুনামির মতো ভয়ঙ্কর এক দূর্যোগ। বিশ্বের চোখের সামনে দিয়েই মানুষকে তুলোর মতো ভাসিয়ে নিতে পেরেছে যে সুনামী, গণগণে তাপে বনভ‚মিকে অঙ্গার করে দিতে পেরেছে যে দাবানল, পরম সত্ত¡ার সেই শক্তিগুলোর পক্ষে নিমিষেই বিরাণ করে দেয়া সম্ভব পুরো সভ্যতাকে। যেমনভাবে আগ্নেয়গিরীর উদগীরণের নিচে চাপা পরেছিলো সভ্য নগরী পম্পেই। গলিত লাভার চাদরে ঢাকা পম্পেই’র বাতাসে এখনো রয়ে গেছে সেই বিশাদের মূর্ছনা।

সোমবার, এপ্রিল ২০, ২০০৯

পেছনে রইলো


পেছনে রইলো বাজার ঘাট

রবিবার, এপ্রিল ১৯, ২০০৯

এবার ভাসা যাক

শনিবার, এপ্রিল ১৮, ২০০৯

যে স্বপ্নে বিভোর থাকি


যে স্বপ্নে বিভোর থাকি প্রতিনিয়ত, তার কথা নাহয় না-ই বল্লাম।

শুক্রবার, এপ্রিল ১৭, ২০০৯

ইহুদীবান্ধব বৃক্ষ জারকাদ

শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ
আকাশের চোখে পৃথিবীর রং কি? শুধুইকি নীল? না বিস্তৃত নীল জলরাশির মাঝে রয়েছে সবুজের ছোয়াও। এ সবুজের ছায়ায়ই যত উর্বরতা। এখানে প্রাণের স্পন্দন আর উচ্ছলতা। সবুজ অরণ্য পরম মমতায় আগলে রাখে মানুষকে। বেঁচে থাকার জন্য বিষুদ্ধ বায়ু সরবরাহ করে অনন্তকাল ধরে নিজের মধ্যে টেনে নেয় বিষ। মানুষ আর গাছের অবস্থান পাশাপাশি। পরস্পরের বেঁচে থাকা পরস্পর সহযোগিতার মাধ্যম। ঝিরঝির বাতাসে পৃথিবীর সব গাছেরা কথা বলে একই সমীরণে। তবুও এদের মাঝে রয়েছে পার্থক্য। কোনটি ফল দেয়, কোনটি দেয় ফুল, কোনটি ফল ফুল দুটোই দেয়, আবার কোন গাছ এর কিছুই দেয়না। নানা আকার, বর্ণ এবং ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের গাছের সংখ্যা অগুণতি। মানব বসতি গাছকে নিয়েই। দৈনন্দিন জীবণের কাজ, আবেগ সব-ই গাছের সাথে সম্পৃক্ত। এ কারণে গাছেরাও নিজেদেরকে ঢেলে দিয়েছে মানুষের কাছে।
মানুষও পর্যবেক্ষণ করে চি‎ি‎হ্নত করতে পেরেছে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্যের গাছকে। আর তাই গাছ সম্পর্কে রয়েছে নানা গল্প ও কিংবদন্তী। গাছ নিয়ে রয়েছে কবিতা ও গাণ। রয়েছে কালজয়ি সাহিত্য। মানুষের উপকারের জন্য যেমন গাছ, তেমনি কিছু গাছ মানুষের অপকারও করে। এমনকি আস্ত মানুষকে ফুটন্ত ফুলের ভেতর হজম করে ফেলার মতো গাছও পৃথিবীতেই বর্তমান। আমাজানের কিছু ভয়ঙ্করি লতানো গাছ পেচিয়ে হার গুড়ো করে দেয় মানুষের। আবার এমন কিছু গাছ রয়েছে যেগুলোর সাথে ধর্মীয় আবেগ জড়িত। গাছ রচনা করেছে ইতিহাস। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থেও বিশেষভাবে উল্লেখ রয়েছে কিছু গাছের কথা। কিছু গাছ সম্বন্ধে বিচিত্র ও তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য রয়েছে। তেমন একটি গাছের নাম জারকাদ। এটি ইহুদীবান্ধব গাছ। জারকাদ এবং ইহুদীদের সম্পর্ক নিয়ে রয়েছে হাদীসে। এমন একটি হাদীস হচ্ছে
“ মুসলমান এবং ইহুদীদের মাঝে যুদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত বিচারের দিন আসবেনা। সে সময় ইহুদীরা পাথর এবং গাছে নিজেদেরকে আড়াল করবে, তখন পাথর এবং গাছেরা বলবে ‘হে মুসলমানবৃন্দ, হে আল্লাহর বান্দা, আমার আড়ালে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। তাকে হত্যা কর। একমাত্র জারকাদ গাছ এমন বলবেনা। কারণ এটি অন্যতম ইহুদীবান্ধব গাছ। ” (সহীহ মুসলিম, বই ০৪১, হাদিস নং ৬৯৮৫)
ইসরাইলীরা মুসলমানদেরকে সবচেয়ে শত্রæ হিসেবে গণ্য করে। পৃথিবী থেকে মুসলমানদের নাম-নিশানা মুছে ফেলার জন্য তারা মরিয়া। কিন্তু তারাই আবার রাসুল (সাঃ) এর হাদিসকে বিশ্বাস করে। এ বিশ্বাসের কারণেই সমগ্র ইসরাইলে তারা ব্যাপকভাবে জারকাদ লাগানোর কাজ শুরু করেছে। গড়ে তুলছে জারকাদ বন। অর্থাৎ তারা বিশ্বাস করে মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে জারকাদ বৃক্ষ তাদের সাহায্য করবে।

জারকাদ এর বিস্তারিত
জারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ। জারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। বক্সথর্ন নাইটশেড পরিবারের অন্তর্ভূক্ত। উষ্ণ ও গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে এর ৯০টির মতো প্রজাতি রয়েছে। এগুলোর মাঝে ২০ প্রজাতি উত্তর আমেরিকায়, ৩০ প্রজাতি দক্ষিণ আমেরিকায়, ৩০ প্রজাতি আফ্রিকায়, ১০ প্রজাতি রয়েছে ইউরোপ এবং এশিয়ায়। তাছারা অস্ট্রেলিয়াতেও রয়েছে একটি প্রজাতি। লবণাক্ত পরিবেশ বক্সথর্নের জন্য উপযোগী। ইসরাইল ভ‚মধ্যসাগরের উপক‚লে বলে সেখানে লবণাক্ততা রয়েছে। বিষ্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে ইসরাইলের সীমান্তজুড়ে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এই জারকাদ বৃক্ষ রোপন করা হচ্ছে। এই বৃক্ষ লাগানোর তাৎপর্যতো এটাই যে ইহুদীদের নিরাপত্তা দেবে এই বক্সথর্ন বা জারকাদ।
বারোমাস ফলদানকারী কাঁটাওয়ালা এসব ঝোঁপ প্রতিক‚ল পরিবেশেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে। প্রতি বছর পুরনো পাতা ঝরে নতুন করে পাতা গজায়। সাধারণত জারকাদ বা বক্সথর্নের উচ্চতা হয় ১-৮ সেমি। বক্সথর্ন ফুল ফল দুটোই দেয়। কিছু ফুল ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে আবার কিছু থোকায় থোকায় শোভা পায়। প্রতিটি ফুলের ব্যাস ৬-২৫ মিমি। ফুল থেকে লাল, হলুদ, কমলা, রক্তবর্ণ অথবা কাল রংয়ের ফল হয়। ফলগুলো বেশ মাংসল এবং খাবার উপযোগী। প্রথম দিকে মিষ্টি স্বাদ হলেও শেষ দিকে কিছুটা তেঁতু স্বাদ অনুভ‚ত হয়।
অধিকাংশ প্রজাতির বক্সথর্ন কোসেক্সুয়াল। অর্থাৎ এগুলোর পরাগায়নের জন্য ২য় কোন ফুলের প্রয়োজন হয়না। একটি ফুলেই পুরুষ এবং স্ত্রীর বৈশিষ্ট বিদ্যমান। মরু এলাকায় এ ধরনের কাঁটা ঝুপ হয় বলে এগুলোর ফল নেকড়েদের সুস্বাদু খাবার এ কারণে জারকাদকে বলা হয় উলফ বেরি। তাছারা একে ডেজার্ট থর্ন, ক্রিস্টমাস বেরী, মেট্রিমনি বাইন নামেও ডাকা হয়।
চীন এবং কোরিয়ায় এগুলো থেকে বিভিন্ন ঔষধ, সুপ, জুস এবং এলকুহলিক উপাদান তৈরি হয়। চীনাদের কাছে এগুলো ঐতিহ্যগতভাবে ঔষধী গাছ। তারা জারকাদের ফল সিদ্ধ করে এগুলো থেকে বিভিন্ন উপাদেয় খাবার তৈরি করে।

ট্রি সার্টিফিকেট



JNF Tree Certificate

ইসরাইলে ইহুদীদের উন্নয়ন এবং নিরাপত্তার জন্য একটি তহবিল রয়েছে। যেটির নাম ‘জিউস ন্যাশনাল ফান্ড’। এই তহবিলের একটি ওয়েবসাইটে ইহুদীদের জন্য দান করার অনুরোধ রয়েছে। ইসরাইলের মাটিকে সবুজ করে তুলতে বিশ্ববাসির কাছে গাছ আহ্বান করা হয়েছে সেখানে। একটি গাছ লাগানোর জন্য যে খরচ হয়, এর সমপরিমাণ কেউ দান করলে তাকে একটি ট্রি সার্টিফিকেট দেয়া হয়। এ সার্টিফিকেটটি ইহুদীদের সাথে বন্ধুত্বের স্মারক। জিউস ন্যাশনাল ফান্ড এর ওয়েবসাইটে কোন গাছের প্রতি তাদের বিশেষ আগ্রহ, সেটা সরাসারি উলেøখ নেই। তবে স¤প্রতি ইসরাইলের পাহাড়ে পরিকল্পিত জারকাদ বন তৈরি হওয়ায় জারকাদের দিকে তাদের দুর্বলতাটাই স্পস্ট হযে উঠে।
বর্তমানে বিশ্বের অনেক মুসলমানের সরাসরি স¤পৃক্ততা নেই কোরআনের সাথে। কোরআনকে তারা ধর্মীয় গ্রন্থ হিসেবে মেনে নিলেও পবিত্র এ গ্রন্থটিতে কি বলা হয়েছে, মানবজাতির জন্য রয়েছে কি দিক নির্দেশনা, তা খুঁজে দেখার প্রয়োজন মনে করেনা। অপরদিকে ইহুদীরা মুহাম্মদ (সাঃ), পবিত্র কোরআন ও মুসলমানদের স্বীকার করেনা এবং এ ধর্মকে ভ্রান্ত বলে প্রচার করে। কিন্তু কোরআন ও হাদীসকে এরা অধ্যয়ন করে মুসলমানদের চেয়ে বেশি গুরুত্বের সাথে। শুধু তাই নয় এসবের অনেককিছু নিয়ে তাদের গবেষনা রয়েছে এবং এ গবেষনালব্ধ জ্ঞান থেকে তারা উপকৃত হওয়ার চেষ্টা করে। ইতিহাসের পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া এ জাতিটি নতুন নতুন চমক দেখিয়ে তাক লাগায় বিশ্বকে।

প্রাচীরের অন্তরালে
The Western Wall, Jerusalem, Israel

... been the wall separating Israel ...
Wall Separating Israel
Israel wall Roadmap
ইহুদীদৈরকে বলা হয় অভিশপ্ত জাতি। এরা প্রতারণা ও চাতুর্যতায় পরিপক্ক। পবিত্র কোরআনে রয়েছে
“(মুসলমানগণ!) আসলে তাদের অন্তরে আলøাহ্র চেয়ে তোমরাই বেশি ভয়ের কারণ। কেননা তারা এক নির্বোধ স¤প্রদায়। ফলে আলøাহকে ভয় না ক’রে তোমাদেরকে বেশি ভয় করে।
এরা সকলে একযোগে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারবেনা। এরা যুদ্ধ করবে কেবল সুরক্ষিত শহরে অভ্যন্তরে বা দুর্গ প্রাচীরের অন্তরালে থেকে। তবে, এরা যখন নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করে তখন সে-যুদ্ধ হয় প্রচন্ড। তুমি মনে কর ওরা ঐক্যবদ্ধ, কিন্তু ওদের মনের মিল নেই। এর কারণ এই যে, ওরা এক নির্বোধ স¤প্রদায়।” (সুরা হাশর ১৪-১৫)
বর্তমানে কোরআনের এই বাণিকেও ওরা প্রতীয়মান করছে সত্য হিসেবে। ইহুদীরা গোটা ইসরাইল সীমান্ত বেস্টনী দিচ্ছে এক সুরক্ষিত প্রাচীর তুলে।
নির্মীয়মান এ প্রাচীর ৬৮০ কিমি লম্বা। প্রাচীরের একেক জায়গায় একেকরকম বৈশিষ্ট এবং উচ্চতা। তবে কঠিন কনক্রিটের এ দেয়ালের উচ্চতা অধিকাংশ এলাকায় ৮ মিটার। উচ্চতার দিক দিয়ে এটি একসময়কার জার্মানীকে বিভক্তকারী বার্লিন প্রাচীরের দ্বীগুণ। প্রাচীরের ৩০০ মিটার পর পর ইহুদীরা নির্মাণ করেছে সামরিক পর্যবেÿণ টাওয়ার। আবার কোথাও কোথাও সুরক্ষিত কমপ্লেক্স তৈরি করা হয়েছে। কমপ্লেক্স এর ভেতরে মটির নিচের গভীরতা ৪ মিটার। বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোকে সুরক্ষিত রাখার জন্য বৈদ্যুতিক তার, মোশন সেন্সর এবং সেনাপ্রহরার পথ রাখা হয়েছে। একসময় হয়তো এ প্রাচীরের ভেতরই বন্দী অবস্থায় থেকে তাদের লরতে হবে শান্তিকামী মানুষের সাথে। তারা কেবল নিরাপত্তা দেয়াল তুলেই ক্ষান্ত নয়। বরং সেই দেয়ালের আশপাশে লাগাচ্ছে জারকাদ বৃক্ষ।

ইহুদীদের আদি ইতিহাস


বর্তমানে ইসরাইল নামক রাষ্ট্র গঠন করে গোটা বিশ্ব নিয়ন্ত্রন করছে ইহুদীরা। স¤প্রতি তারা তাদের রাষ্ট্রের ষাট বছর উদযাপন করল মহা ধুমধামে। বিশ্ব অর্থনীতিতে এদের এখন রয়েছে বিরাট আধিপত্য। এদের কথায় উঠবস করছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো। এদেরই কারণে জ্বলছে ফিলি¯িÍন। আর সে উত্তাপ ছড়িয়ে গেছে পৃথিবীর কানায় কানায়।
মানবেতর যুদ্ধ বাঁধানোর হুতা হিসেবে ইহুদীদের গলায় এখন ঝুলে আছে ‘ওয়ারস্ট ব্রান্ড’ এর মত লজ্জাজনক তকমা। অতীতে এদের প্রতি আলøাহর অনুগ্রহ থাকা সত্তেও এরা সীমালংঘন করেছে। সে ধারাবাহিকতা এখনো অব্যহত রয়েছে।
খুব সম্ভবত ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বে হিব্রæ ভাষায় কথা বলা জাতি এবং দক্ষিণ সারবিয়রা সিরিয়ার সিনাই উপত্যকা থেকে ক্যরাভিয়ান মরুভ‚মির পথ ধরে ছড়িয়ে যায়। স্থায়ী আবাসহীন এ জাতির প্রথম বাস ছিল সিনাই উপত্যকায়। সিনাই থেকে মেসুপটেমিয়ার সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যায় তারা। এরপর সেখানে প্রভাব বিস্তার করে ‘সারগান’ নামক একজনের নেতৃত্বে রাজ্যগঠন করে। সে রাজ্যের রাজধানী ছিল আকাদ। সেখান থেকেই মূলত এদের ইতহাসের শুরু। ধীরৈ ধীরে তাদের প্রতাপ বারতে থাকে মধ্যপ্রাচ্যে। সিনাই থেকে আগতদেরকে দেখে আরো কিছু জাতিও মেসুপটেমিয়ায় চলে আসে।
ধারণা করা হয় আব্রাহাম, তথা ইব্রাহিমের (আ.) সময়কাল ছিল খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০ সালের দিকে। ইতিহাসের আদি উৎস থেকেই এই জাতির স্থায়ী কোন আবাস নেই। এ কারণেই হয়তো বাইবেলের পুরাতন নিয়মে ‘সৃস্টিতত্ত¡’তে ইব্রাহীমকে (আ.) পরিভ্রমণকারী জাতির নেতা বলা হয়েছে।
হযরাত ইব্রাহীম (আ.) এর পরবর্তী পুরুষ ছিলেন ইয়াকুব (আ.)। অন্য পরিভাষায় জেকব। ইয়াকুব বা জেকবের অপর নাম ছিল ইসরাইল। সেই ইসরাইল নাম থেকেই এই জাতির নাম হয়েছে বনি ইসরাইল। অর্থাৎ ইসরাইলের বংশধর। বর্তমানে তাদের প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের নামও ইসরাইল।
জেকবের ১২ জন সন্তানের একজনের নাম ছিল হাবিরু। কেউ কেউ মনে করেন সেই হাবিরুরর নাম থেকেই হিব্রæ নামের উৎপত্তি।
বনি ইসরাইল-এ মুসা (আ.) এসেছিলেন নবী হিসেবে। এদের নবী মুসা (আ.)। তাঁর পরবর্তী নবী ইসা (আ.) ও মুহাম্মদ (সা.) কে ইহুদীরা নবী হিসেবে মেনে নেয়নি।

কোরআন, বাইবেল এবং ইহুদী

পবিত্র কোরানে রয়েছে “মুসা তার স¤প্রদায়কে বলেছিল, ‘হে আমার স¤প্রদায়! তোমরা স্মরণ করো আলøাহ্র অনুগ্রহ; তিনি তোমাদের মধ্য থেকে নবি করেছিলেন, তোমাদেরকে রাজ্যের অধিপতি করেছিলেন ও বিশ্বে যা কাউকেই দেন নি তা তোমাদেরকে দিয়েছিলেন। হে আমার স¤প্রদায়! আল্লাহ্ তোমাদের জন্য যে-পবিত্র ভ‚মি নির্দিষ্ট করেছেন সেখানে প্রবেশ করো আর পিছু হোটো না। হটলে, তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।’
তারা বলল, ‘হে মুসা! সেখানে এক দুর্দান্ত স¤প্রদায় রয়েছে, আর তারা সেখান থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত আমরা সেখানে প্রবেশই করব না। তারা সেখান থেকে বের হয়ে গেলে আমরা প্রবেবশ করব।’
যারা ভয় করেছিল তাদের মধ্যে দুজন, যাদের ওপর আলøাহ্ অনুগ্রহ করেছিলেন, তারা বলল, ‘তোমরা প্রবেশদ্বারে তাদের মোকাবিলা করো। প্রবেশ করতে পারলেই তোমাদের জয় হবে। আর তোমরা বিশ্বাসী হয়ে আ্লাহ্র ওপরই নির্ভর করো।
তারা বলল, ‘হে মুসা! তারা যতদিন সেখানে থাকবে ততদিন আমরা সেখানে প্রবেশ করবই না। সুতরাং তুমি ও তোমার প্রতিপালক যাও ও গিয়ে যুদ্ধ করো, আমরা এখানেই ব’সে থাকব।’
সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার ও আমার ভাই ছাড়া অন্য কারও ওপর আমার কর্তৃত্ব নেই: সুতরাং তুমি আমাদের ও সত্যত্যাগী স¤প্রদায়ের মধ্যে ফয়সালা ক’রে দাও।’
আলøাহ্ বললেন, ‘তবে এ চলিøশ বছর তাদের জন্য নিষিদ্ধ রইল, তারা পৃথিবীতে উদভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াবে। সুতরাং তুমি সত্যত্যাগী স¤প্রদায়ের জন্য দুঃখ কোরো না।” (মায়িদা ২০-২৬)।
বাইবেলের পুরাতন নিয়মে মুসা (আঃ) কে প্রদত্ত ঈশ্বরের কিছু বাণীর কথা রয়েছে। সেখানে ইহুদীদের ভবিষ্যৎ নীতিভ্রষ্টতা এবং তার ফলে তাদের উপরে বিচারদণ্ড নেমে আসার কথা প্রকাশ করা হয়েছে। ঈশ্বর জানালেন তারা যেন এই ভবিষ্যদ্বাণীকে একটা সংগীতের আকারে সংরÿণ করে, যেন সেটা ভবিষ্যৎ বংশধরদের কাছে সতর্কবানীরূপে কাজ করে। “পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, দেখ, তোমার মৃত্যুদিন আসন্ন, তুমি যিহোশুয়কে ডাক, এবং তোমরা উভয়ে সমাগম-তাম্বুতে উপস্থিত হও, আমি তাহাকে আজ্ঞা দিব। তাহাতে মোশি ও যিহোশূয় গিয়া সমাগম তাম্বুতে উপস্থিত হইলেন। আর সদাপ্রভু সেই তাম্বুতে মেঘ¯Íম্ভে দর্শন দিলেন, সেই মেঘ¯Íম্ভ তাম্বুদ্বারের উপরে স্থির থাকিল। তখন সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, দেখ, তুমি আপন পিতৃপুরুষদের সহিত শয়ন করিবে, আর এই লোকেরা উঠিবে, এবং যে দেশে প্রবেশ করিতে যাইতেছে, সেই দেশের বিজাতীয় দেবগণের অনুগমনে ব্যভিচার করিবে, এবং আমাকে ত্যাগ করিবে, ও তাহাদের সহিত কৃত আমার নিয়ম ভঙ্গ করিবে। সেই সময়ে তাহাদের বিরুদ্ধে আমার ক্রোধ প্রজ্বলিত হইবে, আমি তাহাদিগকে ত্যাগ করিব ও তাহাদের হইতে আপন মুখ আচ্ছাদন করিব, আর তাহারা কবলিত হইবে, এবং তাহাদের উপরে বহুবিধ অমঙ্গল ও সঙ্কট ঘটিবে, সেই সময়ে তাহারা বলিবে, আমাদের উপর এই সম¯Í অমঙ্গল ঘটিয়াছে, ইহার কারণ কি ইহাই নয়, যে আমাদের ঈশ্বর আমাদের মধ্যবর্ত্তী নহেন? বা¯Íবিক তাহারা অন্য দেবগণের কাছে ফিরিয়া যে সকল অপকর্ম্ম করিবে, তন্নিমিত্ত সেই সময়ে আমি অবশ্য তাহাদের হইতে আপন মুখ আচ্ছাদন করিব। এখন তোমরা আপনাদের জন্য এই গীত লিপিবদ্ধ কর, এবং তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে ইহা শিক্ষা দেও, ও তাহাদিগকে মুখ¯Í করাও, যেন এই গীত ইস্রায়েল-সন্তানগণের বিরুদ্ধে আমার সাক্ষী হয়। ...” -(দ্বিতীয় বিবরণ: অনুচ্ছেদ৩১, পদ১৪-২০)। পরবর্তীতে ২২-২৯ পদে রয়েছে “ পরে মোশি সেই দিবসে ঐ গীত লিপিবদ্ধ করিয়া ইস্রায়েল-সন্তানগণকে শিক্ষা দিলেন। আর তিনি নূনের পুত্র যিহোশূয়কে আজ্ঞা দিয়া কহিলেন, তুমি বলবান হও ও সাহস কর, কেননা আমি ইস্রায়েল সন্তানগণকে যে দেশ দিতে দিব্য করিয়াছি, সেই দেশে তুমি তাহাদিগকে লইয়া যাইবে, এবং আমি তোমার সহবর্ত্তী হইব। আর মোশি সমাপ্তি পর্য্যন্ত এই ব্যবস্থার কথা সকল পু¯Íকে লিখিবার পর সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুকবাহী লেবীয়দিগকে এই আজ্ঞা করিলেন, তোমরা এই ব্যবস্থাপু¯Íক লইয়া তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুকের পার্শ্বে রাখ, ইহা তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষীর জন্য সেই স্থানে থাকিবে। কেননা তোমার বিরুদ্ধাচারিতা ও তোমার শক্তগ্রীবতা আমি জানি, দেখ, তোমাদের সহিত আমি জীবিত থাকিতেই অদ্য তোমরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধাচারী হইলে, তবে আমার মরনের পরে কি না করিবে? তোমরা আপন আপন বংশের সম¯Í প্রাচীনবর্গকে ও কর্ম্মচারীকে আমার নিকটে একত্র কর, আমি তাহাদের কর্ণগোচরে এই সকল কথা বলি, এবং তাহাদের বিরুদ্ধে আকাশমন্ডল ও পৃথিবীকে সাÿী করে। কেননা আমি জানি, আমার মরনের পরে তোমরা একেবারে ভ্রষ্ট হইয়া পড়িবে, এবং আমার আদিষ্ট পথ হইতে বিপথগামী হইবে, আর উত্তরকালে তোমাদের অমঙ্গল ঘটিবে, কারণ সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহা করিয়া তোমরা আপনাদের হ¯Íকৃত কার্য্য দ্বারা তাঁহাকে অসন্তুষ্ট করিবে।” মুসা (আঃ) এর এ গীতের উপসংহারে ইস্রায়েলকে সতর্ক করা হয়েছে যে, তাদের ভবিষ্যৎ অবিশ্ব¯Íতা বিদ্রোহ ও নীতিভ্রষ্টতা জাতির উপরে ঈশ্বরের কঠোর বিচারদণ্ড নিয়ে আসবে।
পবিত্র কোরআন এবং বাইবেলের বর্ণনায় অবিশ্ব¯Í, নীতিভ্রষ্ট এবং অশান্তিসৃস্টির হোতা ইহুদীরা অভিশপ্ত এক জাতি। কোন এক উন্মাদনায় সওয়ার হয়ে পৃথিবীতে এরা বইয়ে দেয় রক্তের ধারা। তারপর আবার নিজেদেরকে গুটিয়ে নেয় রহস্যের জালে। এসব নির্মম আগ্রাসন ও চাতুর্যতার স্বাক্ষী পাথর এবং বৃক্ষরাজীর ভ‚মিকাও হবে ইহুদী বিরুধী। কোথাও আশ্রয় হবেনা জেনেই হয়তো শেষ অবলম্বনের জন্য তারা ইসরাইলের ভ‚মিকে সবুজ করে তুলছে জারকাদ দিয়ে। ইহুদীবান্ধব জারকাদকেই ভেবে নিয়েছে শেষ অবলম্বন হিসেবে।

সোমবার, এপ্রিল ১৩, ২০০৯

এভাবেই বসতে হবে আপনাকেও


একটু ভেবে নিন,
এভাবেই বসতে হবে আপনাকেও।

রবিবার, এপ্রিল ১২, ২০০৯

চলুননা এখান থেকে নৌকায় ভাসি।


চলুননা এখান থেকে নৌকায় ভাসি।
গন্তব্য: আমার জন্ম যেখানে সেই গ্রাম।

শনিবার, এপ্রিল ১১, ২০০৯

"অতি দূর সমুদ্রের পর হাল ভেঙ্গে যে নাবিক হারায়েছে দিশা......"


"অতি দূর সমুদ্রের পর হাল ভেঙ্গে যে নাবিক হারায়েছে দিশা......"

আমার জন্ম যে মাটিতে, বর্ষায় তা তলিয়ে যায় এমনিভাবে।

বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ০৯, ২০০৯

গুমোট পাখি


একটি পাখি আজ সারাদিন
হিজল গাছের ডালে
কেমন জানি একনাগাড়ে
ভাবছে গুমোট চালে।
সকাল থেকে নীলাভ আকাশ
মেঘের সাদা চোখে
দেখছে কেবল ওই পাখিটার
দুঃখ কি সব বুকে।

তাইতো আকাশ ঢামাঢোলে
ইদিক-সিদিক ঘুরে
অবাক পাখির বন্ধু হবার
ইচ্ছে দিলো ছুঁড়ে
এবং পরে আজব পাখি
হিজল পাতার ফাঁকে
ঝাপটে দিয়ে দুটো ডানা
মুখ লুকিয়ে রাখে।

বুধবার, এপ্রিল ০৮, ২০০৯

The 10 Oldest Cities on Earth

There’s something fascinating about ancient cities that makes you want to explore everything they have to offer. If you, too, love to explore ancient civilizations or what remains of them, we have put together a list of the 10 oldest cities in the world that are still standing, reminiscent of how people lived millenniums ago.

10. Lisbon, Portugal (2000 B.C.?)

Set on seven low hills, on the north banks of the River Tagus, Lisbon’s charm is strongly linked to the past. Lisbon was first inhabited by Iberian people, responsible for building the megaliths. After centuries of growing, Lisbon is now one of the liveliest cities in Europe. The renovated palaces, magnificent churches and Art Nouveau buildings are just a few of the things that make up the city’s cultural heritage. There’s an impressive collection of ancient and modern art in many of the city’s museums such as the Calouste Gulbenkian Museum, the National Coach Museum, and the Carmo Archaeological Museum. When you’ve seen all the cultural attractions, be sure to head down to Bairro Alto, the center of nightlife, packed with restaurants, bars and clubs. There are also plenty of shopping opportunities either for local merchandise at the Campo de Santa Clara or famous brands in the Centro Commercial Colombo.

9. Luxor, Egypt (before 2160 B.C.)

Luxor, previously known as the ancient city of Thebes, the glorious city of the God Amon Ra, has been a hot tourist destination since tourism began. The area started attracting tourists ever since the Greek and Roman periods. Luxor is one of the most popular cities in Egypt, its stars being the monuments of Luxor, Karnak, Hatshepsut and Ramses III. There’s no wonder the city is often referred to as the world’s greatest open air museum, having a great number of well-preserved monuments. The city in itself actually consists of three distinct areas: the City of Luxor on the East side of the Nile, the town of Karnak and Thebes on the west side of the Nile, across from Luxor. You can bargain your way for anything in the city’s bazaar or enjoy the vegetarian paradise Luxor’s restaurants offer its tourists.

8. Asyut, Egypt (before 2160 B.C.)

Located 375km south of Cairo, Asyut is the largest town in Upper Egypt and the first settled in Pharaonic times. Today, Asyut is the region’s most important agricultural center and home of the third largest university in Egypt. The city has almost 400,000 inhabitants, having the highest concentration of Coptic Christians. It is said that Virgin Mary appeared in Asyut, an apparition even attested by the church. Apart from the religious value, Banana Island is a great place to relax, while the 19th century barrage on the North Edge of the city is a popular destination among tourists.

7. Xi’an, China (2205 B.C.?)

With a history of over 3,000 years, the city is one of the most important in Chinese history, being one of the Four Great Ancient Capitals of China. Xi’an, the eternal city, enjoys fame equal to that of other famous cities such as Athens, Cairo, or Rome. The abundance of relics and sites of important cultural significance gained the city the title of a Natural History Museum. Furthermore, the Museum of Terra Cotta Warriors and Horses is often referred to as “the eighth major miracle of the world”. The City Wall of the Ming Dynasty is the most well-preserved towns in the world of that period while the Famen Temple holds the finger bones of Sakyamuni — the founder of Buddhism. All in all, Xi’an is one of the most valuable places to get a taste of ancient China and their traditions.

6. Giza, Egypt (before 2568 B.C.)

“From atop these pyramids, forty centuries look down upon you.” — Napoleon Bonaparte to his soldiers before the Battle of Giza, 1798. Contrary to popular belief, Giza is a city in itself, but which got absorbed by the rapidly developing metropolis of Cairo. It holds one of the most important attractions in Egypt - the Pyramids of Giza, coupled with the Sphinx at the base of the Giza plateau. Giza’s desert plateau will be part of the Grand Museum of Egypt, a project to be completed in 2012 that will replace the Egyptian Museum in Midan Tahrir.

5. Konya, Turkey (2600 B.C.?)

Located 250 km from the Mediterranean Sea and 500 km from the Black Sea, at an altitude of over 1000 meters in the Anatolian steppe, Konya is one of Turkey’s most fascinating cities, full of mosques and museums. One of the most popular museums is the Green Mausoleum of Mevlana Celaleddin Rumi, a great Turkish poet. Konya has a vast array of historical finds, kept in several museums, such as the Archaeological Museum, the Koyunoglu Museum or the Ethnographical Museum.

4. Zurich, Switzerland (3000 B.C.?)

Switzerland’s biggest city and one of the oldest cities in Europe, Zurich was established in Roman times under the name Turicum. Traces of these times can be found throughout the Old Town – narrow streets filed with antique shops, boutiques and cafes. Shopping is concentrated around the famous Bahnhofstrasse, one of the most beautiful shopping streets in Europe. Besides shopping, you can explore the city’s culture by visiting Grossmünster or Fraumünster – two old churches with amazing interiors, the Swiss National Museum or Kunsthaus, another popular museum. Head down to Aussersihl – a newly developed area filled with bars, clubs, restaurants where you can get a taste of the real Swiss life. After seeing the city, you’ll surely find out why it was named the city with the best quality of life in the world.

3. Kirkuk, Iraq (3000 B.C.?)

With archaeological remains that are over 5,000 years old, Kirkuk is an important city for the Kurdish identity and also the center of the Iraqi petroleum industry. While it may not be the most inviting tourist destination, Kirkuk stands on the site of the ancient Assyrian, once being the battlegrounds for three empires, Assyria, Babylonia, and Media that took turns controlling the city. Sights include the citadel, the tomb of Prophet Daniel, and Al Qaysareyah Market. If you want to go back in time and see the remains of the ancient city, visit archaeological sites of Qal’at Jarmo and Yorgan Tepe, located at the outskirts of the city.

2. Jerusalem, Israel (3000 B.C.?)

A holy city for three different religions – Judaism, Christianity, and Islam, Jerusalem is the place where ancient values combine with modern culture to bring a fascinating metropolis. Jerusalem is divided into three parts – West Jerusalem, the rapidly developing commercial part of the city, East Jerusalem – home for the majority of the Arab population, and the Old City – a truly breathtaking location, declared by UNESCO a World Heritage Site. Once you get tired of sightseeing, you can check out the marketplace, a place teeming with tourist shops.

1. Gaziantep, Turkey (3650 B.C.?)

The capital city of Gaziantep Province informally known as Antep is the oldest city that’s still standing, with a history dating back to the Hittites period. It was continually inhabited ever since the Paleolithic age, experiencing serious growth along with the Ottoman Empire. Today, Gaziantep is a friendly, upbeat city with numerous mosques, medresse, inns and baths from centuries ago. The stone houses and vibrant bazaars are bordered by beautiful gardens and vineyards, combining in a spectacular sight anywhere you turn. With several museums and holy places, you’ll surely need more than one day to experience everything Gaziantep has to offer.