গাঙ পারের হিজল গাছটায় বসে সেই কখন থেকে ডাকছে পেঁচাটা। একবার ‘মীমম’ ধরনের ভয়ঙ্কর শব্দ তুলে, তারপর কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে আবার। ঝিঁঝিঁ পোকার ঝিঁ ঝিঁ ঝিঁ ঝিঁ ঝিমমম লহরিতে ছেদ ঘটাচ্ছে শেয়ালের হাঁক। সব মিলিয়ে যেন প্রকৃতির এক ভুতুড়ে ঐকতান। সে ঐকতানের ছন্দ ভেঙে তীক্ষ্ম আওয়াজ তুলছে চৌকিদারের বাঁশি। থেকে থেকে ভেসে আসছে চিৎকার, হুঁশিয়ার-সাবধান-খবরদার। রাত যত গভীর হচ্ছে রহস্যধ্বনিও তত স্পষ্ট হয়ে আঘাত করছে ময়নার কানে। সেই সাথে আতঙ্ক ছড়িয়ে অবস করে দিচ্ছে তাকে। শিরশির করে উঠছে শরীর। শঙ্কিত হয়ে ভাবছে সে চৌকিদারের সাহসের কথা। একেকবার বাঁশির আওয়াজ কানে আসছে আর চৌকিদারের স্থলে নিজেকে ভেবে মেরুদণ্ড ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে তার।
গভীর রাতে জিন-ভুতের বিচরণ থাকে অবাধ। ঘরের বাইরে তো বটেই এমনকি ভেতরে এসেও মানুষের উৎপাত করতে ছাড়ে না এরা। কিন্তু কি তাজ্জব ব্যাপার, এই চৌকিদার হুঁশিয়ার সাবধান বলে বলে মধ্যরাতে পাহারা দিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো গ্রাম! ভাবতেই অবাক লাগছে ময়নার। বিছানায় এপাশ-ওপাশ করেও চোখের পাতা এক করতে পারছে না মোটেই। ময়নার ছটফটানিতে ঘুম ভেঙে গেল পাশে শুয়ে থাকা দাদীরও
- ও ময়না, ময়নারে। নড়াচড়া করতাছস কেরে?
- আমার ডর করতাছে খুব।
আতঙ্কিত হয়ে উঠে দাদী। ঘুমের জড়তা কাটিয়ে ধরমড়িয়ে ওঠে বসে চৌকির ওপর। তারপর নাতনীকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করে অস্বাভাবিক কিছু না দেখে অভয় দিয়ে বলে
- আরে ডর কিয়ের, আমি তো আছি লগে।
- অই চৌকিদারের লাগি ডর লাগতাছে আমার। মাইজ রাইতে (মধ্যরাতে) একলা একলা গেরাম পর (পাহারা) দিয়া বেড়ায়। যদি জিন-ভুতে পায়?
কোনো জবাব বেরোলনা দাদীর মুখ থেকে। এক পশলা ভয় মেশানো বাতাসের ধাক্কায় ধপ করে শব্দ তুলল টিনের জানালার পাল্লায়। সেই সাথে ধপ করে কেঁপে উঠে দাদীর ভেতরটাও। পরক্ষণেই দূর থেকে অস্পষ্ট ভেসে আসে চৌকিদারের হাঁক, হুঁশিয়ার-সাবধান-খবরদার। সাথে সাথেই যেন হুঁশিয়ার হয়ে যায় দাদী। তারপর ময়নাকে আশ্বস্ত করার জন্য বলে
- জিন-ভুতের চৌদ্দ গোষ্ঠীর সাধ্যি নাই যে চৌকিদারের কোনো ক্ষতি করে।
- ভুতেরা কি চৌকিদারগরে ডরায়?
- না ডরাইলে কি এত রাইত যাইগা এরা গেরাম পর দেয়? খালি এই চৌকিদারগরেই না, সরকারি পোশাক পরইন্যা (পরিহিত) হগল সান্ত্রী, সেপাই, পুলিশগরে তারা (জিন-ভুতেরা) ডরায়।
- ও আইচ্ছা, ভুতেরাও বুঝি সরকার আর সরকারি পোশাকরে মাইন্য কইরা চলে?
জবাবে ছোট্ট করে ‘হু’ বলে আবার শুয়ে পরে দাদী। ময়নাকেও বালিশের ওপর টেনে দিয়ে হাত বুলিয়ে দেয় মাথায়। মিনিটখানেক পর চোখ জড়িয়ে আসায় থেমে যায় দাদীর সঞ্চালনরত হাত। কিন্তু তখনো কৌতূহল থামেনা ময়নার। জানার আরো বিষয় ছিল তার। মন্তাজ পুতু (চাচা) যে সেদিন বলল ঢাকায় নাকি দু’জন পুলিশ খুন হয়েছে। দাদী জেগে থাকলে জিজ্ঞেস করত এদের খুনি কারা? ভেবে অবাক হচ্ছে ময়না। মানুষ ভয় পায় জিন-ভুতদের। আর তারা ভয় পায় পুলিশদের। যাকে ভুতেরা পর্যন্ত ভয় পায় তাকে খুন করা কিভাবে সম্ভব? তাহলে কি সরকারের চেয়েও এই খুনিদের ক্ষমতা অনেক বেশি?
গভীর রাতে জিন-ভুতের বিচরণ থাকে অবাধ। ঘরের বাইরে তো বটেই এমনকি ভেতরে এসেও মানুষের উৎপাত করতে ছাড়ে না এরা। কিন্তু কি তাজ্জব ব্যাপার, এই চৌকিদার হুঁশিয়ার সাবধান বলে বলে মধ্যরাতে পাহারা দিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো গ্রাম! ভাবতেই অবাক লাগছে ময়নার। বিছানায় এপাশ-ওপাশ করেও চোখের পাতা এক করতে পারছে না মোটেই। ময়নার ছটফটানিতে ঘুম ভেঙে গেল পাশে শুয়ে থাকা দাদীরও
- ও ময়না, ময়নারে। নড়াচড়া করতাছস কেরে?
- আমার ডর করতাছে খুব।
আতঙ্কিত হয়ে উঠে দাদী। ঘুমের জড়তা কাটিয়ে ধরমড়িয়ে ওঠে বসে চৌকির ওপর। তারপর নাতনীকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করে অস্বাভাবিক কিছু না দেখে অভয় দিয়ে বলে
- আরে ডর কিয়ের, আমি তো আছি লগে।
- অই চৌকিদারের লাগি ডর লাগতাছে আমার। মাইজ রাইতে (মধ্যরাতে) একলা একলা গেরাম পর (পাহারা) দিয়া বেড়ায়। যদি জিন-ভুতে পায়?
কোনো জবাব বেরোলনা দাদীর মুখ থেকে। এক পশলা ভয় মেশানো বাতাসের ধাক্কায় ধপ করে শব্দ তুলল টিনের জানালার পাল্লায়। সেই সাথে ধপ করে কেঁপে উঠে দাদীর ভেতরটাও। পরক্ষণেই দূর থেকে অস্পষ্ট ভেসে আসে চৌকিদারের হাঁক, হুঁশিয়ার-সাবধান-খবরদার। সাথে সাথেই যেন হুঁশিয়ার হয়ে যায় দাদী। তারপর ময়নাকে আশ্বস্ত করার জন্য বলে
- জিন-ভুতের চৌদ্দ গোষ্ঠীর সাধ্যি নাই যে চৌকিদারের কোনো ক্ষতি করে।
- ভুতেরা কি চৌকিদারগরে ডরায়?
- না ডরাইলে কি এত রাইত যাইগা এরা গেরাম পর দেয়? খালি এই চৌকিদারগরেই না, সরকারি পোশাক পরইন্যা (পরিহিত) হগল সান্ত্রী, সেপাই, পুলিশগরে তারা (জিন-ভুতেরা) ডরায়।
- ও আইচ্ছা, ভুতেরাও বুঝি সরকার আর সরকারি পোশাকরে মাইন্য কইরা চলে?
জবাবে ছোট্ট করে ‘হু’ বলে আবার শুয়ে পরে দাদী। ময়নাকেও বালিশের ওপর টেনে দিয়ে হাত বুলিয়ে দেয় মাথায়। মিনিটখানেক পর চোখ জড়িয়ে আসায় থেমে যায় দাদীর সঞ্চালনরত হাত। কিন্তু তখনো কৌতূহল থামেনা ময়নার। জানার আরো বিষয় ছিল তার। মন্তাজ পুতু (চাচা) যে সেদিন বলল ঢাকায় নাকি দু’জন পুলিশ খুন হয়েছে। দাদী জেগে থাকলে জিজ্ঞেস করত এদের খুনি কারা? ভেবে অবাক হচ্ছে ময়না। মানুষ ভয় পায় জিন-ভুতদের। আর তারা ভয় পায় পুলিশদের। যাকে ভুতেরা পর্যন্ত ভয় পায় তাকে খুন করা কিভাবে সম্ভব? তাহলে কি সরকারের চেয়েও এই খুনিদের ক্ষমতা অনেক বেশি?
২টি মন্তব্য:
Nice pic
- Erl
Chaliya jan. bhalo lagche.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন